সিলেটপোস্ট ডেস্ক:চীনে সন্দেহভাজন অপরাধীদের ওপর ‘ভয়াবহ’ পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বুধবার সংগঠনটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বেইজিং।নিউইয়র্কভিত্তিক এই সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীন জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের ক্ষেত্রে সংস্কার আনার কথা দাবি করলেও বিচার প্রক্রিয়ায় আইনজীবী ও বিচারকেরা পুলিশের ‘নির্যাতন করার সুস্পষ্ট প্রমাণ উপেক্ষা’ করছে।প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশ ক্যামেরার সামনে স্বীকারোক্তি আদায় করছে। কিন্তু এই স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে লোকচক্ষুর আড়ালে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাহিনীটি এমন কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে, যার ফলে দৃশ্যমান কোনো জখম তৈরি হয় না।টাইগার চেয়ারস অ্যান্ড সেল বসেস : পুলিশ টর্চার অব ক্রিমিনাল সাসপেক্টস ইন চীন’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনেক সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মানসিক নির্যাতন চালানোর জন্য কয়েক দিন ধরে ‘টাইগার চেয়ার’ নামের চেয়ারে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি দিয়ে আটকে রাখা হয়। খাবার ও ঘুমের অভাবে তাঁদের নিতম্ব ও পা ফুলে যায়। পুলিশের অধীনে এসব আটক কেন্দ্রের দেখাশোনা করেন ‘সেল বসেরা’। বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্মম নির্যাতন চালান এসব বস।হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীনের পরিচালক সোফি রিচার্ডসন বলেন, ‘আমরা শুনেছি বন্দীদের কবজি ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়, বছর জুড়ে তাদের হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয় এবং সেলের বসেরা তাঁদের সঙ্গে সন্ত্রাসী আচরণ করে।’ মানবাধিকার এই সংগঠনটি এ প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে দেশটির আদালতের সম্প্রতি দেওয়া কয়েক শ রায় পর্যালোচনা করেছে। ৪৮ জন বন্দীর সাক্ষাৎকার, তাঁদের পরিবারের, আইনজীবীদের ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে।প্রতিবেদন এমন ৪৩২টি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়, যেসব মামলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৩টি মামলা কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই নিষ্পত্তি করা হয়। এসব মামলায় আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।সংগঠনটি দেখেছে, মাত্র একজন বন্দীর আইনজীবী তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তবে আদালত তাঁদের কাউকেই কারাদণ্ড দেননি। স্বাস্থ্য কর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলায় সহযোগিতা করতে চায় না।২০০৯-১০ সালের মধ্যে কয়েক বার বড় ধরনের পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর পর নড়েচড়ে বসে চীন। দেশটি নির্যাতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি আইন সংশোধন করে। নতুন আইনের লক্ষ্য ছিল বন্দীদের আইনি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রাখা। একই সঙ্গে স্বীকারোক্তি ও নির্যাতনের মাধ্যমে লিখিত বিবৃতি নেওয়া নিষিদ্ধ করা।ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি দাবি করেছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা তাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। এ নির্যাতন নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষকে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় দেশটিতে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় কোনো বিরল ঘটনা নয়।সরকারি হিসেবে দেখা যায়, ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।এ ক্ষেত্রে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পুলিশ থেকে আইন মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সর্বস্তরে ব্যবস্থাপনার স্থানান্তর ঘটানোর সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।