সংবাদ শিরোনাম
১ মন গাঁজাসহ সিলেটের ৩ কারবারি নবীগঞ্জে আটক  » «   প্রবীণের বুদ্ধি নবীনের শক্তির সমন্বয়ে সমাজের অন্যায় অবিচার দূর করতে হবে-জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান  » «   জৈন্তাপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের মাসিক প্রেস-ব্রিফিং  » «   গোয়াইনঘাটে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু  » «   যাদুকাটায় নৌকা ডুবে পাথর শ্রমিকের মৃত্যু  » «   দোয়ারাবাজারে অবৈধ ভাবে বসত ঘরসহ দোকান পার্ট নির্মান ও রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ  » «   সিলেটে জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা  » «   সিলেটে তালামীযে ইসলামিয়ার মীলাদুন্নবী (সা.) র‍্যালি অনুষ্ঠিত  » «   দক্ষ জনশক্তি দেশ বিদেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখবে-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  » «   খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে-নাসিম হোসাইন  » «   দোয়ারাবাজারে ভারতীয় চিনিসহ আটক ২    » «   দোয়ারাবাজারে চোরাইপথে আসা ভারতীয় ৩৬ গরুসহ আটক ৮  » «   চুনারুঘাটে বানের পানির মত আসছে বিভিন্ন প্রকার মাদক  » «   জামালগঞ্জের শান্তিপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিষপান,তিন সন্তানের মৃত্যু,স্বামী আটক  » «   বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না : খন্দকার মুক্তাদির  » «  

অতি সামান্য অংক

9লাজ্বাতুল কাওনাইন:একটা সরকারী ব্যাংকে গিয়েছি টাকা পয়সা সংক্রান্ত কাজে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়েই গিয়েছি। আমি সাধারণত সরকারী ব্যাংক এড়িয়ে চলি। না না আমাকে ভুল বুঝলেও কোনো লাভ হবে না। এই সরকারী ব্যাংকগুলোর ব্রিটিশ আমলের রুলস মার্কা চক্করে পড়লে একদিন কেন! কোনো কোনো দিন দু ‘চার দিন টানা আপনার সময় নষ্ট হবে সাথে বিভিন্ন ডেস্কে, বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ভাবসে আপনার ধৈর্য হারা হবার ও একটা সুযোগ থেকেই যাবে। আবার আছে বিশাল লম্বা লাইন, সাথে অফিসারদের কিছু ঢিলতালের কাজ, খোশগল্প, চা পান ইত্যাদি কত কি! বলছি না সবাই এমন, তবে প্রায় চল্লিশে পৌঁছে কম ও আবার ঝাক্কি পোহাই নি।

যাক শেষদিনের প্রসঙ্গতেই ফিরি। ঢুকেই অনুসন্ধানে প্রশ্ন করলাম, এই কাজের জন্য কোথায় যাবো। হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলেন দিক। অর্থাৎ ওই দিকে বহু ডেস্ক কোনটা আবার গিয়ে জিজ্ঞেস করো আর কি! যাক গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, একজন আবার হাত দিয়ে নির্দিষ্ট দিক দেখিয়ে দিলেন। গেলেম সেই আশান্বিত ডেস্কে। অফিসার কম্পিউটারে কাজ করছেন, দারুণ ব্যস্ত। তাকালেন না। বললেন, “কাগজ রাখেন। আর কোনো কথা নেই। কোথা থেকে দৌড়ে পিয়ন গোছের একজন বললো, আপা আমাকে দিন এইভাবে তো কাজ করতে দুইদিন লাগবে। আমি ছাড়া আপনার কাজ হবে না। বেশ তাড়া আছে। ছেলের স্কুলে ছুটির আগেই আমাকে ওর স্কুলে পৌঁছতে হবে। আমি বললাম, জ্বী আচ্ছা। পিয়ন বললো,

-“এইখানেই বসে থাকেন। নড়বেন না। নড়লেই অন্য কেউ কাজ করবে আপনার আগে।” আরেক জন অফিসের লোক এসে আমাকে ডেস্কের সামনে বসা দেখে সরাসরি বললেন, -উঠেন, যান ওইদিকে সোফাতে বসেন। এইখানে কাজে দেরি হবে।

বলেই তার হাতের কাগজ কিছু ডেস্কের অফিসারকে দিয়ে বললেন, আমার গুলো আগে করেন! আহত আমি কিত্তাম কন্ডিশন। তবু মনে হলো আমাকে নির্লজ্জ না হই এই মূহুর্তে বেহায়া হতেই হবে। তাকে প্রশ্ন করলাম, ভাই দেরি হবে কেন? আমার কাগজের সিরিয়াল তো এসেই গেছে। উনি আরো বাজে ভাবে বললেন, আরে সব নামাজে, কই কি কাজ করবেন? এই ডেস্কের পর আরো কয়টা ডেস্কে যেতে হবে জানেন? কেউ নাই।
বললাম, ভাই এখনো তো নামাজের বিরতি হয় নাই মাত্র পৌঁনে একটা বাজে।

উনি তীব্র চিৎকারে বলে বসলেন, ওই মিয়া আপনে নামাজ পড়েন যে নামাজের সময় হইসে না হয়নি বুঝবেন! মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
বললাম, আপনি জানেন নাকি আমি নামাজ পড়ি নাকি পড়ি না? উনি না শুনেই নায়ক স্টাইলে ঘুরে চলে গেলেন। আমি ডেস্ক অফিসারকে বললাম, আমি অভিযোগ কাকে দিবো উনার বিরুদ্ধে? উনি বললেন, হুরো আপা মাথা ঠান্ডা রাখেন।

এতো মানুষ অফিসে কাজ করছে, কারো ভিতর কোনো বিকার নেই মানে, এটা একটা রূঢ় অফিসার আর খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাক সে অধ্যায়। এবার আবার আসি পিয়ন প্রসঙ্গে, এই পিয়নের দেখলাম আমার প্রয়োজনীয় প্রতি ডেস্কের সবার সাথে অতি গোপন খাতির আর তাড়া দিয়ে আমি সহ মোট চারজনের কাজ ছুটেছুটে করে দিচ্ছে। বুঝলাম, এই লোককে মাধ্যম না করলে আমার কাজ হবে গাছ। তাতে শিকড় ও গজাবে তবু ফল হবে না। সো পিয়ন ভাই বেঁচে থাক। এই “মাধ্যমিক” কাজ শেষ হতে লেগেছিলো প্রায় আড়াই ঘন্টা।

অথচ নিয়মমাফিক হলে এটা অনেক সহজ আর এতো সময় মোটেও লাগবার কথা ছিলো না। আর অনিয়মমাফিকেই এই সময় লাগলো আর নিয়ম মাফিক সময় টা হয়তো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তো। আল্লাহ বাঁচালো। আমার সাথের এক ভদ্রমহিলাকে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম,
-আপনি কি নিয়মিত আসেন?
-হুম।
-এই পিয়নকে দিয়েই কাজ করান?
– হুম।
-কত দিতে লাগে?
-এই ১০০ এর মতো।
-হুম!
কাজ শেষে আমি পিয়নকে ১০০ টাকা দিলাম। সে হা করে তাকিয়ে আছে! এতো কম! বললাম,
-এই তো।
-আরে নাহ! আরো বাড়ায় দেন….ডেস্কের স্যারদের দিতে হবে। আমার তো আর কিছুই থাকবো না।
-ভাই এবার এটাই রাখেন।

বলে বের হয়ে আসলাম! কথা হলো, বলতে পারেন আপনি কেন ঘুষ দিলেন? আপনিও তো সমান অপরাধী! ঠিক আমিও অপরাধী, স্বীকার করছি এবং আমি দুঃখিত খুব। কিন্তু আমি ছোট অপরাধী এবং পরিস্থিতির স্বীকার অপরাধী। আর সেই পিয়নটা হলো শুধুমাত্র বড়শি। এদের পিছনে আছে সুন্দর হাসিমাখা পোশাকি বিশাল সুশৃঙ্খল অপরাধী বাহিনী! এরা অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে। এটা তো শুধু একটা খাত। এমন হাজারো খাত থেকে প্রতিদিন আরো বিশাল বিশাল অংকের ঘুষ আদান প্রদান হচ্ছে। সেখানে পিয়নগুলোর উপর আমরা বিরক্ত কিন্তু বাজে অনিয়ম আর সময়ের প্যাঁচে পড়ে আমরাও কি কিছুটা বাধ্য না এই সিস্টেমে ঢুকতে।

একা আমি ঘুষ দিবো না, নীতিবানের মতো দু’দিন ঘুরবো, এমন ভালো মানুষ আসলেও সমাজে আছে, যাদের আমি জানি, চিনি! কিন্তু আমি এমন ভালো কিছু নই। বড় বড় ঘুষখোরদের তো আমরা আরো সমাদর করি। কার্পেটিং সমাদর যাকে বলে, গালি দেই বড়শি গুলোকে আর দরদাম করি নিজের নীতির সাথে। কি করার আছে আমাদের এই অনিয়মগুলোকে মেনে নেওয়া ছাড়া! আমরা ঠিক অসহায় নই কিন্তু অসহায় করতে আর হতে আমরা খুবই পছন্দ করি। জাতি হিসেবে গর্বের পাল্লাটা আবার যেনো উপর দিকে না উঠে যায় সেই খেয়াল হয়তো রাখার সময়টাও চলে যাচ্ছে। ভাল থাকবেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.