সিলেটপোস্ট ডেস্ক::করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। পল্লী অঞ্চলে কৃষিঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইতিবাচক সাফল্যও এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল-নাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য মিলেছে।
তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ছয়মাস কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ হয়েছে ১২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে পশুপালন ও খামারিদের বিতরণের জন্য ৪ শতাংশ সুদ হারে বিতরণের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানেও তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ। এর ফলে ছয় মাসে শুধু কৃষি খাতেই বিতরণ করা হলো প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চার শতাংশ হারে বিতরণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা রয়েছে যা সাধারণ কৃষি ঋণ থেকে এসেছে। যা শস্য খাতে চার শতাংশ সুদ হারে বিতরণ করা হয়েছে। আর পোল্ট্রি ও পশুপালন খাতে বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাকি সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা সাধারণ কৃষিঋণ হিসাবে ৯ শতাংশ সুদহারে বিতরণ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যাতে খাদ্য সংকট না হয় এবং খাদ্যভাবে মানুষ না মারা যায়- সে লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদনে সরকার গুরুত্ব দেয়। আবাদি এক টুকরো জমিও যাতে পড়ে না থাকে এজন্য বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকেও মাঠ পর্যায়ে প্রচার চালানো হয়।
এ সময় কৃষি বা কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের যাতে টাকার অভাবে উৎপাদন বা বাজারজাত ব্যাহত না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ-প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। এ জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য নিয়মিত ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা কৃষি ঋণের পাশাপাশি পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। চলতি অর্থবছরে বিতরণের জন্য লক্ষ্য স্থির করা এই ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার মধ্যে শস্য, সেচ কৃষি যন্ত্রপাতি, পশুপালন ও পোল্ট্রি, মৎস্য চাষ, বাজারজাত ও প্রক্রিয়াকরণ এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট দারিদ্র্য দূরীকরণমূলক কাজে এই ঋণ রয়েছে। যা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশ বাধ্যতামূলক কৃষি হিসাবে বিতরণ করছে। ব্যাংকগুলো শস্যে বিতরণ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে ডকুমেন্ট জমা দিলেই এক শতাংশ হারে সুদ-প্রণোদনা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ হয়েছিল ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। চলতি বছরে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৬ শতাংশ। এ হিসাবে বিতরণকৃত ঋণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হলেও গত বছরের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বিতরণকৃত ঋণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হলেও আগামী শস্যবপন মৌসুমে বেশি বিতরণ হবে; এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ সরকারের বিভিন্ন রকম প্রচারণার ফলে কৃষি ঋণ বিতরণ ছাড়িয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা দেশেই পূরণ করছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে দানাদার খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৮২ লাখ মেট্রিক টন। দেশের মোট আবাদযোগ্য এক কোটি ১৮ লাখ হেক্টর জমিতে এ খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, শিল্প-কালখানা প্রতিষ্ঠা, নদীভাঙনসহ নানা কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় এক শতাংশ হারে আবাদি জমি কমছে। কিন্তু প্রতি বছরই জনসংখ্যা বাড়ছে। এই বাড়তি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে নানা রকম উদ্যোগ চলমান আছে।
২০২০ সালের করোনা ভয়াবহতা শুরু হলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হয় বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পক্ষ থেকে। সম্ভাব্য খাদ্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশও খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের আবাদযোগ্য বাড়তি জমি না থাকা, করোনা মহামারীর মধ্যে প্রবাসে থাকা মানুষ ফিরতে শুরু করা ও বৈরী প্রকৃতির কারণে করোনার মধ্যে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করা সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও খাদ্য উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। যাতে করোনা মহামারীর সঙ্গে খাদ্য সংকট যুক্ত না হয়। এ সময় কৃষিঋণের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ-কর্মসূচি গ্রহণ করে। চলমান সাধারণ কৃষি ঋণের পাশাপাশি সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষিঋণ বিতরণে মোট লক্ষ্যপূরণ না হলেও আগের বছরের চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে। আগামী ফসল চাষের মৌসুমে এ ধারা আরও বেগমান হবে বলে আশা বাংলাদেশ ব্যাংকের। এমন পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ কৃষি ঋণ সহায়ক হচ্ছে।