সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::নানা কারণে এই মুহূর্তে সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম। সৌদি যুবরাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এবং লেবানন থেকে সৌদি নাগরিকদের সরিয়ে আনা ও দেশটিতে না যাওয়ার ঘোষণা এর মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরি। প্রাণভয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু লেবাননের শক্তিশালী গ্রুপ হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ হারিরিকে আটকে রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের এসব উদ্যোগ দেশটির যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। সেইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্তিশালী সৌদি আরব গড়ার পরিকল্পনারও অংশ এটি। আর এই মুর্হর্তে ইরান ও সৌদি আরবের কর্তৃত্ব প্রকাশের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে লেবানন।
আধিপত্যের যুদ্ধ, বিশেষ করে দীর্ঘদিনের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে ঠেকাতে সৌদি আরবের সর্বশেষ ভূমিকা হলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর রহস্যজনক রিয়াদে অবস্থান বা আটকে থাকা। বৈরুতের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক বেশ গভীর।
যদিও লেবাননের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী সুন্নি এবং সৌদি ও লেবাননের নাগরিক, কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট শিয়া সমর্থিত এবং হিজবুল্লাহর মিত্র। আর হিজবুল্লাহকে লেবাননে ইরানের বিকল্প মনে করা হয়। সম্প্রতি যৌথভাবে সরকার পরিচালনায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
আর সে কারণেই সৌদি আরব ও ইরান লেবাননের রাজনীতিতে গভীরভাবে মনোনিবেশ করে। কারণ দুই দেশই মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিজবুল্লাহ বেশ সফলতা অর্জন করেছে। আর সৌদি আরব এখন তা-ই করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরানের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি যে আচারণ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা অভূতপূর্ব।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির লেকচারার এবং মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে সৌদি আরব, বিষয়ক গবেষক বেন রিচ এবিসি নিউজকে বলেন, ‘বাদশা সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান তাদের দৃষ্টিতে ইরানের হুমকি মোকাবেলায় সম্প্রতি বেশ কিছু আক্রমণাত্মক ও সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি আরব কখনো দ্বন্দ্বে জড়ায়নি, এটাই তাদের স্টাইল। বরং দ্বন্দ্বে জড়ানোর পরিবর্তে তারা টাকা ছড়াতেন। কিন্তু বর্তমান যুবরাজ তার অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
কিন্তু সমস্যা হলো, শক্তিমত্তা কিংবা কৌশলগত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে রিয়াদের দীর্ঘদিনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেক্ষেত্রে, অস্ট্রেলিয়ার লোই ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক রজার শানাহান বলছেন, হারিরির পদত্যাগের ঘটনা হবে একটি পরিকল্পনারই অংশ। কিন্তু সেটা হিজবুল্লাহকে টার্গেট করে করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না, বলেন ওই গবেষক।
রজার বলছেন, ‘আমার মনে হয়, বিষয়টি আরো বড় কিছু হবে। তবে সেটা কী তা আমি জানি না। আর এটি যে ভালো চিন্তা সেটাও আমি নিশ্চিত না।’
বেন রিচও একই ধরনের কথা বলছেন। তার মতে, সৌদি যুবরাজ একটি বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছেন। যা ইরানকে বৃহত্তর পরিসরে মোকাবিলার অংশ হতে পারে। আর এটা এ জন্য মনে হচ্ছে যে, লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাধ্যমে রিয়াদ ইরান ও হিজবুল্লাহকে একটি বার্তা দিয়েছে।
এদিকে, লেবাননে যখন এই অবস্থা বিরাজ করছে তখন সৌদি যুবরাজ নিজ দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছেন এবং দেশের কয়েকশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রিচ বলছেন, ঐতিহ্যগতভাবেই সৌদি আরবে এলিটদের ঐকমত্যের সরকার চলেছে। কিন্তু বাদশা সালমান ও তার ছেলে (যুবরাজ) ভিন্ন মতে বিশ্বাসী। তারা ঐকমত্যের চেয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতেই আগ্রহী। আর সর্বশেষ পদক্ষেপগুলোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন যুবরাজ মোহাম্মাদ। তিনি দীর্ঘদিনের সিস্টেম ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন। আর তিনি জানেন যে, তিনি তুলনামূলক বয়সে কম। সুতরাং নিজের অবস্থান শক্ত করতে হলে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে হবে এবং যুবকদের আকৃষ্ট করতে হবে।
কিন্তু সৌদি আরব লেবাননে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিলো তার ফল কী হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি লেবাননের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল। কিন্তু সামরিক পদক্ষেপের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, হিজবুল্লাহ লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়েও শক্তিশালী। ‘সুতরাং সৌদি আরব সরাসরি লেবাননে আগ্রাসনের ক্ষমতা রাখে না,’ বলেন বেন রিচ।
বিশ্লেষক শানহানা বলেন, তারা (সৌদি আরব) একটি বার্তা দিচ্ছে, কিন্তু সে বার্তা কী তা আমরা জানি না। তাছাড়া এটি যে দূরদর্শী বার্তা তাও অনুমান করা যাচ্ছে না।