সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::৭ই মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এসব চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে গেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাঝারির সারির কিছু কর্মকর্তার নাম। এছাড়া সিনিয়র কর্মকর্তাদেরও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, শোভাযাত্রার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিনিয়র কর্মকর্তার কাছে শোভাযাত্রা উপলক্ষ্যে তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়। কথা ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে ওই অর্থ বরাদ্দ দেবেন তিনি। কিন্তু কিছু খরচ ছাড়া ওই অর্থের সিংহভাগই নিজের পকেটে রেখে দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
এখন বলছেন, মাত্র কয়েক লাখ টাকা আছে।
বাকি সবই খরচ হয়ে গেছে। এ নিয়ে গতকাল সারা দিন দেশের প্রশাসনযন্ত্র সচিবালয়ে সরস আলোচনা ছিল। এছাড়া ওই কর্মকর্তার তার স্ত্রীকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, স্টেজে উঠানোর চেষ্টাসহ নানা কিছু সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, আনন্দ শোভাযাত্রা কোন পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিল না। তাই এমন একটি অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাজির হওয়া সত্যিই বেমানান। এদিকে শোভাযাত্রায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হাতি ও ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়। এছাড়া কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রঙ-বেরঙের টিশার্ট পরেন। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এক্ষেত্রে বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর বেশ ভালভাবে সহায়তা দেয়। আনন্দ শোভাযাত্রার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আনন্দ শোভযাত্রার মূল দায়িত্বে ছিল মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। কিন্তু চিঠি জারি ছাড়া মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ বেশি কিছু করেনি। আমন্ত্রণপত্রে ছিল সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার বজলুল করিম চৌধুরীর নাম। এ নিয়েও কানাঘুষার কথা শোনা যায়। এছাড়া শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে। আবার কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভূরিভোজ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকারসহ বড় মন্ত্রণালয়গুলোতে ছিল টাকার ছড়াছড়ি। এসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার বা স্টেকহোল্ডাররা অর্থের বেশিরভাগ যোগান দিয়েছেন। একটি বড় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তরে উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেন এমন এক ঠিকাদার জানান, মন্ত্রণালয়ের মাঝারি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা ফোন করে আমার কাছে অর্থ চান। বলেন, আনন্দ শোভাযাত্রায় আমাদের অনেক খরচ আছে। আপনাকে এসব খরচ মেটাতে হবে। তার এসব কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকি। কিছু বলতে পারছিলাম না। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগে থেকে ঘোষণা না থাকায় মোবাইল নিয়ে সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশে ঝামেলার মুখে পড়েন তারা। এজন্য অনেকে বাড়ী ফিরে যান। তবে সোহরোয়ার্দী উদ্যানে দেয়াল টপকিয়ে সরকারি কর্মচারিদের প্রবেশের ঘটনা ঘটার পর প্রবেশ মুখে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়। এরপর সন্ধ্যার আগেই সোহরোওয়ার্দীর প্রোগ্রাম শেষ করা হয়। এর আগে গত ২১ শে নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. সাজজাদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আনন্দ শোভাযাত্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক উপস্থিতির নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি লাভের অসামান্য অর্জনকে আগামী ২৫শে নভেম্বর ঢাকা মহানগরসহ সকল জেলা ও উপজেলায় ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র মাধ্যমে উদযাপনের কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। বর্ণাঢ্য, আকর্ষণীয় ও সর্বাঙ্গীন সুন্দরভাবে উক্ত কর্মসূচি একযোগে সারা দেশে উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই কর্মসূচি উদযাপনের জন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের ঢাকায় অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হয়। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্দেশনার চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং সব বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়। এর আগে গত মাসের শেষ দিকে বিভিন্ন দেশের আরও ৭৭ টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ভাষণকেও ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে নেয় ইউনেস্কো।