সিলেটপোস্ট রিপোর্ট :ফের কয়েক দফা ভূমিকম্পে নেপাল ও ভারতে নিহত হয়েছে আরও ৫২ জন। নেপালে সৃষ্ট এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বহুতল ভবনগুলো, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। ৭.৩ মাত্রার এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ও চীনও কম্পিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ও চীনে তেমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। গতকালের ভূমিকম্পে নেপালে ৩৫ এবং ভারতে ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত পাঁচ শতাধিক উল্লেখ করে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। গতকালের এই ভূমিকম্পটি নেপালে ৬, বাংলাদেশে ৪, ভারতে ২ ও চীনে ১ বার অনুভূত হয়।প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে নেপালে। যার প্রভাব বাংলাদেশ, ভারতেও পড়েছিল। ওই ভূমিকম্পে নেপালে আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।নেপালের ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর একটা পেরিয়েছে। হঠাৎ করেইআবারও দুলতে থাকে সব কিছুই। কারো বুঝতে বাকি থাকে না আবারও অন্ধকার নামছে তাদের জীবনে। আতঙ্কে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেপালে ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি্বক জরিপ সংস্থার তথ্য মতে, স্থানীয় সময় বেলা একটা থেকে আড়াইটার মধ্যে নেপালে ছয় দফা এবং চীনে এক দফা ভূমিকম্প হয়। ১টা ৫ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে নেপালে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সবচেয়ে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল দেশটির কোদারি থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৩। একই উৎপত্তিস্থলে একটা ১৭ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৬ তীব্রতার দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি হয়। একটা ৩৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে নেপালের রমেসহাপ থেকে ৩৩ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর পূর্বে ৬ দশমিক ৩ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। দুইটা ৬ মিনিট ৭ সেকেন্ডে নেপালের কোদারি থেকে ৩৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ৫ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। দুইটা ১৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে কোদারি থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৫ দশমিক ১ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। দুইটা ২১ মিনিট ১০ সেকেন্ডে কোদারি থেকে ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ পূর্বে ৫ দশমিক ২ তীব্রতার শেষ ভূমিকম্পটি হয়।চীনে ভূমিকম্প আঘাত হানে একটা ৩৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪। ভূমিকম্পে ভবন ধসের খবর পাওয়া গেলেও কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্ল ও উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হয়। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খ- ও আসামসহ উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। দিলি্লতে ভূমিকম্প আতঙ্কে লোকজনকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায়। দিলি্ল মেট্রো সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলো তাৎক্ষণিকভাবে খালি করা হয়। দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজধানী নয়াদিলি্ল ছাড়াও শ্রীনগর, অমৃতসর, গৌহাটি, লক্ষ্নৌ ও জয়পুরে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নেপালে উৎপত্তি হওয়া মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে ভারতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির বিহারে ১৬ জন ও উত্তরপ্রদেশে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তিক জরিপ সংস্থার মতে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৩। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালে।ভারতের গণমাধ্যমে বলা হয়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১২টা ৩৬ মিনিট এবং ১টা ৯ মিনিটে দুটি কম্পন অনুভূত হয়। একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ক্লাস করছিলাম। এমন সময় অন্য ক্লাসের একটি ছেলে ‘ভূমিকম্প’ ‘ভূমিকম্প’ বলে চিৎকার করতে করতে আমাদের ক্লাসে ঢুকল। ও মজা করছে প্রথমে এটা ভাবলেও একটু পরেই সবাই বুঝতে পারি আসলেই ভূমিকম্প হচ্ছে।রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনুভূত হয় পরপর চার দফা ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের সময়ে রাজধানীর বহুতল ভবন কেঁপে ওঠে। ভবনের মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, দুপুরে পরপর চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপাল। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৬১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নেপালে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল। এরপর দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে, ১টা ৩৪ মিনিটে এবং ১টা ৩৬ মিনিটে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এসব কম্পনের সময় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫.৬, ৫.৩ এবং ৬.০। প্রথম ভূমিকম্প অনুভূত হয় নেপালে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৭.৩।