সিলেটপোস্ট ডেস্ক::সিলেটে ‘অস্থায়ী’ পশুর হাট নিয়ে ক্ষোভ চরমে। স্থগিত করা হয়েছে আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের পশুর হাট। আন্দোলনের মুখে এমসি কলেজ মাঠেও বসছে না পশুর হাট। ট্রাক টার্মিনালের ভেতরেও পশুর হাট বসানো নিয়ে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলনে নেমেছে। এ দুটি মাঠে শেষ পর্যন্ত হাট বসানো যাবে কিনা- এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা কোনো কিছুই পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না। তারা কৌশলে আন্দোলন দমিয়ে মাঠে হাট করার চিন্তাভাবনায় রয়েছেন। এছাড়া নতুন করে হাট ইজারা দেয়ার সময়ও এখন হাতে নেই।
প্রতি বছরই সিলেটে অস্থায়ী ভিত্তিতে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসায় সিটি করপোরেশন। এবারো জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে সিলেটের সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ, এমসি কলেজ মাঠ ও ট্রাক টার্মিনাল এলাকা হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু শুরুতেই আলীয়া মাদ্রাসার মাঠ নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। কোভিড হাসপাতালের পাশের মাঠ হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিও দেখা দেয়। ফলে আন্দোলনের মুখে সিটি করপোরেশন ওই মাঠে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এদিকে এমসি কলেজ মাঠেও হাট বসানো নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। এমসি কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, খেলোয়াড়সহ এলাকার মানুষ এই মাঠে হাট বসানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাদের দাবি- এই মাঠে হাট বসালে সিলেটে খেলার উপযোগী কোনো মাঠই সিলেটে থাকবে না। আন্দোলন শুরু হওয়ায় এমসি কলেজের অধ্যক্ষও সিটি করপোরেশনে হাট না বসানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এমসির মাঠের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে টিনের বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ জানিয়েছেন- ‘এমসি কলেজে হাট বসানো হবে কিনা- জানি না। তবে- এলাকার কোনো মানুষ এই হাট থেকে পশু কিনবে না। মানুষ না গেলে হাট কীভাবে চলছে। প্রতিবাদ স্বরূপ মানুষ ওই হাট থেকে পশু কিনবে না বলে জানান তিনি।’ এদিকে- দক্ষিণ সুরমার ট্রাক টার্মিনালে পশুর হাট বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চলছে। ইতিমধ্যে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের একাংশ টার্মিনালের ভেতরে হাট না বসাতে আন্দোলন শুরু করেছে। আজ রোববার তারা এ নিয়ে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন। গতকাল সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বক্তারা বলেন- যদি কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল থেকে গরু বাজার প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেবে। সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ ফয়েজ জানিয়েছেন- সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল সিলেটের ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবী ও আন্দোলনের ফসল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ সেখানে ট্রাক রাখার বদলে রাখা হচ্ছে গরু। আর এ অচরণটি হলো সিলেটের প্রায় ৪৫ হাজার ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের জন্য লজ্জাজনক। তাই ট্রাক টার্মিনাল রক্ষায় সবাই এগিয়ে আসতে হবে। জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার জানিয়েছেন- এখন টার্মিনাল থেকে ট্রাক বের করে দিয়ে মাইকিং করে পশুর হাট বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে তোরণ নির্মাণ করে পশুর হাটের জানান দেয়া হয়েছে। এটা কোনো ভাবে মেনে নেয়া যায় না। এজন্য তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে- এমসি কলেজ মাঠে পশুর হাট বসানোর বিরোধিতা করলেও স্থানীয়রা নগরীর টিলাগড় পয়েন্টে একটি পশুর হাট বসায়। শুক্রবার ওই হাটে পশু বিকিকিনি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালে পুলিশ গিয়ে ওই হাটকে অবৈধ ঘোষণা করে সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে কোনো পশু বেচাকেনা করা যাবে না পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বাঁশ-খুঁটি এবং বিক্রির জন্য জড়ো করা গরু-ছাগল। শাহপরাণ থানার ওসি কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছেন- টিলাগড় পয়েন্টের পশুর হাট অবৈধ, এর কোনো বৈধতা নেই। সিটি করপোরেশন থেকেও কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। কেউ কেউ সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে এসে বৈধভাবে হাট বসানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। এর আগ পর্যন্ত এখানে কোনো পশু উঠানো হবে না এবং কেনা-বেচা হবে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে টিলাগড় পয়েন্টে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় টিলাগড় এলাকার একটি পক্ষ। ওইদিন রাত থেকেই মাঠের চারপাশে বাঁশ লাগিয়ে গরু-ছাগল রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে- সিলেট সদর উপজেলা ও এসএমপির এয়ারপোর্ট থানাধীন লাক্কাতুড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কোরবানির পশুর হাট সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার ওই স্কুলের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থী, চা শ্রমিক ও স্থানীয় জনগণ। তারা এ সময় লাক্কাতুড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে পশুর হাট সরানোর জোর দাবি জানান। এ স্কুল মাঠ থেকে হাট সরানোর দাবিতে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেন ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। তবে এই মাঠেও হাট বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। আগামীকাল থেকে এই হাটের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বলে জানিয়েছে ইজারাদার পক্ষ। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তারা এই মাঠে হাট বসাতে দেবেন না। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, এমসি কলেজ মাঠে পশুর হাট বসানো হবে কী না সেটি জানেন মেয়র। তবে দক্ষিণ সুরমায় একটি পশুর হাট বসবে।