সিলেটপোস্টরিপোর্ট:চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব।এদিকে প্রচ- গরমে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা অতিথিসহ লেখক, শিল্পী ও প্রবাসী দর্শকদের নাজেহাল হতে হয়েছে। গত তিনদিনে এ অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি ফলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে অতিথি শিল্পী ও কলাকুশলীরা আয়োজকদের এ অব্যস্থাপনার জন্য ধিক্কার জানান।নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ নম্বর পাবলিক স্কুলে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের উদ্বোধনের করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রচ- গরমের কারণে তিনিও মিলনায়তনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে পারেননি। নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বই মেলার অনিয়ম নিয়ে ইতোপূর্বে ঢাকার জাতীয় পত্রিকাসহ নিউইয়র্কের বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের লেখকদের চেয়ে ভারতীয় লেখকদের প্রাধান্য, বই মেলা উপলক্ষ্যে দুই বাংলা থেকে আদম আমদানি, নানা অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে স্পন্সরের নামে অর্থ আদায় ইত্যাদি। তবে সবকিছুর পর নিউইয়র্কে প্রবাসীদের প্রত্যাশা ছিল এবারের বই মেলা হবে একটি ব্যতিক্রম। কিন্তু যাহা পূর্বং তাহা পরং।নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসে এবারের এ মেলাটি হওয়ায় প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছে। কিন্তু বই বিক্রি তেমন হয়নি। ঢাকা ও কলকাতা থেকে এসে বিভিন্ন প্রকাশক ও লেখকরা আশানুরুপ বই বিক্রি করতে পারেনি। বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা গত তিন দিনে গড়ে ৩০/৪০টি করে বই বিক্রি করেছেন। কিন্তু ঢাকা বা কলকাতা থেকে আসার বিমান ভাড়াও উঠেনি। কিন্তু তবুও তাঁরা অসন্তোষ্ট নন, কারণ অনেকের পাসপোর্টে পাঁচ বছরের আমেরিকান ভিসা লেগেছে। ভবিষ্যতে আবারো আসা যাবে। ঢাকা থেকে এসেছেন কবি শিহাব শাহরিয়ার।অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে শিহাব শাহরিয়ার বলেন, তাঁকে কবিতা পড়ার জন্য মাত্র ২ মিনিট সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, মাত্র ২ মিনিটের জন্য এক লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে আসেননি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে তিনি কবিতা পড়ার জন্য এখানে এসেছেন। তাই ওই দিন তিনি একটি দীর্ঘ একটা কবিতা আবৃত্তি করেন।এদিকে দ্বিতীয় দিনেও মিলনায়তনের ভেতরে ও মূলমঞ্চে কোন এয়ারকন্ডিশন বা ফ্যান চালানোর ব্যবস্থা না করায় প্রবাসের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী দুলাল ভৌমিক, তাজুল ইমাম এবং দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ও যন্ত্রশিল্পীরা প্রচ- গরমে নাজাহাল হয়ে পড়েছিলেন। অধিকাংশ দর্শক সংবাদপত্রের পাতা কিংবা ম্যাগাজিনের পাতা ছিঁড়ে নিজ নিজ বাতাস করতে দেখা গেছে।প্রথম দিনে, বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান দেখা গেলেও, পরদিন একটি মাত্র খাবারের দোকান দেখা গেছে। সে দোকানটিকেও পাঠানো হয়েছিল একেবারে বাইরের ফুটপাতে। তারা বাধ্য হয়ে ধুলোবালি মেশানো খাবার পরিবেশন করেছেন অতিথিদের মাঝে।গত রোববার উৎসবের শেষদিনেও একই অবস্থা বিরাজ করে। বাংলাদেশ থেকে আসা জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী তাঁর গানের একপর্যায়ে আয়োজকদের তাচ্ছিল্য করে বলেই ফেলেন, একটা ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো। এ সময় তিনি ভীষণ অস্বস্তিবোধ করছিলেন। প্রায় প্রতিটি দর্শকের একই অভিযোগ ভেতরে ভীষণ গরম। অনেক দর্শক গান বা আলোচনা না শুনে বাইরে এসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।অভিযোগ উঠেছে, জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ নম্বর পাবলিক স্কুলটিতে এয়ারকন্ডিশনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিনের জন্য ২০০ ডলার করে ভাড়া দাবি করায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা উক্ত পরিমাণের ভাড়া প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেন। ফলে প্রচ- গরমের যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন শত শত শ্রোতা-দর্শক।এ ব্যাপারে বিশ্বজিত সাহা বলেন, সেন্ট্রাল এসির কোনো ব্যবস্থা নেই তাই আমরা জানালা খুলে দিয়েছি। অথচ মূলমঞ্চের দু’পাশে দুটি করে চারটি ফ্যান দাঁড় করানো ছিল। শুধু বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয়নি। কারণ ফ্যান সংযোগ দেয়াও নিষেধ ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ উৎসবে যুক্তরাষ্ট্রস্থ একমাত্র পৃষ্ঠপোষক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে অনুষ্ঠানে এসে বসার স্থান খুঁজে পাচ্ছিলেন না। গরমে মিলনায়তনে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরা হলেতিনি বলেন, আগামীতে কোনো স্পন্সর দেয়ার আগে এ বিষয়গুলো তিনি আয়োজকদের কাছে তুলে ধরবেন।কানাডার মন্ট্রিয়ন ও অটোয়া থেকে আসা দু’জন লেখিকার সঙ্গেও কথা হয়। তাঁরা বলেন, কোনো আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠানে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা আর কখনো দেখিনি। কানেকটিকাটের হার্টফোর্ড এলাকা থেকে উৎসবে এসেছিলেন জনৈক কবি ও লেখক।প্রচ- ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বই মেলার কমিটিতে জড়িত বুদ্ধিজীবীরা আয়োজকদের কী বুদ্ধি দিয়েছেন ? তাঁরা ভালোমানের অনুষ্ঠান করার বুদ্ধি দেননি। এসব লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা কিভাবে অর্থ কামানো যায় সেই বুদ্ধিই দিয়েছেন। কারণ মঞ্চে শিল্পী কলা কুশলী এবং হলভর্তি দর্শকরা যখন গরমে নাজেহাল তখন কোনো লেখক, কবি ও বুদ্ধিজীবীরা কেউ টু শব্দ বা কোনো প্রতিবাদ করেননি।তবে নিউইয়র্কের লেখক ও সাহিত্যপ্রেমীরা এ বই মেলার প্রশংসা করে বলেন, যাই হোক প্রবাসে বই নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য এর আগে কেউ এগিয়ে আসেননি। সামান্য ভুলক্রটি হতেই পারে। এদের মধ্যে অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত একটা বিশাল বাণিজ্য। এসবের মূল বাণিজ্য হলো বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আদম আমদানি।এদিকে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বই মেলার জন্য বাংলাদেশ থেকে মোটা অংকের সরকারি অনুদান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমা কোম্পানী এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে নানা শেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এই উৎসব ও বইমেলার অজুহাতে প্রতি বছর বাংলাদেশ ও ভারত থেকে শিল্পীদের সহযোগী ও নানা পেশা দেখিয়ে আদম আমদানি করা হয়ে তা প্রবাসীদের সকলেরই জানা।