সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::খালেদা জিয়াএকাদশ জাতীয় সংসদ ও ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের বার্তা নিয়ে সারাদেশ চষে বেড়াবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আসন্ন রংপুর সিটি নির্বাচনে গণসংযোগের মাধ্যমে এই প্রচারণা শুরম্ন করবেন তিনি। পরবর্তীতে বাকি পাঁচ সিটি করপোরেশন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় নির্বাচনের আগাম প্রচারণা চালাবেন তিনি। এভাবে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত্ম গণসংযোগের কর্মসূচি ও আলোচনার মাধ্যমে শান্ত্মিপূর্ণভাবে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করতে চায় বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে কাজ না হলে রাজপথের কঠোর আন্দোলনে যাবে দলটি।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর ও ঢাকায় সমাবেশহ সম্প্রতি তিনটি কর্মসূচিতে প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি দেশে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। জনসম্পৃক্ত এসব কর্মসূচি ছিল দেশের সর্বস্ত্মরের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। এজন্যই শুধু নেতাকর্মীরা নন, সারাদেশের মানুষই উজ্জীবিত। আর জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার সঙ্গে আছে বিএনপি এ বিষয়টি দেশব্যাপী জানান দিতে এবং আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে অবস্থান নিতে সারাদেশ চষে বেড়াবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ছয়টি সিটি করপোরেশনসহ একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে বিএনপি প্রধানের সফরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সংশিস্নষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, দলীয় প্রধানের প্রতিটি সফরে যাতে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়, তেমন ব্যবস্থা করতে।
সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকেও বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বিএনপি। ছয় সিটিতে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিএনপি মনে করে, সিটি নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে। তাই ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার আনতে খোদ দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নিজেই মাঠে নামবেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বস্ত্মরের মানুষের ভোট চাইবেন।
উলেস্নখ্য, আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। এরই মধ্যে এই নির্বাচনে রংপুর মহানগর বিএনপির সহসভাপতি কাওসার জামান (বাবলা) মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে সমন্বয় করতে স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের নেতৃত্ব ২-১ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণাও শুরম্ন হবে। আর এই প্রচারণায় অংশ নিতে সুবিধামতো সময়ে রংপুর যাবেন খালেদা জিয়া। পর্যায়ক্রমে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সময়েও প্রচারণায় অংশ নিবেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার দেশব্যাপী সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি যাত্রাপথের জেলাগুলোতে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য জনসংযোগ করে জানান দেয়া সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির বিজয় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। আর নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এদিকে আগামী মাসে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ:) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে খালেদা জিয়া বিভাগীয় সফর শুরম্ন করবেন বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে খালেদা জিয়া সিলেট সফর করবেন। সেখানে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ হবে।
সিলেট সিটি নির্বাচনের বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী জানান, আগামী বছরের মার্চে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে ইতোমধ্যে মেয়র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, শান্ত্মিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বিএনপি। তারা চায়, নির্বাচন নিয়ে সরকার বিএনপির সঙ্গে একটি সংলাপ-সমঝোতায় আসুক। সংলাপের পথ খোলা রেখেই বিএনপি সারাদেশে শান্ত্মিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করবে। এখনো সহিংস কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত্ম রয়েছে তাদের। দেশব্যাপী সফরে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও জনদাবি তুলে ধরবেন বেগম খালেদা জিয়া।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আগামী ২ ফেব্রম্নয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরম্ন হয়ে তা মার্চের প্রথমভাগে শেষ হবে। আর এর পরপরই এইচএসসি পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ সময়টুকু বাদ দিয়ে এপ্রিলের শেষভাগ থেকে কর্মসূচি সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর আগে খালেদা জিয়া আরেক দফা জেলায় জেলায় জনসভা করার চেষ্টা করবেন। এ কর্মসূচিতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন ইসু্যটিই সর্বোচ্চ গুরম্নত্ব পাবে। আর এ কর্মসূচি শেষে ঢাকায় সমাবেশ করে সরকারকে শেষ আল্টিমেটাম দেয়া হবে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানা পর্যন্ত্ম হরতাল অবরোধসহ কঠোর যত কর্মসূচি চলবে।