সিলেটপোস্টরিপোর্ট:জঙ্গিদের হত্যাযজ্ঞে ঝরে যায় বেলাসহ তার ১১ বন্ধু, সহকর্মীর প্রাণ। শুক্রবার রাতে নিজের ৩৫তম জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন হৌদা সাদি। প্যারিসের বেলা ইকুইপ রেস্তোরায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজনদের।কিন্তু সাদি কল্পনাও করেননি, আনন্দঘন মুহুর্ত পরিণত হতে চলেছে বিভিষীকায়। তার জন্মদিনই হতে চলেছে তার ও ঘনিষ্ঠজনদের মৃত্যুদিন। এদিন প্যারিসে আইএস জঙ্গি হামলার একটি টার্গেট ছিল এই বেলা ইকইপ। জঙ্গিদের হত্যাযজ্ঞে ঝরে যায় বেলাসহ তার ১১ বন্ধু, সহকর্মীর প্রাণ।ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিউনিসিয়ান নাগরিক বেলা একজন ওয়েট্রেস ছিলেন। নিকটবর্তী আরেকটি রেস্তোরা ক্যাফে দ্য অ্যাঞ্জেস এ কাজ করতেন তিনি। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ছিলেন তার বড় বোন হালিমা (৩৬) ও দুই ভাই খালেদ ও বশির। জঙ্গিদের গুলিতে মারা যায় সাদি ও হালিমা। তাদের দুই ভাই অলৌকিকভাবে অক্ষত বেঁচে যান। দুই বোনের একজনকে তার অন্তিম সময়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেন আরেক তিউনিসিয়ান করিম (৩৮)। রক্তে ভেজা ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে তাকে আগলে ধরে করিম সাহস যোগানোর প্রচেষ্টায় বলেন, ভয় পেয়ো না
কিন্তু তার জখম ছিল গুরুতর। খালেদ অপর দিকে আরেক বোনকে সিপিআর দেয়া চেষ্টা করেন। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ক্যাফের ফ্লোরেই মারা যান এক বোন। মাথায় গুলিবিদ্ধ আরেক জন পরে হাসপাতালে মারা যান।হত্যাযজ্ঞের পর খালেদ ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, বন্দুকধারীরা ঢুকে ক্যাফের চতুর্দিকে সবাইকে লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। গুলি এড়ানোর চেষ্টায় আমি মাটিতে শুয়ে পড়ি।গোলাগুলি একবার থামলে মাথা উচু করে দেখার চেষ্টা করি। সঙ্গে সঙ্গেই আবারও তারা গুলি করা শুরু করে। আমি আবারও লুকিয়ে পড়ি। সব মিলিয়ে মিনিটখানেক গোলাগুলি চলে।কিন্তু মনে হয়েছিল যেন দীর্ঘ সময় ধরে তা চলছে। এরপর হামলাকারীরা চলে যায়। রেস্তোরার সবাই হয় মারা গিয়েছিলেন বা গুরুতর জখমে কাতরাচ্ছিলেন। হালিমার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি। সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আমার আরেক বোন সাদিকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি।বেলা ইকুইপ ক্যাফেতে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৯ জনের বেশিরভাগই সাদির জন্মদিন উদযাপনে এসেছিলেন। এর মধ্যে ক্যাফে দে অ্যাঞ্জেস থেকে সাদির সহকর্মী ৪ সদস্য ও তাদের ৬ বন্ধু।নিহতদের প্রত্যেকের বয়স ছিল তুলনামূলক কম। এদের মধ্যে একজন ছিল ২৭ বছরের মেক্সিকান নারী মিশেলি জিল জাইমেজ। তিন বছর ধরে প্যারিসে ছিলেন তিনি। কাজ করতেন বেলা ইকুইপে।হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারানোর কয়েকদিন আগেই ইতালিয়ান এক নাগরিকের সঙ্গে তার বিয়ের এনগেজমেন্ট হয়। হবু স্ত্রীকে হারিয়ে মিশেলির বাগদত্তা ফেসবুকে তাকে বিদায় জানিয়ে লিখেছে, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, প্রিয়তমা। শান্তিতে থেকো।’
নিহতদের অন্যদের মধ্যে ছিলেন বীরত্বের পরিচয় দেয়া লুডোভিচ বৌমবাস যিনি তার বন্ধু ক্লোয়ি ক্লেমেন্টকে বাচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। পরপারে চলে যাওয়া অন্যরা হলেন, রোমানিয়ান নাগরিক লাক্রিমিওয়াভাবা পপ ও তার সঙ্গিনী সিপ্রিয়ান কালসিউ, হিয়াসিন্থি কোমা, ডিজামিলা হৌদ (৪১), গিলম লে ড্রাম্প (৩৩), রোমেইন ফেউলাড (৩১) ও রেনে বিচোন।