সিলেটপোস্ট রিপোর্ট :বড়লেখায় প্রকৃত বাজারমূল্যের সঙ্গে সরকারি মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন হ্রাস পাচ্ছে। কম দামের জমির বেশি দাম লিখে দলিল করতে গিয়ে ভূমির ক্রেতা-বিক্রেতারা একদিকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে অধিক ফির ভয়ে অনেকেই দলিল রেজিস্ট্রি না করায় সরকারও রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।বড়লেখা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৩৭টি মৌজা রয়েছে। এসব মৌজার ভূমির শ্রেণীভিত্তিক সরকারি যে গড়মূল্য নির্ধারিত তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ও আকাশ ছোঁয়া। যার খেসারত দিচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা, দলিল লেখক এমনকি সরকারও। একই মৌজার এমনও ভূমি রয়েছে যেখানে একপাশের ভূমির শতকের প্রকৃত মূল্য ১ লাখ টাকা আবার অন্য পাশের ভূমির মূল্য মাত্র ২-৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে সরকারি গড়মূল্য ১ লাখ টাকা নির্ধারিত থাকায় ক্রেতাকে ২-৩ হাজার টাকা দামের ভূমির মূল্য বাধ্য হয়ে ১ লাখ টাকা লিখে দলিল করতে হচ্ছে। এতে ক্রেতারা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেকেই ভূমি কিনলেও এ ক্ষতির ভয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করছেন না। ভূমির গড়মূল্য জটিলতায় দলিল রেজিস্ট্রেশন হ্রাস পাওয়ায় দলিল লেখকরাও বেকার হয়ে পড়ছেন।
অফিস সূত্র জানায়, ভূমির অত্যাধিক গড়মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে মূলত ২০১১ সালের পর থেকে। এ বছর বড়লেখায় সর্বমোট ভূমি দলিল রেজিস্ট্রেশন হয় ৪ হাজার ৭৬৮টি। পরের বছর ২০১২ সালে ৪ হাজার ৫৮৪, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ৭৯, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৭৩৮ এবং চলিত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার। বছরে প্রায় ৫শ করে দলিল রেজিস্ট্রেশন কমে যাওয়ায় সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌরসভার অভ্যন্তরের মুড়িরগুল মৌজার সড়কের পাশের প্রতি শতাংশ ভূমির প্রকৃত মূল্য ৪ লাখ। সড়ক থেকে একটু দূরের জমির প্রতি শতাংশ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এ মৌজার শতাংশপ্রতি সরকারি গড়মূল্য ৩ লাখ ৩৫ হাজার। এ ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা দামের ভূমি ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ধরে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে। গড়মূল্যের আকাশ ছোঁয়া পার্থক্যের কারণে এ মৌজায় এবার মাত্র ২টি দলিল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মীর মখলিছুর রহমান জানান, সরকারি দরমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দলিল রেজিস্ট্রেশন কমে যাওয়ায় দলিল লেখকরা বেকার হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সরকারি গড় মূল্য নির্ধারণ কমিটি মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র না জেনে মূল্য নির্ধারণ করায় মারত্মক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা গড়মূল্য নির্ধারণ কমিটির উপদেষ্টা ও বড়লেখা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাসনা জানান, ভূমির উর্ধ্বমূল্যের কারণে জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তিনি উপজেলা পরিষদের গত সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। গড়মূল্য পুনর্নির্ধারণের জন্য জেলা কমিটির সভায় উত্থাপন করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল করিম দোলা জানান, ভূমির প্রকৃত মূল্যের সঙ্গে সরকারি গড়মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় ক্রমশ ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমে যাচ্ছে।