সংবাদ শিরোনাম
দোয়ারাবাজারে পুলিশের অভিযানে ভারতীয় ৭১ টি গরুসহ চোরাকারবারি আটক  » «   হুমায়ুন রশিদ চত্বরে চাদাঁবাজ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি অটোরিক্সা চালক শ্রমিকরা-অভিযোগ  » «   ১ মন গাঁজাসহ সিলেটের ৩ কারবারি নবীগঞ্জে আটক  » «   প্রবীণের বুদ্ধি নবীনের শক্তির সমন্বয়ে সমাজের অন্যায় অবিচার দূর করতে হবে-জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান  » «   জৈন্তাপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের মাসিক প্রেস-ব্রিফিং  » «   গোয়াইনঘাটে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু  » «   যাদুকাটায় নৌকা ডুবে পাথর শ্রমিকের মৃত্যু  » «   দোয়ারাবাজারে অবৈধ ভাবে বসত ঘরসহ দোকান পার্ট নির্মান ও রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ  » «   সিলেটে জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা  » «   সিলেটে তালামীযে ইসলামিয়ার মীলাদুন্নবী (সা.) র‍্যালি অনুষ্ঠিত  » «   দক্ষ জনশক্তি দেশ বিদেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখবে-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  » «   খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে-নাসিম হোসাইন  » «   দোয়ারাবাজারে ভারতীয় চিনিসহ আটক ২    » «   দোয়ারাবাজারে চোরাইপথে আসা ভারতীয় ৩৬ গরুসহ আটক ৮  » «   চুনারুঘাটে বানের পানির মত আসছে বিভিন্ন প্রকার মাদক  » «  

শীতলপাটির ইউনেস্কোর স্বীকৃতি, সিলেটে উচ্ছ্বাস

18সিলেটপোস্ট রিপোর্ট::মঙ্গল শোভাযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর এবার জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেলো ঐতিহ্যবাহী বুনন শিল্পকর্ম শীতলপাটি। বুধবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, শীতলপাটিকে বিশ্ব নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করেছে ইউনেস্কো। শীতলপাটির আতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত সিলেট। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত শীতলপাটির এমন স্বীকৃতির খবরে উচ্ছ্বসিত সিলেটের মানুষ।

অ আ ক খ। জাতির পিতাসহ বরেণ্য ব্যক্তিদের প্রতিচ্ছবি। পাখি, ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা, মসজিদ, মন্দির, চাঁদ, তারা, পৌরাণিক কাহিনীচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদমিনার, শাপলা, পদ্ম; কী নেই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটিতে। সুযোগ আছে প্রিয়জনের নাম লেখার। সিলেটের ঐহিত্যবাহী শীতলপাটিতে রয়েছে এরকম নানা বৈচিত্র্য। সিলেটের বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার মূলত এ শিল্পের অধিষ্ঠান। এছাড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রামে পাটি বুনন ঐতিহ্যবাহী কাজ।

সিলেটের গ্রামাঞ্চলে বিয়ের উপঢৌকনের তালিকায় শীর্ষে শীতলপাটির অবস্থান ছিলো একটা সময়ে। কালের পরিক্রমায় তা আজো টিকে আছে। এছাড়া শহুরে গৃহসজ্জায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে শীতলপাটি। চাহিদা আছে বিদেশেও। সিলেট অঞ্চলে কারুকাজভেদে শীতলপাটির রয়েছে আকর্ষণীয় নাম। এর মধ্যে পয়সা, সিকি, শাপলা, সোনামুড়ি, টিক্কা, লালগালিচা, আধুলি, মিহি উল্লেখযোগ্য। এগুলো বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৮ হাজার টাকায়।

শীতলপাটির মূল উপাদান হচ্ছে মুরতা। বেতজাতীয় গাছ মুরতা দিয়েই তৈরি হয় শীতলপাটি। শুষ্ক মৌসুমে রোপণ করা এই বেত পরিপক্ব হলে বর্ষার পানিতে ভিজিয়ে পাটি তৈরির উপযোগী বেতে রূপ দেওয়া হয়। এরপর চলে পাটি বুনন কর্ম। এ কাজ সাধারণত কৃষক পরিবারের গৃহিণীরাই করেন। সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো পাটি তৈরি করে অনেক বুননশিল্পীর সংসার চলে। শুধু সংসার চালানোর জন্যই বুনন শিল্পীরা শীতল পাটি বুনন করেন এমন নয়; সিলেটের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এ নেশাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন বুনন জাদুকরেরা।

যুগ যুগ থেকে চলে আসা এ ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন বুননশিল্পীরা। কেউ কেউ বাপ দাদার এ পেশায় জীবন পার করছেন। সিলেটের সেই ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি বুননশিল্প এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘যুগ যুগ থেকে চলে আসা সিলেটের শীতলপাটি বুনন আমাদের ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক। এ ঐতিহ্য আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে। এজন্য বুননশিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন। তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নের দিকে সরকার গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার দাবি শীতলপাটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে বুননশিল্পীদের যথেষ্ট অর্থায়ন করুন। বুননশিল্পীরা আমাদের অহংকার।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রথমে একজন বাঙালি হিসেবে আমি গর্বিত। দ্বিতীয়ত একজন সিলেটি হিসেবে আজ নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, সিলেটের বুনন জাদুকরেরা। তাঁদের নৈপুণ্যে আজ আমরা বিশ্ববাসীর সামনে যেতে পারলাম।’

তিনি বলেন, ‘ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতি আমাদের অর্জন। বিশ্বের কোথাও এমন শিল্প আবিষ্কার হয়েছে বলে মনে হয় না। এ শিল্প আমাদের গৌরবের আমাদের অহংকারের শিল্প।’

আবদুল গফুর ইসলামী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক জামিল আহমদ বলেন, ‘এ স্বীকৃতি আমাদের গর্বের। স্বীকৃতিটা আমরা অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল। যাই হোক অনেক পরে হলেও আমরা আমাদের ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছি। আমরা বিশ্ব স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমাদের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেই। কিন্তু আমার ঘরের পাশে বলে যে বাবা-মা, ভাই-বোন ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলেন তাঁদের খবর কেন নেই না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতিতে আমরা আনন্দিত। তবে স্বীকৃতি নিয়ে বসে থাকলে হবে না-এ শিল্পকে আরো মানসম্পন্ন করতে সরকারকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করতে হবে। পাশাপাশি বুননশিল্পীদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।’

জানা গেছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের উপাদান সংশ্লিষ্ট দেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই ও সুনির্দিষ্ট করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তুলে ধরার কাজ করে ইউনেস্কো। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে দেশ ওই উপাদানের আঁতুড়ঘর হিসেবে বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠি হয়, মর্যাদা লাভ করে। এ সংক্রান্ত সনদে স্বাক্ষর করা সব দেশ প্রতি বছর নিজেদের যে কোনো একটি উপাদানের স্বীকৃতি চেয়ে ইউনেস্কোতে আবেদন করতে পারে। এ বছর ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.