সিলেটপোস্ট রিপোর্ট ::এমন কি কখনও হয়েছে..? বহুদিনের পুরনো বন্ধুকে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আর দেখতে পেলেন ফেসবুকের পাতায় তার ছবি শোভা পাচ্ছে? আর ফেসবুক জানতে চাচ্ছে, ‘ইনি কি আপনার বন্ধু? তাহলে তাকে অ্যাড করুন!’ কিংবা বন্ধুদের প্রচুর পোষ্ট দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন, ঠিক তখনই পরবর্তী পোস্টে পেলেন মজাদার কোনো ভিডিও? ফলে মুহুর্তেই চলে গেল সব ক্লান্তি! কাকতালীয় বিষয় হলেও ব্যাপারটি কিন্তু অনেকের বেলাতেই ঘটে থাকে।
সম্প্রতি ফেসবুক জানিয়েছে, বিষয়টি একেবারে কাকতালীয় বলা ঠিক হবে না। কেননা, মানুষের চিন্তাভাবনা জানতে সংস্থাটি ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে। এজন্যে ফেসবুক ৬০ জন ব্যক্তিকে নিয়োগও দিয়েছে। যারা ব্যবহারকারীর চিন্তা ভাবনা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন।
সংস্থার লক্ষ্য অচিরেই এমন একটি প্রযুক্তি তারা তৈরি করবেন যা ব্যবহারকারীর মন-মানসিকতা সহজেই বুঝতে পারবে এবং সেই মোতাবেক পরামর্শ ও পোস্ট দেওয়া এবং দেখায় সাহায্য করবে। ভার্চুয়াল জগতে আপনি যেন একা বোধ না করেন সে লক্ষ্যেই পাশে দাঁড়াতে চায় ফেসবুক।
এই প্রকল্প সম্পর্কে বুধবার সংস্থার innovation skunkworks এর প্রধান রেজিনা ডুগান এফ ৮ সম্মেলনে বিষয়টি অবহিত করেন। সেখানে তিনি জানান, একসময় কম্পিউটারে সেফবুকের ব্যবহারকারী বেশি থাকলেও বর্তমানে মোবাইল ফোনে তা বেড়েছে।
তিনি জানান, ‘বিশ্বের অসংখ্য মানুষ এখন তার স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। বিশ্বের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে এমনভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেন যেন সে পাশেই রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত ফেসবুকের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে চান। শুধু তাই নয়, সেটি জানাতেও চান সবাইকে। এমন অবস্থায় নিন্দুকেরা বলছেন, ফেসবুক মানুষের মধ্যে আসক্তি তৈরি করছে।’
কিন্তু এই আসক্তি শব্দের কড়া সমালোচনা করে রেজিনা ডুগান বলেন, ‘কারও কারও কাছে ফেসবুক অষুধ হিসেবেও কাজ করতে পারে। কেননা পুরো বিষয়টি নির্ভর করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ব্যবহারের ওপর।’
তিনি জানান, ‘ফেসবুকের প্রসার এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে কখনও কখনও অনিচ্ছাকৃত ফলাফলও সামনে আসে। কিন্তু তাকে প্রতিহত করাটাই হচ্ছে আসল কথা। তাছাড়া মানুষ যেন অন্যায় ব্যবহারের মাধ্যমে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিকে বিপথে চালিত করতে না পারে সেজন্যেও ফেসবুক সদা তৎপর। আর সেকারণেই ফেসবুক প্রতিনিয়ত আধুনিক হচ্ছে এবং তার প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনছে।’
ডুগান বলেন, “ব্যবহারকারী ফেসবুক’কে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে তা জানতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। ফেসবুক এমন এক প্রযুক্তি নির্মাণ করতে চায় যা ব্যবহারকারীর মস্তিস্কের প্রবাহ ধরতে পারবে এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
ডুগান জানান, প্রযুক্তিটি গড়ে তুলতে ৬০ জনের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। এদের সঙ্গে রয়েছে প্রযুক্তিবিদ এবং মনস্তাত্ত্বিক গবেষকেরা। এই প্রকল্পকে বেগবান করতে বর্তমানে ফেসবুক মস্তিষ্ক সম্পর্কিত কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং স্নায়ুবিদ প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।
তবে মানুষের মন পড়াটাই প্রধান উদ্দেশ্য নয় বলে ফেসবুক জানিয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারী যেন দ্রুত এবং সহজে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে সেটিই মূল লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে। তারা এমনটাও চাচ্ছে যেন একজন ব্যবহারকারী মনের গতিতে ফেসবুকের পাতায় কোনো পোস্ট কিংবা কমেন্ট লিখতে পারেন।
শুনতে অসম্ভব শোনালেও ডুগান বলছেন, প্রতি মিনিটে এই শব্দ সংখ্যা হতে পারে একশ’টি। লিখতে গেলে সংখ্যাটি অসম্ভব শোনালেও মনের গতিতে এটি স্বাভাবিক বলেই জানিয়েছেন তিনি। কেননা লেখাটি চলে আসবে মনের ভেতর থেকে।
এছাড়া ফেসবুক এমন একটি সেন্সর তৈরির পরিকল্পনা করেছে যা মস্তিস্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখবে। এবং এর মাধ্যমে মস্তিস্কের যে গতি… সেই দ্রুততর গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংকেতগুলো শনাক্ত করবে এবং তার অর্থ উদ্ধার করবে।
এই প্রসঙ্গে ডুগান বলেন, বাস্তবে এমন কোনো প্রযু্ক্তি না থাকলেও আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভবের চেষ্টা চালাচ্ছি।