শিপন আহমদ, ওসমানীনগর ::পল্লী বিদ্যুতের অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজেশে ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামবাসী সম্প্রতি ‘বিদ্যুৎ বিলাসে’ মেতে ওঠেছেন। একটি গ্রামের দুইশত গ্রাহকের জন্য দু’দিক থেকে সরকারী অর্থায়নে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথক বিদ্যুতের লাইন টেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
গ্রামবাসীকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে একটি লাইনই যথেষ্ট। কিন্তু সেখানে পল্লী বিদ্যুতের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কালো টাকায় প্রভাবিত হয়ে বিশাল দুরত্ব অতিক্রম করে দু’টি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের ফলে সরকারের অতিরিক্ত প্রায় কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিলেট গোটাটিকর অফিস এবং এর আওতাধীন কাশিকাপন (বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) জোনাল অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে। এমনকি গ্রামবাসীকে উস্কানী দিয়ে গ্রামে পৃথক বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করতে এবং গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আর্থিক ফায়দা নিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সিনিয়র ও স্থানীয় নেতারা মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গ্রামের দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তার উন্নয়ন ও এই রাস্তার মধ্যস্থানে একটি ব্রিজ নির্মানে অর্থায়ন করতে কেউ আগ্রহী নয়। এর মধ্যে কালো টাকার বিনিময়ে ও সরকারী অর্থায়নে গ্রামে পৃথক দু’টি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন বিলাসিতা বৈধ কিছু নয় এমন মন্তব্য স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মজলিশপুর গ্রামবাসীর বিদ্যুৎ পাওয়ার দাবি ছিল দির্ঘদিনের। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে গ্রামের বাবুল মিয়ার নেতৃত্বে একই ইউনিয়নের মীর্জা সৈয়দপুর এলাকা থেকে সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মাধ্যমে প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘের বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শুরু করেন। বর্ষা মৌসুম বিরতি দিয়ে সম্প্রতি পুনরায় বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কথিপয় কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে গ্রামের রফিক মিয়ার নেতৃত্বে মাস দেড়েক আগ থেকে একই ইউনিয়নের হামতনপুর গ্রাম এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘের পৃথক বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেন। একই গ্রামে দু’টি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন স্থাপন করায় গ্রামবাসীরা কোন লাইন থেকে থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এ নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। গ্রামের পৃথক দু’টি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনকারী দু’টি পক্ষই সাধারণ গ্রাহকের জিম্মি করে তাদের উভয়ের নেতৃত্বে আনা লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জেন্য গ্রামবাসীকে চাপ সৃষ্টি করে আসছেন বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এই ঘটনায় এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের দু’টি পক্ষের মধ্যে টান-টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ শ্রমিকরাও ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নির্মানের কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা সমালোচনারও সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী ভাবে বরাদ্ধ পাওয়া বিদ্যুৎ সংযোগকে কেন্দ্র করে মজলিশপুর গ্রামে গ্রামের দু’টি প্রভাবশালী পক্ষ মরিয়া হয়ে ওঠে তারা কালো টাকার ছড়াছড়িতে লিপ্ত রয়েছেন। গ্রামটিকে বিদ্যুতায়ন করতে রীতিমত প্রতিযোগীতা শুরু করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ও পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কথিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের টাকার বিনময়ে ম্যানেজ করে গ্রামবাসীকে জিম্মী করে গ্রামের দু’দিক থেকে পৃথক বিদ্যুতের লাইন নিয়ে এসেছেন। এখন সাধারণ গ্রাহকদের ওই প্রভাবশালী পক্ষ দু’টি তাদের উভয়ের নেতৃত্বে আনা লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। এনিয়ে গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর ফায়দা লুটছেন পল্লী বিদ্যুতের কথিপয় অসাধু কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতারা।
বাবুল মিয়ার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজে নিয়োজিত সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে একটি লাইনই যথেষ্ট। আমি যে লাইনে কাজ করছি ওই লাইনটি আগে স্থাপন করা হয়েছে। এই লাইনে প্রায় ৩৫টি খুঁটি ব্যবহৃত হয়েছে। আমরাও ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছি। রফিক মিয়ার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ লাইন নির্মান কাজের সুপারভাইজার ছমিরুল ইসলাম বলেন, হামতনপুর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘের লাইনে আমি কাজ করছি। এই লাইনে প্রায় ৭৬ টি খুটি ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামে দু’টি লাইনের যৌথিকতা নেই সেগুলো ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের বিষয়, আমরা শুধু কাজ করে যাচ্ছি বলেও যোগ করেন তিনি। মজলিশপুর গ্রামের রফিক মিয়া বলেন, আমরা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে হামতনপুর এলাকা থেকে বিদ্যুৎ অফিসের নকশা অনুযায়ী বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেছি। গ্রামের অপর একটি পক্ষ নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে অযথাই আরেকটি লাইনের অনুমোদন নিয়ে এসেছে এতে সরকারের লোকসান হচ্ছে। তবে তার বিরুদ্ধে কালো টাকার প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। গ্রামের বাবুল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ব্যস্থ থাকার অজুহাতে কথা বলতে রাজি হননি।
উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, মজলিশপুর গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আমিসহ আরো অনেকেই সহযোগীতা করেছেন। এখানে কোনো শিল্পাঞ্চল নেই শুধুমাত্র একটি গ্রামে পৃথক দু’টি বিদ্যুৎ লাইন কিভাবে স্থাপন হয় সেটি আমার বোধগম্য নয়।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১এর নির্বাহী প্রকৌশলী জগলুল হায়দার বলেন, এলাকার সাবেক ও বর্তমান এমপির কথামত মজলিশপুর গ্রামে পৃথক বিদ্যুৎ লাইন নির্মান করা হয়েছে। আপনারা ( সাংবাদিকরা) যদি বিষয়টি মিমংাশা করে দেন তাহলে অপ্রয়োজনীয় একটি লাইন আমি তুলে নিয়ে আসব। আমরা আপোষ করতে যাবো কেনো এখানে দু’পক্ষের কাছ থেকে কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কথিপয় কর্মকর্তারা অতি উৎসাহী হয়ে পৃথক লাইন নির্মান করে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, গ্রামের দু’পক্ষের দ্বন্ধ মিমাংশার স্বার্থে রাজনৈতিক নেতাদের কথামত পৃথক দু’টি লাইন নির্মান করা হয়েছে।