সিলেটপোস্টরিপোর্ট:মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট একটি বিতর্কিত জনসংখ্যা আইনে স্বাক্ষর করেছেন। এ আইনে কিছু মা তিন বছরের আগে পুনরায় সন্তান নিতে পারবে না। সফররত সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিক ও মানবাধিকার কর্মীদের আপত্তি সত্ত্বেও এ আইন অনুমোদন করা হল। তাদের উদ্বেগ এ কারণে যে আইন শুধু নারীদের জন্যই নয়, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্যও দমনমূলক হবে। কঠোর মুসলিমবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে কট্টর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চাপে এ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। আইন প্রণেতারা গত মাসে তা পার্লামেন্টে অনুমোদন করেন। মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেন, গত সপ্তাহে মিয়ানমার নেতাদের সাথে সামনা-সামনি বৈঠকে তিনি এ বিলের বিপজ্জনক দিক সম্পর্কে তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। শনিবার তিনি মিয়ানমার ত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টা পর রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানায় যে, প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এতে স্বাক্ষরদানের মধ্যদিয়ে আইনে পরিণত করেছেন। চারবছর আগে একনায়কতন্ত্র থেকে মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে। নবলব্ধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ-বর্মীদের ঘৃণার গভীর প্রোথিত শিকড়কে উন্মোচিত করেছে। এ ঘৃণার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা হাজার হাজার সামান্য নৌকা সম্বল করে ভিড় জমাচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সমুদ্র ঘেরা দেশগুলোতে।২০১২ সাল থেকে বর্মীদের হামলায় রাখাইন রাজ্যে শত শত রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার লোক। জনাকীর্ণ, ধুলি-ধূসরিত শিবিরগুলোতে তারা মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষার সুযোগ পায় না রোহিঙ্গারা, পায় না স্বাস্থ্যসেবা। ১৯৮২ সালে এক আইনে তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে না। অতি জরুরি কাজে কোথাও যেতে হলে পুলিশকে মোটা পরিমাণ ঘুষ দিতে হয়। জনসংখ্যা আইনে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেই। তবে যেসব স্থানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি সেসব আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে সন্তান গ্রহণে বিরতির সময় সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ আইনের সাফাই হিসেবে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটা হবে মহিলাদের সন্তান জন্মদানের অধিকারের উপর হামলা এবং প্রান্তিক গ্রুপগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দমন। কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা হুঁশিয়ার করে আসছে যে, মুসলমানরা বর্তমানে দেশের ৫ কোটি জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ হলেও উচ্চ জন্মহারের কারণে তারা এ দেশটি দখল করে নিতে পারে। একজন নারী অধিকারকর্মী খিন লে প্রেসিডেন্টের ডিক্রিকে হতাশাজনক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, সরকার যদি নারীদের রক্ষার জন্যই এ আইন করে থাকে তবে তা বর্তমানে চালু সব আইনকে শক্তিশালী করেই তা করতে পারে।মিয়ানমারে দু’দিনের সফরকালে ব্লিংকেন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, তিনি এটি এবং জাতি ও ধর্ম রক্ষা বিষয়ে পার্লামেন্টে পাসের অপেক্ষায় থাকা আরো তিনটি আইনের বাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।তিনি শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, এ আইনে যেসব বিষয় আছে যা প্রয়োগ করা হলে সন্তান জন্মদানের অধিকার, নারী অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব হবে।