সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা ফার্স্ট বা সেকেন্ড হয়েছে, তাদের থেকে হয়ত বেশ কিছুটা দূরেই আছে ৮৪ শতাংশ নম্বর পাওয়া শালিনী ৷ কিন্তু জীবনের লড়াইয়ে একেবারে প্রথমের সারিতে রয়েছে সে, পাঁচ বাড়িতে বাসন মেজে, ঘর মুছেও পরীক্ষায় এত ভাল ফল করে৷ নিজের হাতখরচের জন্যে নয়, বাড়তি উপার্জনে সংসারে একটু সাশ্রয় হবে বলেই শালিনী লোকের বাড়ি কাজ করে৷ ওর বয়সি বাকি মেয়েরা যখন হয়ত ফাস্ট ফুড আর ফেসবুক নিয়ে মেতে থাকে, শালিনী তখন বাসন মাজে, ঘর ঝাঁড়পোঁছ করে, দরজার সামনে রঙীন আলপনা দেয়৷ বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় শালিনী৷ ওদের বংশের প্রথম ইঞ্জিনিয়ার৷শালিনীদের নিজেদের বাড়ি নেই৷ ওর মামা্লমাইমার ছোট ভাড়াবাড়ি ভাগাভাগি করে থাকে দুটো পরিবার৷ ওর বাবা আরমুগম দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে বহু বছর ঘরবন্দি, কিছু করতে পারেন না৷ ভাই সূর্যর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে, এখন ভর্তি আছে হাসপাতালে৷ সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক শালিনীর মা, যিনি শুধু নামে নন, কাজেও বিজয়া৷ হাসপাতালে অায়ার কাজ করেন আর তার ফাঁক ফোকরে লোকের বাড়ি বাড়ি ঠিকে কাজ৷ হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্যেও মেয়েকে স্বপ্ন দেখাতে ভোলেননি৷নিজে ক্লাস ফাইভের পর আর পড়তে পারেননি, আরমুগমের তো অক্ষর পরিচয়ই নেই, কিন্তু মেয়েকে সবসময় পড়তে উৎসাহ জ৩গিয়েছেন৷প্রথমে স্হানীয় এক তামিল মিডিয়াম স্কুল , সেখানে ভাল রেজাল্ট করার পর একটু ভাল একটা কন্নড় মিডিয়াম আর তার পরে আরও ভাল এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল৷ ‘কাজের মেয়ে’ শালিনী তাই ইংরেজিতে কখন কাজ করত, কখনই বা পড়ত শালিনী? খুব শত্ত ছিল সময় বের করে নেওয়াটা৷ তাই ওর দিন শু হতো রোজ ভোর সাড়ে চারটেয়৷ প্রথমে এক বাড়ির দরজায় আলপনা দেওয়া৷ সেটা ঘণ্টাখানেকের কাজ৷ তার পর অারেক বাড়ি ঝাড়পোঁছের কাজ, আরও দুঘণ্টা৷ সেখান থেকে তিন নম্বর বাড়িতে কাপড় কাচা, বাসন মাজা৷ সকাল নটা নাগাদ বাড়ি ফিরে জলখাবার খেয়ে পড়তে বসা৷ বিকেলে আবার দু’বাড়ি কাজ, কাপড় কাচা, বাসন মাজার৷ সন্ধে গড়িয়ে বাড়ি ফিরে বেশি রাত পর্যন্ত পড়াশোনা৷দিনরাতগুলো খুব লম্বা আর ক্লান্তিকর ছিল শালিনীর জন্যে, তবু ও হাল ছাড়েনি৷ ভাগ্যিস!