মোঃ সুজাত আলী,জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা সহ শাখা নদনদীর পানি বিপদ সিমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গত ৩দিন ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকা-সুনামগঞ্জ রোডে ইছগাঁও নামক স্থানে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গত দুই দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ রোডে চলাচলকারী জন সাধারনের বিকল্প রাস্তা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন। এছারাও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীগঞ্জ দক্ষিণপাঁড়-রৌয়াইল যাতায়াতের একমাত্র চলাচলে রাস্তায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে। সোমবার (১৩জুলাই) সকালে বন্যার পানির স্রোতে রাস্তাটি ভেঙ্গে যায়। নোয়াগাঁও গ্রামের লোকজন মিলে পানি আটকানো চেষ্টা করলেও পানি চলাচল বন্ধ করা সম্ভব হয় নাই। পরে জনসাধারন চলাচলের বাশেঁর সাকু তৈরী করা হয়। এ রাস্তায় চলাচলকারী হাজার হাজার জনসাধারন বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে নোয়াগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বেশি ঝুকিঁর মধ্যে রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে পানি চলাচল করায় পানি স্রোতে বিদ্যালয়ের বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। এদিকে উপজেলার হাওরে গুলোতে থৈ থৈ করছে বানের পানি। হাওরের ঘোলা জল ঢুকে পড়েছে মানুষের বসত বাড়ি ও আঙিনায়। বসতঘর থেকে খড়ের ঘর গোয়াল ঘর সর্বত্র বানের পানি ঢুকে পড়েছে। হাওর এলাকার বসতবাড়ির তিল পরিমাণ জায়গা নেই, যেখানে বানের পানি প্রবেশ করেনি। বাড়ির আঙিনাগুলো ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। আবার কোনো কোনো বাড়ির উঁচু ভিটেমাটি ধুয়ে ফেলতেছে হাওরের উত্তাল ঢেউ। বানবাসী লোকজন ঘরের ভেতরে চৌকিতে কোন রকমে দিনাতিপাত করছেন।
উপজেলার জনসাধারন জানান, গো খাদ্যের খড়ের গাদা গুলো বেশ কিছু দিন যাবত পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ভিজে পচন ধরেছে। গরুর খাবার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। হাওরের উত্তাল ঢেউ থেকে বসত ভিটে রক্ষার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে বসবাস করছেন। বানবাসী লোকজনরা আরো জানান, হাওর এলাকায় এখনো পৌঁছেনি পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে শুকনো খাবারের সংকট। বিশেষ করে ঢাকা-সুনামগঞ্জ রোডে ইছগাঁও নামক স্থানে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পানি থাকায় ও রাস্তা ভাঙ্গা হওয়ায় চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এর নির্দেশে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ কর্তৃক প্রদত্ত জরুরী ত্রাণ সহায়তা জগন্নাথপুরের বন্যা দুর্গত এলাকায় সোমবার থেকে বিতরণ কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (১৩জুলাই) জগন্নাথপুর পৌরসভার ভবানীপুর এলাকাসহ আব্দুল খালিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় গ্রহণকারী অসহায় পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পৌরসভায় ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও কলকলিয়া ইউনিয়ন, রানীগঞ্জ ইউনিয়ন এবং চিলাউড়া ইউনিয়ন এলাকায় বন্যা কবলিত অঞ্চলে ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম জানান, মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক জগন্নাথপুর এর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্র সহ দুর্গত এলাকায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।