সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::আগামী নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরকার গঠনে ভাগ্য নিয়ন্ত্রনকারী আসন বলে পরিচিত সিলেট-১ আসনটি ঘিরে জল্পনা-কল্পনা ডালপালা মেলছে। কেউ বলছেন বার্ধক্যজনিত কারনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবার নির্বাচন না করার সম্ভাবনা্ই বেশি। তিনি সে রকম ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন ইতোপুর্বে।
যদিও সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই তিনি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বলেছেন, তিনি আবারো নির্বাচন করতে পারেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী।এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান আগে সিরিয়াস প্রার্থী হলেও, বর্তমানে তেমন সিরিয়াস প্রার্থী বলে মনে হয়না। কেননা, সিটি মেয়র পদে তাঁর মনোনয়ন প্রায় চুড়ান্তই বলা যায়। ড. মোমেন সাহেব তো আছেনই এবং অর্থমন্ত্রীর বিকল্প হিসেবে উনার নামই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ড. একেএম মোমেন তাঁর আপন বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঠিক ও উপযুক্ত বিকল্প কি না?
আমার বিবেচনায় না, তিনি বিকল্প নন্। ‘বাসর রাতে বিড়াল মারা’ প্রবাদটির মত, শুরুতেই তিনি সে ইমেজ তৈরি করতে পারেননি।বরং যত দিনি যাচ্ছে মনে হচ্ছে তিনি ধীরে ধীরে আরো নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছেন।তাঁর বিভিন্ন সম্ভাবনা ভেস্তে যাবার পর, জনমনে একটা ধারণার সৃষ্টি হতে শুরু করেছে, তাঁকে হয়তো এ পদগুলোর জন্য বিবেচিত মনে হয়নি কিংবা তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি। তারপরও মুহিত সাহেব যদি নির্বাচন করতে না চান, তাহলে মোমেন সাহেবই নৌকার কান্ডারি হবেন তা অনেকটাই নিশ্চিত বলেই ধারণা করছেন বিজ্ঞজনেরা। তাঁকে অর্থমন্ত্রীর বিকল্প ভাবার কারণ হলো, এ পর্যন্ত অন্যকোন কার্যকর বিকল্প সৃষ্টি হয়নি বলে। এখন যারা নিজেকে বিকল্প হিসেবে ভাবছেন তাঁরা আদৌ বিকল্প নন।
বদরুদ্দিন কামরানের কথাই যদি আমরা বিবেচনায় নেই তাহলে, দুটি কারনে কামরান সাহেব বিকল্প হিসেবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। এক-তাঁকে নাকি আগামী সিটি নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৈরি হতে নির্দদেশ দেয়া হয়েছে। যদি তা্ই হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে তার প্রার্থী হবার সম্ভাবনা নেই। দুই-যদি তিনি সিটি নির্বাচনে কোন কারনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন, তবুও মুহিত সাহেবের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে জিতে আসা কঠিন হবে। কেননা, গত সিটি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারনে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও, নীতিহীন শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতি করার অভিযোগ রয়েছে। বাজারে প্রচলিত কথা হচ্ছে, তিনি নাকি ভোটের জন্য জামাতের সাথেও আঁতাত করতে কুন্ঠাবোধ করেন না। আরো অন্যান্য বিষয়গুলো তো আছেই।
আসি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের কথায়। তিনি রাজপথের পোড় খাওয়া লড়াকু একজন রাজনৈতিক কর্মী। আছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। তিনি দলীয় সভানেত্রীর শতভাগ বিশ্বস্ত বলে বাজারে গুজব আছে। যার কারনে তিনি, তিন তিনবার একটানা সাংগঠনিক সম্পাদকের পদটি ধরে রেখেছেন। এই পদকে কাজে লাগিয়ে হয়তো তিনি হতে পারতেন জাতীয় পর্যায়ের নেতা। আজকে সিলেট অঞ্চলের আওয়ামী পরিবারকে বিকল্পের সন্ধানে হেয়ারি প্রার্থীর খোঁজ করতে হত না। কিন্তু মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তৈরির দিকে মনোযোগি না হয়ে, মনোযোগি হয়েছেন অর্থ উপার্জনে। যা তার ভবিষৎ রাজনৈতিক জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। শুধুমাত্র একটিমাত্র কারনেই তিনি সিলেট-১ আসন কেনো, কোন আসনেই প্রার্থী হতে বেগ পেতে হবে। তবে সিলেট-১ আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন না এবং পেলেও তিনি জিতে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
মুহিত সাহেবের অবর্তমানে সিলেট-১ আসনে যথাযথ বিকল্প হিসেবে যার সম্ভাবনা ছিলো, তিনি হলেন সুলতান মনসুর। কিন্তু ১/১১-এ সংস্কারবাদি সাজা এবং পরবর্তীতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ ও দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হবার কারনে তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে গৌন হয়ে যান। তারপর ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার কারনে আজ তাঁর রাজনৈতিক জীবনই হুমকির সম্মুখিন। দলীয় রাজনীতি থেকে কক্ষচ্যুতির পরও সুলতান মনসুরের জনপ্রিয়তা এখনো অনেকের চেয়ে বেশি। এখন তিনি যদি আত্মম্বরিতা ত্যাগ করে, আবারো রাজনপথের কর্মী সাজতে পারেন এবং নিজের ভুল স্বীকার করে, দলীয় সভানেত্রীর শরনাপন্ন হতে পারেন এবং নেত্রী যদি তাঁকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে দলীয় রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। যদিও সে সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। তবে মিরাকল বলে একটা কথা আছে না?
সুতরাং সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায়, বর্তমানে এবং আগামীতেও মুহিত সাহেবের বিকল্প হিসেবে ড. মোমেনের বিকল্প নেই। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে মুহিত সাহেব প্রার্থী না হয়ে যদি তাঁর ভাই মোমেন সাহেব প্রার্থী হন তাহলে জিতে আসা কঠিন হবে। এমনকি আম-ছালা দুটোই যেতে পারে। কেননা, ডঃ মোমেন এবারের নির্বাচনের জন্য মোটেই বিকল্প প্রার্থী নন। আবুল মাল মুহিত বার্ধক্যজনিত অবস্থা এমন নয় যে, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। দলীয় স্বার্থেই তাঁর প্রার্থী হওয়া জরুরী। এবং মর্যাদাপুর্ন আসনটিতে আওয়ামী লীগকে আবারো জয়ের স্বাদ একমাত্র তিনিই দিতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, যদি আপন ভাইকে আগামীতে নিজের বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে চান, তাহলে আগামী নির্বাচনে এবং সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে অধিকতর সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করার চেষ্টা করতে পারেন। এমনকি আগামী নির্বাচনে তিনি যদি প্রার্থী হন এবং সে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব যদি ড. মোমেনের ওপর অর্পিত হয় তাহলে তিনি নির্বাচন ও রাজনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। দলের নেতাকর্মী ও জনগনের সাথে তাঁর যোগসুত্র ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। যা আওয়ামী লীগ এবং তাঁর জন্যও সুফল বয়ে আনবে। মনে রাখতে হবে রাজনীতি, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে হলে জনগনের সাথে হৃদয়ের বন্ধন সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই।
পুনশ্চঃ অনেকের মতো হায়ারি প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করার পক্ষপাতি আমিও নই। কিন্তু মাঠ থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক কর্মীরা যদি নিজেদের যোগ্যতা প্রমানে ব্যর্থ হন কিংবা বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে না পারেন, তাহলে মাঠের কর্মীদের পাশ কাটিয়ে কেউ যদি শুন্যস্থান পুরনে এগিয়ে আসেন তাহলে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় আছে কি?
(আগামীকাল সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগে নতুন মেরুকরণঃ ভিত্তি কি এবং স্থায়িত্ব কতদিন?)
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)