সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্ষমতা বাড়াতে পাঁচ ধরনের কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে জাতিসংঘ।
এর আওতায় আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রমের মানোন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং ভোটারদের সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনী সহিংসপ্রবণ এলাকা নির্ধারণ করে সেখানে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং আইন-বিধি (কোড অব কন্ডাক্ট) মেনে চলার বিষয়ে ইসির মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইসির স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি ইসিকে জানিয়েছে, একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রস্তুত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি ইসিকে কারিগরি সহায়তা দেয়ার এ প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ। নির্বাচন কমিশনের কারিগরি কমিটি জাতিসংঘের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর এ বিষয়ে প্রকল্প নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
মঙ্গলবার কমিশনের সর্বশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় জাতিসংঘের এ প্রস্তাব এজেন্ডা হিসেবে তুলেছিল কমিশন সচিবালয়।
নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, জাতিসংঘের কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য টেকনিক্যাল কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন কমিশন থেকে কারিগরি সহায়তা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক বিভাগের (ডিপিএ) ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স ডিভিশনের (ইএডি) একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল বাংলাদেশ সফর করে। দলটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্র্বাচন কমিশনারগণ, কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন
রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে। দলটি ঢাকার বাইরে মানিকগঞ্জে সফর করে। পরে তারা ফিরে গিয়ে জাতিসংঘে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ জাতিসংঘ অনুমোদন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ইসি শক্তিশালীকরণ একটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থছাড় বন্ধ করে দিয়েছিল ইউএনডিপি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন গঠনের পর ফের সহায়তার ঘোষণা দিল জাতিসংঘ।
জানা গেছে, জাতিসংঘের প্রস্তাবে ৫টি বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রথমেই ভোটার রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে- ভোটার তালিকা প্রণয়নে ইসির যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার লাইসেন্স ও বায়োমেট্রিক নেয়ার প্রক্রিয়া উন্নয়নে সহায়তা দেয়া হবে।
যাতে ভোটার রেজিস্ট্রেশন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত ইসির নিজস্ব শক্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ফান্ড ছাড়া নিজেরাই কাজ করতে পারে।
দ্বিতীয় প্রস্তাব হচ্ছে- জনসচেতনতা বাড়ানোর কৌশল, বিশেষ করে নারী ও যুবকদের মধ্যে ভোটার সংক্রান্ত শিক্ষা দেয়া ও আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা। তৃতীয়টি হচ্ছে- দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রশমন কৌশল তৈরি করা।
এর আওতায় সহিংসপ্রবণ জেলাগুলোতে সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক সম্প্রীতি ও সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনী সংঘাত বন্ধ এবং আইন-বিধি প্রতিপালনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করা।
সহিংসতার খবর ইসি যাতে দ্রুত পেয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে সেই কৌশলগত সহযোগিতা করা। চতুর্থত- জেন্ডার, জাতিগত ও সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় ইসির সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করা। পঞ্চমত- নির্বাচন কর্মকর্তা এবং নির্বাচনের স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ দেয়া।
প্রকল্পের বিষয়ে কমিশন সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় সংসদ ও প্রয়োজন হলে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচনপরবর্তী অর্জিত শিক্ষা এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা উন্নয়ন ও পেশাদারিত্ব বাড়াতে ইউএনডিপির প্রকল্পের মাধ্যমে জাতিসংঘ কারিগরি সহযোগিতা দিতে আগ্রহী।
ইউএন ওমেনসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও তহবিল ইউএনডিপির প্রকল্পে সহায়তা করবে। ২০১৮ সালের শুরু থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি বা শেষ অবধি পর্যন্ত ওই প্রকল্প পর্যায়ভিত্তিক চলবে।
প্রথম পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচন ও অর্জিত শিক্ষা নিয়ে কাজ করা হবে। প্রকল্পটি তৈরির জন্য জাতিসংঘের একটি টিম বাংলাদেশে নিয়োগ করা হবে।
ওই টিম বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন, দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স ডিভিশনের (ইএডি) পরামর্শ, কার্যপরিধি নির্ধারণ ও বাজেট নিরূপণ করবে।