সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বর হত্যা মামলায় দুই আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা আবদুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। রায় কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের স্বজনরা।
প্রতিক্রিয়ায় মনোয়ার হোসেনের ছেলে কুমারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ২ আসামির ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি কয়েকদিন আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়। তবে দিনক্ষণ জানায়নি তারা।
জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, ‘দীর্ঘ ২৩ বছর পর পিতা হত্যার বিচার পাচ্ছি। অবশ্যই খুশি। আমার নিরপরাধ পিতাকে হত্যার পর কত হুমকি সহ্য করেছি। নিজেদের জীবন বাঁচাতে খুনিদের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছে। তবু শাস্তি কার্যকর হওয়ায় আমরা খুশি।’
মনোয়ারের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, ‘এক সময় বছরের পর বছর আমরা চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। তার দরবারে হাজার শুকরিয়া। খুনি দু’জনের ফাঁসি কার্যকর হল। এখন খুনির আত্মীয়দের কান্নার পালা।’
নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বলেন, এক সঙ্গে দু’ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কত স্মৃতি আছে আমাদের। সেই ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণ প্রিয় ভাইকে হারিয়ে নীরবে-নিভৃতে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি। বিলম্বিত বিচার অবিচারের সামিল। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার না পেয়ে কত অসহায় হয়ে চোখের জল ফেলেছি তা কাউকে বোঝাতে পারব না। দু’যুগ পরে হলেও খুনিদের ফাঁসি হওয়ার সংবাদ শুনে ভালো লাগছে।’
আদালত ও পুলিশ সূত্র মতে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মণ্ডলের মেঝো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দ্দারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে গোলাম রসুল ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিলসূত্রে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ২ জন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দণ্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে।
মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কৃতি খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভারতের পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলেও তিনি হায়ারে হা-ডু-ডু খেলেছেন।