সিলেটপোস্ট রিপোর্ট:অবৈধভাবে ২০ বছর ধরে হাসপাতাল পরিচালনার পর লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছাত্র সংখ্যা, ভর্তির দিক থেকে প্রাচীন ও বৃহৎ মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ঢাকা মেডিকেলে কলেজের পরই। লাইসেন্স ছাড়াই বিগত ২০ বছর ধরে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি লাইসেন্সবিহীন হাসপতালের নামেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল কলেজ পরিচালনার অনুমতিও পায় তারা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের একটি পরিদর্শন দল হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে এ চিত্র দেখতে পায়। লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটিকে শোকজ করা হলে চলতি বছরের ১৬ আগস্ট জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এটিএমএ জলিল লাইসেন্সের জন্য অধিদফতরে একটি আবেদন করেন। তারা জানান, যেখানে দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি মেডিকেল কলেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় ১৯৩ জন সেখানে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় ১৯০ জন।
রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেটের লাইসেন্স (প্যাথলজি/ল্যাবরেটরি/এক্সরে ইত্যাদিসহ) প্রদান প্রসঙ্গে করা এ আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, এ হাসপাতাল ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠত। বর্তমানে এ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা এক হাজার। এর মধ্যে কেবিন ১২০টি, আইসিইউ বেড ১৬টি এবং সাধারণ বেড ৮৬৪টি। আবেদনপত্রে বলা হয়, সাবেক অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্তের কারণে এ প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি।
রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ ধরনের আচরণে বিস্মিত হয়েছেন অধিদফতরের পরিদর্শন দলের সদস্যরা। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের নামে মন্ত্রণালয় থেকে কিভাবে মেডিকেল কলেজ পরিচালনার অনুমতি দেয়া হলে সে বিষয়েও হতবাক অধিদফতর। এমনকি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্স এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেবাকর্মীর দেখা পাননি পরিদর্শক দলের সদস্যরা।
বেসরকারি মডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত) ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কমপক্ষে দুই বছর আগে থেকে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ ন্যূনতম ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। অর্থাৎ মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য অনুমোদিত হাসপাতাল থাকা আবশ্যক।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এটিএমএ জলিল জানান, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই হয়তো হাসপাতালের লাইসেন্স হয়ে যাবে। তিনি জানান, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ব্রি. জে. (অব.) নাজমুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অনুমোদন করান। তিনি মনে করতেন হাসপাতাল থাকা সাপেক্ষেই মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তাই হাসপাতালের আলাদা করে অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। তিনি সম্প্রতি মারা গেছেন। তারপর বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর লাইসেন্সের জন্য আবদেন করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে প্রয়োজনীয় লোকবলের দেখা পায়নি পরিদর্শক দল। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিদর্শন দল এসেছে রাতে। তাই তারা লোকবল কম দেখেছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, পরিদর্শন দলে তিনি নিজেও ছিলেন। তিনি অবাক হয়েছেন ২০ বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে। তাছাড়া মন্ত্রণালয় কিভাবে মেডিকেল কলেজ পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে সারা দেশে এ ধরনের পরিদর্শন করা হতো না। তাই এ ধরনের বিষয়গুলো অজানাই থেকে গেছে। এখন নিয়মিত পরিদর্শন ও অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
অধ্যাপক শামিউল বলেন, এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো সঠিকভাবে নিয়ম অনুসরণ করেনি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।