সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থে চার লেন করা হবে সিলেট-তামাবিল সড়ক। এতে প্রকল্প দুটির জন্য জমি অধিগ্রহণে পৃথক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। আর এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে এ-সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) জমা দেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এতে বলা হয়, ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ২৮২ দশমিক ১২ কিলোমিটার। এর উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে। এজন্য ভূমির প্রয়োজন হবে ৯৯০ দশমিক ২৭ একর বা ৪০০ দশমিক ৯২ হেক্টর।
ডিপিপির তথ্যমতে, ৯৯০ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় ধরা হয়েছে আরও ৪৫০ কোটি টাকা। এর বাইরে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি ৯১ কোটি ১৮ ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি ৩৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
দুই বছর মেয়াদি বিনিয়োগ প্রকল্পটি আগামী বছর শুরু হবে। চার লেন নির্মাণে বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ সহজ করা ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অর্থে আগেই জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জমির সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এনজিও নিয়োগ করা হবে।
জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান বলেন, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনায় এডিবির সহায়তায় পরিচালিত টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স ফর সাব-রিজিওন্যাল ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটির আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল সুইডেনের হাইফ্যাব ইন্টারন্যাশনাল। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করা হবে। পাশাপাশি মূল চার লেন নির্মাণে দ্রুত বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটএ ছয় জেলায় জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জমির পরিমাণ যথাক্রমে ১৯ দশমিক শূন্য আট, ১০৫ দশমিক ২০, আট দশমিক ৭০, ৫৮ দশমিক ৪৪, ২৯০ দশমিক ২০, ৯ দশমিক ৬০ ও ৪৯৯ দশমিক ৭০ একর।
জমি অধিগ্রহণে চলমান ও শেষ হওয়া দুটি প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ডিপিপিতে। এতে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল চার লেনের জমি অধিগ্রহণে প্রতি হেক্টর জমির দাম ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর চলমান এলেঙ্গা-রংপুর চার লেনে প্রতি হেক্টর জমির দাম ধরা হয়েছে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া শেষ হওয়ায় জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেনে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছিল হেক্টরপ্রতি ৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
ভূমি অধিগ্রহণে জমির মূল্য তিনগুণ ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে। আর পুনর্বাসনে ২০১৪ সালের প্রাক্কলনের দুইগুণ ব্যয় ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক বলেন, দেরিতে হলেও এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। কারণ মহাসড়কের পাশগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। বহুতল ভবন উঠে যাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে জমি অধিগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে। আরও আগেই এ উদ্যোগটি নেওয়া উচিত ছিল। শুধু এ মহাসড়কের ক্ষেত্রেই নয়, সারা দেশের অন্য সব মহাসড়কও ক্রমান্বয়ে চার লেনে উন্নীতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।
উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট ২২৬ কিলোমিটার জিটুজি ভিত্তিতে চার লেন নির্মাণে সম্মত হয়েছে চায়না হারবার। এক্ষেত্রে ১৪ হাজার ৫৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রস্তাব করেছে সওজ। তবে এখনও প্রকল্পটির ডিপিপি চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া সিলেট-তামাবিল চার লেনের ডিপিপিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।