এ এইচ এম ফারুক::একজন দেহ পসারিণী হিসেবেই শাহীন নামে আরেক দেহ পসারিণীর মাধ্যমে নুরানী আক্তার সুমীর (৩৫) সঙ্গে পরিচয় হয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা কবি শাহাবুদ্দীন নাগরীর (৬২)। সুমীকে বেশ পছন্দ হয় তার। গত তিনবছর শাহাবুদ্দীন নাগরী ও সুমী অবাধে মেলামেশা করেছেন স্বামী-স্ত্রীর মতোই। মামলার তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। তদন্তের সূত্র ধরে জিজ্ঞাসাবাদেও এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। সূত্রটি জানিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সুমীর স্বামী কাজী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বর্তমানে শাহাবুদ্দীন নাগরী, সুমী ও তার ড্রাইভার বর্তমানে পাঁচদিনের রিমান্ডে আছেন। শুক্রবার রিমান্ডের চতুর্থ দিন চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে শাহাবুদ্দীন নাগরীর পরনারীতে আসক্তি রয়েছে। তিনি নিরাপদে পরনারীর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য কৌশল আটছিলেন। তার অংশ হিসেবে পরিচয়ের পর বিশেষ পছন্দ হওয়ায় সুমিকে রক্ষিতার মতো করে নেন শাহাবুদ্দীন নাগরী।
এ জন্য শাহাবুদ্দীন নাগরী সুমীকে কম দামি বাসা থেকে দামি বাসায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে পরিবারের মাসিক খরচ বহন করতেন। চলাচলের জন্য দিয়েছিলেন দামি গাড়িও। সুমীর পরিবারের বাসাভাড়া, ড্রাইভারের বেতন, মাসিক বিল, খাওয়া খরচসহ যাবতীয় খরচের জন্য মাসে প্রায় লাখ টাকা দিতেন। বিনিময়ে শাহাবুদ্দীন নাগরী সুমীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এ জন্য সুমীর সামী কাজী নুরুল ইসলামেরও সায় ছিল।
মূলত কাজী নুরুল ইসলামও খদ্দের হিসেবে সুমীর সাথে পরিচিত হয়েছিলেন এবং প্রায় পাঁচবছর আগে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু স্বামী স্ত্রী মিলে দেহব্যবসায় নামার পরিকল্পনা করেই মুলত তারা বিয়ে করেন বলে জানিয়েছেন স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার একনম্বর আসামি সুমী।
নুরুল ইসলামের সাথে বিয়ের আগেও সুমীর দুটো বিয়ে হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সুমী। জানিয়েছেন, আজ থেকে প্রায় ছয়বছর আগে নুরুল ইসলামের সাথে তার পরিচয়। তখন নুরুল ইসলাম খদ্দের হিসেবে সুমীর কাছে যেতেন। এ সময় সুরুল ইসলামের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে সুমীর। দুজনে মিলে প্রতিদিন অনেক লোকের সাথে মেলামেশা থেকে বেরিয়ে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের পরিকল্পনা করেন। নুরুল ইসলাম খদ্দের থেকে হয়ে যান দালাল। সুমীকে পয়সাওয়ালা খদ্দেরের অফিস-বাসায় নিয়ে যান। এভাবে তাদের চোখের সামনে আয়েসী জীবনের চিত্র ফুটে ওঠে।
একসময় তাদের পরিকল্পনা আরো গভীর হয়। দুজনে বিয়ে করে দূরুত্ব ঘোচান এবং পেশাকে নির্বিঘ্ন করেন।
এরমাঝে শাহীন নামে আরেক দেহ পসারিণী মহিলা, যিনি নিজেও দালাল হিসেবে কাজ করেন, তার মাধ্যমে তিন বছর আগে শাহাবুদ্দীন নাগরী খদ্দের হয়ে আসেন সুমীর জীবনে। তখন তারা সাধারণ একটি বাসায় বসবাস করতেন।
সুমীকে বিশেষ পছন্দ হয় শাহাবুদ্দীন নাগরীর। তিনি সুমীকে ভালো বাসায় ফ্লাট নিয়ে দেওয়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চালানোর বিনিময়ে অন্য খদ্দেরদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শাহাবুদ্দীন নাগরীর জন্য নির্ধারিত করেন। সেই মোতাবেক স্বামী স্ত্রীর সম্মতিতে গত তিনবছর চলছিল শাহাবুদ্দীন নাগরীর প্রেম।
গত এক বছর আগে তাদের বাসা পরিবর্তন করে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টে ৫ম তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে দেন। এই অ্যাপার্টমেন্টেই নিজ শয়নকক্ষে গত ১৩ এপ্রিল নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নুরুল ইসলামকে হত্যার বিষয়ে দু্জনে একেক সময় একক রকম কথা বলছেন বলে জানা গেছে। শাহাবুদ্দীন নাগরীর সাথে সুমীর মেলামেশায় বাধা না থাকার পরও কেন নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয় সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার হতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে এটি হত্যা না অন্যকিছু তা জানার জন্য ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন তারা।
এদিকে ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক বাবু কুমার স্বর্ণকারও পরিবর্তন ডটকমকে জানান, নিহত নুরুল ইসলামের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি উভয় অবস্থাতেই প্রায় প্রতিদিন বা রাতে শাহাবুদ্দীন নাগরী বাসায় আসতেন। মাঝেমধ্যে সপ্তাহে দুই একদিন বাদ গেলেও টানা প্রায় এক বছর এমন চিত্রই দেখা গেছে। বাসায় এসে তিনি দীর্ঘ সময় থাকতেন।
নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আজ রিমান্ডের তৃতীয় দিন। রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত বক্তব্য জানা যাবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সুমীর স্বামী কাজী নুরুল ইসলাম বেকার ছিলেন। তার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না। তার ওপর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক বাবু কুমার স্বর্ণকারও এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতলুবুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে জানান, গত ১৩ এপ্রিল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টে ৫ম তলায় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে তার নিজ বেডরুমের ফ্লোর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৪ এপ্রিল নিহত ব্যবসায়ীর বোন শাহানা রহমান কাজল বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমী (৩৫), স্ত্রীর বন্ধু মো. শাহাবুদ্দীন নাগরীসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে নিহতের স্ত্রী সুমী ও শাহাবুদ্দীন নাগরীকে গ্রেফতার করা হয়। একই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গাড়িচালক মো. সেলিম হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বর্তমানে শাহাবুদ্দীন নাগরী, সুমি ও তার গাড়িচালক সেলিম নিউমার্কেট থানায় ৫ দিনের রিমান্ডে আছেন।
শাহাবুদ্দীন নাগরী দেশের একজন পরিচিত কবি ও সাহিত্যিক। ১৯৯০-এর দশকে পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর কাছে সমাদর লাভ করেন।
পরিবর্তন