সিলেটপোস্ট রিপোর্ট :সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা মাঈনুল ওরফে মূসা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন,‘ওই আস্তানায় জঙ্গি মূসা রয়েছে এরকম তথ্য ধরেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গ্রিন সিগন্যাল পেলেই অভিযান শুরু হবে।’
ধারণা করা হয় নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী, সারোয়ার জাহানের মৃত্যুর পর জঙ্গি সংগঠনটির হাল ধরেছেন মাঈনুল ওরফে মুসা। গত সেপ্টেম্বরে আজিমপুরে অভিযান শেষে মুসার বিষয়ে প্রথম তথ্য পায় পুলিশ। তবে আশকোনায় সূর্য ভিলায় পরিচালিত রিপল-২৪ অভিযানের পর মুসার বিষয়ে নিশ্চিত হয় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
ওই সময় নব্য জেএমবির নেতা মাঈনুল ওরফে মুসাকে গ্রেফতার করতে পূর্ব রাজধানীর আশকোনায় অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বহিনী। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের তথ্য মতে মুসাই এখন নব্য জেএমবির প্রধান।
এ জেএমবি নেতার বিষয় প্রথম তথ্য পাওয়া যায় আজিমপুরে অভিযানের পর। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া তানভীর কাদেরীর ছেলের জবানবন্দিতেই মুসার বিষয়ে প্রথম তথ্য পাওয়া যায়। জবানবন্দিতে উঠে আসে মুসাও জাহিদের সঙ্গে তানভীর কাদেরীর সম্পর্কের কথা। তানভীর কাদেরীর মাধ্যমেই মাঈনুল ওরফে মুসা ও জাহিদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলো তা জবানবন্দিতে বলে কিশোর।
পুলিশ বলছে, মাঈনুল ওরফে মুসা পড়াশুনা শেষ করে উত্তারার একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। মুসার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন মুসা। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ইরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। তার জন্ম ১৯৮৮ সালে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার ও নিহত হওয়ার পর থেকে মুসা নিজের মতো করে সংগঠন গোছাতে শুরু করেন। নব্য জেএমবির নাশকতার পরিকল্পনা, আত্মঘাতী স্কোয়াড পরিচালনা, অস্ত্র-বিস্ফোরক সংগ্রহ এবং অর্থ লেনদেনসহ সব বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুসা। আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে অল্পের জন্য ফসকে যান মুসা।
শুক্রবার সকালে জঙ্গি সন্দেহে সিলেটের আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সন্ধ্যায় ওই জঙ্গি আস্তানার অভিযান বহরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো যোগ দেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এর আগে শুক্রবার বিকেলে সোয়াট টিমের সদস্যরা ওই বাড়ি ঘেরাও করে। শুক্রবার দুপুরে সোয়াট টিম ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে সোয়াট টিম সিলেটে পৌঁছায়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, মাইকে বারবার জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না জঙ্গিরা। মাইকে মর্জিনা নামে সন্দেহভাজন এক নারী জঙ্গির নাম ধরে মাইকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। ওই নারী জঙ্গির সঙ্গে বাড়িটিতে আর কতো জন জঙ্গি অবস্থান করছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
জঙ্গিরা আত্মসমর্পণে রাজি না হলে আনুষ্ঠানিক অভিযান চালানো হবে বলে জানান পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া।
রাত ৮টায় গলির মুখে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, সেনাবাহিনীর একটি টিম পৌছেছে। ধারণা করা হচ্ছে আতিয়া মহলের ভেতরে বিস্ফোরক রয়েছে।
জঙ্গি আস্তানা শিববাড়ির ‘আতিয়া মহলে’ ঢোকার গলির মুখে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে গোলাম কিবরিয়া জানান, জঙ্গিদের ধরতে ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হবে। কিন্তু কখন আনুষ্ঠানিক অভিযান চালানো হবে তিনি বলেননি।
এর আগে সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির ভেতর থেকে ২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে জঙ্গিরা। জবাবে পুলিশও পাল্টা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় সেখান থেকে একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এছাড়া বাড়ির ভেতর থেকে কয়েকজন একসঙ্গে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে শোনা গেছে। ঘিরে রাখা বাড়িটির নাম ‘আতিয়া মহল’ বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িস্থ জহির তাহির মেমোরিয়াল স্কুলসংলগ্ন বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। রাতে বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গভীর রাতে ৫তলা ভবনের ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
সরেজমিনে শিববাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যে বাড়িকে ঘিরে রাখা হয়েছে সে বাড়ির আশপাশে গণমাধ্যমকর্মীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণদের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাইকমান্ডের নির্দেশনায় অভিযান শুরু হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের যেকোনো ব্রিফিং হাই কমান্ড থেকে করা হবে। ৫তলা ভবনের ওই বাড়িতে বাড়িওয়ালার পাশাপাশি বেশ কিছু ভাড়াটে রয়েছেন।