সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩টি গাড়ি গায়েব হওয়ার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদনে সিসিক কর্মকর্তার যোগসাজশে অস্থায়ী কার্যালয়ে গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়িগুলো কেটে বাইরে পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে।
সিসিকে তিনটি গাড়ি চুরি হয়েছে নাকি সিসিক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিয়েছেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গাড়ি তিনটি গায়েব হওয়ার প্রায় এক মাস পর থানায় জিডি করা হয়!
সিসিক মেয়রের দাবি, অকেজো গাড়িগুলো ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ থেকে যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তবে জিডি দায়েরকারী সিসিকের উপ-সহকারি প্রকৌশলী বলছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। পুলিশও বলছে, গাড়িগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরস্পরবিরোধী এমন বক্তব্য নিয়ে চলছে তোলপাড়।
জানা গেছে, নতুন ভবন নির্মাণকাজের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীর তোপখানাস্থ পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারে নিজেদের অস্থায়ী কার্যক্রম চালায়। এই অস্থায়ী কার্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের কোনায় সিসিকের তিনটি গাড়ি রাখা ছিল। এ গাড়ি তিনটির নং হচ্ছে- সিলেট ব-৬১৪৮, সিলেট ট-৫৪১০ ও সিলেট ঘ-০২-০০৪৮। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে গাড়িগুলোর কোনো হদিস মেলেনি। অথচ থানায় জিডি (নং-১৯৪৯) দায়ের করা হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর। সিসিকের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. জাবেরুল ইসলাম এই জিডি করেন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে অফিসে তিনটি অকেজো গাড়ি যথাস্থানে দেখতে পাননি। খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে থানায় জিডি করছি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের তিনটি অব্যবহৃত গাড়ি গায়েব হওয়ার ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের পাশাপাশি কোতোয়ালি থানার জিডি তদন্তের আদেশ চেয়ে গত ১ নভেম্বর সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে আবেদন করেন কোতোয়ালি পুলিশের এসআই বেনু চন্দ্র। আদালতের নির্দেশে তিনি তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে গত রোববার আদালতে দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের ভেতরে গাড়িগুলো দেখাশুনার দায়িত্বে পাহারাদার হিসেবে নিউ লাইফ সিকিউরিটি কোম্পানির সিকিউরিটির জৈন্তাপুর উপজেলার মৃত নুর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ। গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে সাড়ে ১২ টায় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান কয়েকজন লোক নিয়ে পুরাতন ৩টি ট্রাক পাবলিক লেবারের মাধ্যমে গ্যাস দিয়ে কাটিয়ে ২টি বেসরকারী ট্রাক দিয়ে সিটি করপোরেশনের মেইন গেইট দিয়ে নিয়ে যান বলে জানিয়েছে আব্দুল্লাহ। ৩টি অকেজ পুরাতন গাড়ি চুরির এ বিষয়ে এসআই বেনু চন্দ্র সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৩টি গাড়ির অংশ বিশেষ ডাম্পিংয়ের জন্য সরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোথায় রাখা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, দিনের পর দিন পড়ে থাকার সুযোগে করপোরেশনের পরিবহন শাখার একটি চক্র ওই গাড়িগুলো থেকে মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে বিক্রি করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় তিনটি গাড়ি গায়েবের কথা উল্লেখ করে জিডি করা হয়। এর একমাস পর ওই জিডি তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সত্যতা স্বীকার করেছেন।