সিলেটপোস্ট রিপোর্ট ॥ সীমান্ত সমস্যার দ্রুত রাজনৈতিক নিষ্পত্তি চায় ভারত ও চীন৷ দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আজ যৌথ বিবৃতিতে এই অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে৷ চীন সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ বেজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে৷ গ্রেট হল অফ পিপল-এ দুই নেতা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন দেড় ঘণ্টা৷ তারপর প্রতিনিধি দলের বৈঠক৷ স্বাক্ষরিত হয় ২৪টি চুক্তি৷ তার মধ্যে রয়েছে রেল, খনি, মহাকাশ বিজ্ঞান, ভূমিকম্প বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি৷ চীন সফরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অস্বস্তিকর দিকগুলি তুলেছেন মোদি চীনা নেতাদের কাছে৷ আজ সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে জোর দেন সেই অস্বস্তির জায়গাকে কাটিয়ে ওঠার ওপর৷ বলেন, সীমান্ত সমস্যার প্রশ্নে আমাদের নিজ নিজ অবস্হানে আটকে থাকা উচিত নয়৷ সীমান্তের স্পর্শকাতর জায়গাগুলিতে অনিশ্চয়তার ছায়া ছড়িয়ে আছে৷ তার কারণ, আমরা কেউ জানি না, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাটি ঠিক কোথায়৷ পারস্পরিক এবং সমান নিরাপত্তার নীতির ভিত্তিতে এর সমাধান জরুরি৷ সীমান্ত সমস্যা নিরসনের চেয়েও বড় কিছু কাজ হবে এই সমাধানে৷ যা আমাদের সম্পর্ককে বদলে দেবে, নতুন করে কোনও সঙ্কট ডেকে আনবে না৷ মোদির আর্জি ভিসার মতো কিছু বিষয়ে বেজিং পুরনো অবস্হান বদলাক৷ বোঝাই যাচ্ছে, অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দাদের স্টেপল করা ভিসা দেওয়ার নীতিই চীনকে বদলাতে বলেছেন মোদি৷ (অরুণাচলকে তিব্বতের অংশ বলে মনে করে চীন)৷ বিষয়টি তুলেছেন চীনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও৷ ভিসা কূটনীতিতে মোদির বড় চমক, চীনের পর্যটকদের বৈদ্যুতিন ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা৷ চীন এই ই-ভিসার সুযোগ দাবি করছিল৷ ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এবং পর্যটন মন্ত্রকও চাইছিল৷ কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাদ সাধছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ বিষয়টি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়৷ লক্ষণীয় এদিন সকালেও বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর জানান, এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি৷ চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর যে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক হয়, তখনও মোদি এ বিষয়ে কিছু বলেননি৷ সিদ্ধান্তটি তিনি ঘোষণা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্রদের মাঝে৷ তিনি জানান, আগামী মাসেই মানস সরোবরে যাওয়ার দ্বিতীয় পথ (নাথু-লা হয়ে) খুলে যাচ্ছে৷ তার জন্য চীনা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান৷ দুই সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভারতযাত্রার বৃত্তান্ত ছুঁয়ে মোদি আক্ষেপ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মানুষ আজ পরস্পরকে কত কম চেনেন৷ দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত বাড়ানোর ওপর জোর দেন মোদি৷ যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর সম্পর্কের অসাধারণ সম্ভাবনার কথা, যাতে নিজেদের এবং বিশ্বেরও মঙ্গল৷ সীমান্তে বোঝাপড়া বাড়াতে দু’দেশের ফৌজের মধ্যে যোগাযোগ, আলোচনা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়৷ কার্যকর করা হবে সামরিক সদর দপ্তরের মধ্যে হটলাইন সংযোগ৷ সীমান্তের চারটি জায়গায় এখন দু’পক্ষের মধ্যে বৈঠকের সুযোগ আছে, সেটা বাড়ানো হবে৷ অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত ও চীনের যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার অনেক জায়গা আছে তা স্পষ্ট হয় আজ আবহাওয়ার পরিবর্তন সংক্রান্ত ইস্যুতে৷ দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে আবেদন জানানো হয়, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো এবং সেই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অর্থ ও প্রযুক্তি জোগানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুক পশ্চিমের দেশগুলি৷ চীনের প্রদেশগুলির সঙ্গে ভারতের রাজ্যগুলির সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য একটি ফোরামের সূচনা করা হয়েছে আজ৷ মহারাষ্ট্র, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী-সহ ভারতের বিভিন্ন্ন রাজ্য ও শহরের প্রতিনিধি এবং চীনের বিভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গ্রেট হল অফ পিপলে একটি বৈঠক হয়৷ সেখানে ভাষণ দেন মোদি, কেকিয়াং৷ পরে মোদিকে নিয়ে কেকিয়াং যান বেজিংয়ের বিখ্যাত টেম্পল অব হেভেনে৷ সেখানে ছোট ছেলেমেয়েদের যোগ ও তাইচি দেখেন দু’জনে৷ রাতে সাংহাই চলে যান মোদি৷ সফরের শেষ দিনে কাল একগুচ্ছ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা