সিলেটপোস্ট রিপোর্ট:বিয়ানীবাজার থেকে ফিরে, রবিবার, ২৮ আগস্ট ২০১৬ :: বিয়ানীবাজারের সীমান্ত লাগোয়া জনপদ দুবাগ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নেরই গ্রাম বড়গ্রাম। এপারে বাংলাদেশ আর ওপারে ভারত। গ্রামটির যেকোন প্রান্তে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে ওপারে থাকা ভারতীয় দালানকোঠা, গাছগাছালি। সূতারকান্দি সীমান্তের এই হিসেবে বলা চলে বাংলাদেশের শেষ গ্রাম। নারায়ণগঞ্জে শনিবার সকালে ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’-এ নিহত তামিম চৌধুরীর দাদাবাড়ি এই গ্রামেই। জঙ্গি তামিমের মরদেহ গ্রামে আনতে দেবে না বিয়ানীবাজারবাসী।
শনিবার বিকালে নিহত তামিমের গ্রামের বাড়িতে গেলে এমনটিই জানান গ্রামের মানুষরা। গ্রামের বাসিন্দা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কেউই জঙ্গি তামিমের লাশ গ্রামে দাফন হোক এটা চান না।
শনিবার বিকালে এ বাড়িতে গেলে পরিবারের কোন পুরুষ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে পাওয়া যায় তামিমের দুজন চাচী ও চাচাতো বোনদের।
তামিমের চাচী আঙ্গুরা বেগম জানান, তামিমের সাথে কিংবা তামিমের বাবা-মায়ের সাথে আমাদের কোনরকম যোগাযোগ নেই। তামিম কখন কবে দেশে এসেছে এটা তাদের জানা নেই। আমরা কোনোদিন তামিমকে দেখিনি। তামিমের লাশ আনতেও আমাদের পরিবারের কেউ যাবে না।’
বড়গ্রামের ওই বাড়িতে তামিমের তিন চাচা থাকতেন। এদের মধ্যে ফখরুল ইসলাম মারা গেছেন দুই বছর আগে। গত রোববার মারা যান তার নজরুল ইসলাম। অপর চাচা নুরুল ইসলাম বেঁচে আছেন। তবে তাকে ওই সময় বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি তামাবিল সীমান্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিলেন।
এলাকাবাসী জানান, তামিমের বাবা শফি আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রামে জাহাজে চাকরি করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে চট্টগ্রাম থেকেই তিনি স্বপরিবারে পাড়ি জমান কানাডাতে। সেখানেই তামিমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
বড়গ্রামের বাসিন্দা মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তামিম সম্পর্কে আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে ও পত্রপত্রিকায় জেনেছি। এ ছেলেটির জন্য আমরা গ্রামবাসী তথা বিয়ানীবাজারবাসী আজ সারাদেশের কাছে লজ্জিত। তামিমের মরদেহ গ্রামের মাটিতে দাফন হোক সেটা গ্রামের মানুষরা চান না।’
দুবাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে তামিম গোটা বিয়ানীবাজারবাসীকে কলঙ্কিত করেছে। এ গ্রামের মাটিতে কিছুতেই তার শেষ ঠিকানা হবে না। দাফন করতে হবে না তার লাশ।’
তিনি বলেন- ‘সে বিয়ানীবাজারের কেউ নয়। সে কানাডিয়ান নাগরিক। সে কোনদিন বিয়ানীববাজারেও আসেনি। বিয়ানীবাজারবাসীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি দাবি করেন তামিমের কলঙ্কের দায় বিয়ানীবাজারবাসীর নয়।
এসময় উপস্থিত আরোও কয়েকজন তরুণ বলেন- ‘এরকম জঙ্গিদের লাশ দেশের মাটিতে দাফন করা উচিত নয়। এদের লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া উচিত।’
তামিমের চাচাতো ভাই ফাহিম আহমদ চৌধুরী জানান- ‘তার বাবা নজরুল ইসলাম চৌধুরী গত রোববার মারা গেছেন। বাবার মৃত্যুতে তাদের পরিবার শোকাহত। আর তামিম কখন কবে দেশে এসেছে এটা তাদের জানা নেই। তিনি (ফাহিম) কোনদিন তামিমকে দেখেননি। তাদের পরিবারের কারো সাথে তামিমের পরিবারের যোগযোগ ছিল না। তামিমের লাশ আনতেও পরিবারের কেউ যাবে না।’
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘তামিম আহমদ চৌধুরী নিখোঁজ এলাকাবাসীর মুখে শুনেছি। এরপর পরিবারের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই বলেই জানেন এলাকার লোকজন। তামিম চৌধুরীর মৃত্যুর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটলো এক কলঙ্কজনক ইতিহাসের।’