
তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান। কানাডার উইন্ডসরে থাকার সুবাদে ৩০ বছর বয়সী তামিমের বেড়ে ওঠাও সেখানে। পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তামিম তিন সন্তানের জনক। তামিমের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার শুরু কীভাবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে কানাডার পত্রিকা ন্যাশনাল পোস্টে গত মাসে প্রকাশিত খবরে বলা বলা হয়, আইএসের (ইসলামিক স্টেট) কথিত ‘বাংলার খিলাফত দলের প্রধান’ শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। তার প্রকৃত নাম তামিম চৌধুরী। কানাডার উইন্ডসর শহরে থাকতেন। সেখানে বসেই আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। সূত্র জানায়, বিষয়টি কানাডীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি বাংলাদেশে চলে এসে জঙ্গি তত্পরতা শুরু করেন।

তামিম আহমেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে জঙ্গিদের নতুন ধারার তত্পরতার নেপথ্য ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ, যিনি গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নিহত হলেন। গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে তামিমকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পুলিশ। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস তাদের বাংলাদেশ শাখা প্রধান হিসেবে যে আবু ইব্রাহিম আল হানিফের নাম ঘোষণা করেছিল, তাকে তামিম বলেই অনেকে মনে করছিলেন। গুলশান হামলার পরই তামিমের নামটি ব্যাপক আকারে আলোচনায় আসে।
গত ২ আগস্ট ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় তার আইএস-সংশ্লিষ্টতার দাবি প্রত্যাখ্যান করে আইজিপি শহীদুল তামিমকে ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষনেতা বলে চিহ্নিত করেন। পুলিশের তথ্য মতে, বাংলাদেশে জেএমবির যে ভগ্নাংশটি আইএস অনুসারী হয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, নব্য জেএমবি নামের সে অংশের শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী। রাজধানীর কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলেও জানা গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তামিম চৌধুরীই দেশীয় জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় তামিম চৌধুরীর যাতায়াতের বিষয়টি গ্রেফতার জঙ্গি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান পুলিশকে জানিয়েছিল।
কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান জানিয়েছে, কল্যাণপুরে তাদের জঙ্গি আস্তানায় তামিম চৌধুরী, রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ নামে ব্যক্তিরা নিয়মিত যাতায়াত করত। তারা তাদের ধর্মীয় ও জিহাদি কথাবার্তা বলে উদ্বুদ্ধ করত। প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা দিয়ে যেত।
কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, তামিম চৌধুরী বর্তমানে জেএমবির একাংশের নেতৃত্বদানকারীদের একজন। সে দেশেই আত্মগোপন করে রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরীর নাম আসে। এছাড়া কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর পুলিশ জেএমবি ও এর সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তামিম চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ জুলাই মিরপুর থানায় মামলা করে।