সিলেটপোস্ট রিপোর্ট ॥ কৃষকদের সমস্যা শুনতে, জানতে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ থেকে পদযাত্রা শুরু করেছিলেন রাহুল গান্ধী৷ ওই কর্মসূচির দ্বিতীয় দফায় আজ তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের সহ-সভাপতি৷ অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে পৃথক রাজ্য তেলেঙ্গানা গঠনের পর প্রথম সফর৷ রাজ্যের আদিলাবাদ জেলার কোরিটিকাল গ্রাম থেকে আজ পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঘোরা শুরু করেন তিনি৷ ১২ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কোরাটিকাল গ্রামে আত্মঘাতী হয়েছেন ভেলমা রামেশ্বর নামে এক কৃষক৷ রামেশ্বরের বাড়ি গিয়ে আজ তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল৷ তাঁর স্ত্রী গঙ্গাবার হাতে ২ লাখ টাকার চেক তুলে দেন৷ ১৫ কিলোমিটার যাত্রাপথে লক্ষ্মণচন্দ, পোট্টুপল্লি, রচপুর, ভাড়িয়াল এবং লক্ষ্মণচন্দ মণ্ডল গ্রাম ঘুরে কৃষকদের অভাব-অভিযোগ শোনেন কংগ্রেস সাংসদ৷ হঠাৎ করে ঢুকে পড়েন বিড়িশ্রমিক মাচেরলা পদ্মার বাড়িতেও৷ পদ্মা রীতিমতো হকচকিয়ে যান যখন রাহুল গান্ধী সপার্ষদ এসে দাঁড়ান তাঁর ঘরের দরজায়৷ খানিকক্ষণ বসেনও৷ ভাষাগত অসুবিধের কারণে যদিও পদ্মার পক্ষে রাহুলের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে একটু অসুবিধেই হচ্ছিল৷ তবু তারই মধ্যে পদ্মার কাছে তিনি জেনে নেন তাঁদের দুর্দশার কথা৷ কী পরিস্হিতিতে দেনায় ডুবে কৃষকেরা আত্মঘাতী হতে বাধ্য হয়েছেন, জানতে চান সে-সবই৷ রচপুর গ্রামের আত্মঘাতী কৃষক শতম গঙ্গাধরের স্ত্রী লক্ষ্মীও এই দুর্দশার শিকার৷ বিড়ি বেঁধে এখন দিনে ৫০৷৬০ টাকা পান৷ ১০ বছরের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী করবেন, ভেবে কূল পাচ্ছেন না৷ ভাড়িয়াল গ্রামে একটি ছোট জনসভার মাধ্যমে যাত্রা শেষ করেন রাহুল৷ মোদি সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, কৃষকের চাষের জমি কেড়ে নিয়ে কর্পোরেটদের দিতে চায় এই সরকার৷ ‘মোদিজি’ এবং ‘মিনি মোদিজি’ (মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের নাম না করে) গরিব মানুষকে এ-দেশের মানুষই মনে করছেন না৷ বলা বাহুল্য, রাহুলকে কাছে পেয়ে আপ্লুত তেলেঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, কংগ্রেস সহ-সভাপতির পদযাত্রা কর্মসূচি কৃষকদের মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস জোগাবেই৷ গত জুনে টি আর এস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই শয়ে-শয়ে কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের৷ টি আর এস পাল্টা জানিয়েছে, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষের প্রয়োজন আছে৷ তবে কংগ্রেস বা রাহুল গান্ধীর এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে হিতে বিপরীত হয়! কংগ্রেস সাংসদের তেলেঙ্গানা সফরের আগেই বৃহস্পতিবার টি আর এস সাংসদ কোন্ডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডি জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ ভেতরে-বাইরে নানা বাধা অগ্রাহ্য করে একরকম জোর খাটিয়ে পৃথক রাজ্য হিসেবে তেলেঙ্গানাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল পূর্বতন ইউ পি এ সরকার৷ লোকসভা বা রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়নি কংগ্রেসের৷ পাশে পাওয়া যায়নি টি আর এস প্রধান, তেলেঙ্গানার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে৷ সেই চন্দ্রশেখর বলেছেন, ‘গান্ধীরা আসবে, যাবে৷ ওইটুকুই৷’ তেলেঙ্গানার বি জে পি সভাপতি জি কিসেন রেড্ডি জানিয়েছেন, ২০০৪ থেকে ২০১৪-য় অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশে কংগ্রেস সরকার ছিল৷ তখন কত কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন, তার খবর জানেন রাহুল? তৎকালীন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ার তো নিজেই জানিয়েছিলেন, ওই আমলে অন্ধ্রে ২১ হাজার ৮১০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন৷ ক্ষমতায় থাকলে কৃষকদের কথা মনে পড়ে না৷ ক্ষমতা হারালেই যত দরদ! আর ক্ষমতা-হারানো এক নেতার পদযাত্রাকে জাঁকজমকের আসরে পরিণত করছে কংগ্রেস৷ রাহুলের পদযাত্রাকে ঠেস দিয়ে বি জে পি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র জানিয়েছেন, আসলে কৃষকদের সমস্যা নয়, নিজেকেই তুলে ধরতে চাইছেন গান্ধী-পরিবারের উত্তরসূরি৷ লক্ষণীয়, ‘ছুটি’ থেকে ফেরার পরই রাহুল অতি-সক্রিয়৷ মোদির সরকার তথা বি জে পি-র সঙ্গে সম্মুখ সমরে নেমে পড়েছেন৷ ১৮ তারিখ যাচ্ছেন নিজের কেন্দ্র আমেথিতে৷ সেখানে ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করবেন৷ সাংসদ তহবিলের টাকায় উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করার কথা রয়েছে তাঁর৷