সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়মিত খাবার গ্রহণের ফলে অ্যাসিডিটি (সাধারণভাবে আমরা ভেবে থাকি পেটে গ্যাস হওয়া) হয়। এই সমস্যায় কম-বেশি আমরা সবাই ভুগি। এতে আমাদের পাকস্থলিতে অতিরিক্ত বা ভারসাম্যহীন অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। ফলে গ্যাস, পেট ব্যথা, বমিবমি ভাব, মুখে দুর্গন্ধ বা আরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
তবে বেশি ঝালযুক্ত খাবার খাওয়া, দুঃচিন্তা, ব্যায়াম না করা বা অতিরিক্ত মদ্য পানের ফলেও অ্যাসিডিটি হতে পারে।
এই সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকেই আমরা ওষুধ খাওয়া শুরু করি । কিন্তু ওষুধ ছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধটিতেও অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
চলুন তাহলে জেনে নেই অ্যাসিডিটি নিরাময়ের ১১টি কৌশল :
গরম পানি: কুসুম কুসুম গরম পানি রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে পান করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দারুচিনি : হজম প্রক্রিয়ার জন্য খুবই ভালো একটি খাবার, এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা পেটের গ্যাস দূর করে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে ২/৩ বার গ্রহণ করুন। এছাড়া স্যুপ/সালাদের মধ্যে দিয়েও খেতে পারেন।
পুদিনা পাতা : এটি বায়ুনিরোধক ও প্রশান্তিদায়ক। ফলে বুক ও পেট জ্বালাপোড়া করা, পেট ফাঁপা ও বমি ভাব উপশম করে। তাই অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা দিলেই কয়েকটি পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এছাড়া চা বানিয়েও খেতে পারেন। এক কাপ পানিতে ৪/৫ টি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন বা চাইলে তাতে একটু মধুও যোগ করতে পারেন।
মাঠা : দিনের মধ্যে কয়েকবার শুধু মাঠা খেলে বা সাথে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়ো অথবা এক চা চামচ ধনেপাতার রস মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। অথবা আধা থেকে এক চা চামচ মেথি সামান্য পানিতে মিশিয়ে এক গ্লাস মাঠার সঙ্গে খেলে অ্যাসিডিটির পেট ব্যথা দূর হয়।
আপেল সাইডার ভিনেগার : এর ক্ষারধর্মী প্রভাব পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১-২ চা চামচ অশোধিত ভিনেগার এক কাপ জলে মিশিয়ে খাবার আগে বা দিনে এক বা দুবার খেতে পারেন।
লবঙ্গ : এর বায়ু নিরোধক ক্ষমতার জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি ও গ্যাস দূর করতে পারে। ২/৩ টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে বা সমপরিমান এলাচ ও লবঙ্গ গুঁড়ো খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
জিরা : হজমক্রিয়ায় চমৎকার কাজ করে জিরা। দেড়কাপ পানিতে এক চা চামচ করে জিরা, ধনে ও মৌরী গুঁড়া এবং সামান্য চিনি মিশিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন অথবা এক গ্লাস পানিতে সামান্য জিরার গুঁড়া মিশিয়ে বা ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিবেলা খাবার পর খেতে পারেন।
আদা : আদার রস পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি প্রশমিত করতে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটির সময় এক টুকরো আদা মুখে নিয়ে চুষলে বা এক কাপ পানিতে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে রেখে খেতে পারেন কিংবা শুধু এক চা চামচ করে আদার রস দিনে ২/৩ বার খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকবে না।
তালের গুড় : তালের গুড় পেটের হজমক্রিয়াকে ক্ষারধর্মী করে অ্যাসিডিটি কমায় এবং খাবারকে হজমে সাহায্য করে। প্রতিবেলা খাবার পর ছোট এক টুকরো গুড় মুখে নিয়ে চুষতে থাকবেন যতক্ষণ না অ্যাসিডিটির জ্বালা কমে। তবে ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।
মৌরী : পুদিনা পাতার মতো মৌরীরও রয়েছে বায়ু নিরোধক ক্ষমতা, যার ফলে খাবার হজম করতে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে এটা বেশ কার্যকরী। ভারী ও ঝাল খাবারের পর কিছু মৌরী মুখে দিয়ে চুষতে পারেন। আবার এক বা দুই চা চামচ মৌরী এক কাপ গরম পানিতে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ছেঁকে নিয়ে দিনে কয়েকবার খেতে পারেন।
ঠাণ্ডা দুধ : পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় দুধ। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরিতে বাধা দেয়। শুধুমাত্র এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করেই অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধ বা উপশম করা সম্ভব।
সাবধানতা
যখনই আপনি অ্যাসিডিটির সমস্যায় পড়বেন তখন এই পদ্ধতিগুলোর সাহায্য নিয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু যদি দেখেন ২/৩ দিন পরও পেট ঠিক হচ্ছে না তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
