সিলেটপোস্ট রিপোর্ট :মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ অঞ্চলের ২৩টি নদীই বিপন্ন হওয়ার পথে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের পরিবেশ। উজানে ভারতের বাঁধ, দেশের ভেতরে প্রভাবশালীদের অব্যাহত দখল, আর নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিপন্নের পথে মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জের ২৩টি নদী। এর ফলে এ অঞ্চলের পরিবেশের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিলীন হচ্ছে জলজ জীব-বৈচিত্র্য, ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে দেশীয় মাছের উৎপাদন, ব্যাহত হচ্ছে ফসলী জমিতে সেচকাজ।মৌলভীবাজার জেলার প্রধান নদী মনু, ধলাই এবং হবিগঞ্জের খোয়াই নদী বিভিন্ন এলাকায় ভরাট হয়ে পড়েছে। এসব নদীর বুকে জেগে উঠেছে বালুচর। দুই জেলার এ তিনটি প্রধান নদীর নাব্যতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবার কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোতে পানি প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই জেলার অধিকাংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে।মৌলভীবাজার জেলার বিপন্ন হয়ে পড়া নদীগুলো হলো মনু, গোপলা, বরাক, কচুয়াখাড়া, উদনা, লাগাটা, বিলাস, করাঙ্গী, ধলাই, কন্টিনালা, ফানাই, জুড়ী। ১৯৭৭ সালে মৌলভীবাজার জেলার ৫৬ হাজার একর কৃষি জমি ও জনবসতিকে বন্যার তাণ্ডব থেকে রক্ষা এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মনু নদী প্রকল্প করা হয়। কিন্তু শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্প কোন কাজেই আসেনি।হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদী খোয়াই, কুশিয়ারা, বিজনা, সুতাং, রতœা, শুটকী, সোনাই, করাঙ্গী, ঝিংড়ী, ভেড়ামোহনা শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। নদীর এই রুগ্ন দশার ফলে নদী তীরবর্তী জনপদে তৈরি হচ্ছে মরুময় পরিবেশের। হবিগঞ্জ জেলার ধলাই নদী প্রকল্পের আওতাভুক্ত প্রায় ৫০ একর জমি সেচ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। এতে করে দুই জেলার কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর উৎস হচ্ছে ভারতের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা। এ উৎসমুখগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভারত বাঁধ নির্মাণের ফলে এসব নদ-নদীর পানি প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তাদের হাতে। ফলে শুকনো ও বর্ষা উভয় মৌসুমেই নদীর স্বাভাবিক স্রোত ব্যাহত হচ্ছে।বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, এ ধারা অব্যাহত থাকলে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক মানুষ চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী বিধৌত ধলাইর পাড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে এলাকার বোরো চাষিরা পানির অভাবে হাহাকার করছেন। শুধু বরাক, ধলাই নদী নয় হারিয়ে গেছে মৌলভীবাজার জেলার গোপলা নদীর শাখা নদী কচুয়ারখাড়া, হবিগঞ্জ জেলার সুতাং নদীও। এ দুটি নদীর বুকে এখন চাষ হয় ধান।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে বন্যার পানির সঙ্গে লাখ লাখ টন পাহাড়ি বালি ও পলি মাটি ভেসে এসে নদীগুলোর তলদেশে ভরাট হয়েছে। ফলে নদীগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো ভরাট হয়ে পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে প্রাণী প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন এসব নদী খনন করেও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।