সিলেটপোস্ট ডেস্ক::চলতি সপ্তাহে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ‘বড় সফলতা’ পেয়েছেন বৃটেনের ইউনিভার্সিটি অব সাউথাম্পটনের তিন অধ্যাপক। এই সাফল্য রাতারাতি তাদের মিলিয়নার করে তুলেছে। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, প্রায় দুই দশক আগে অধ্যাপক রাটকো জুকানোভিচ, স্টিফেন হোলগেট ও ডনা ড্যাভিস আবিষ্কার করেন যে, এজমা ও জটিল ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ইন্টারফেরন বেটা নামের একটি প্রোটিনের ঘাটতি থাকে। এই প্রোটিন সাধারণ সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার লড়াইয়ে সহায়তা করে থাকে। তারা বের করেন যে, ওই প্রোটিন প্রতিস্থাপিত করা গেলে ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যাবে। নিজেদের আবিষ্কারকে চিকিৎসায় রুপ দিতে ওই তিন শিক্ষাবিদ ‘সিনেয়ারজেন’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালের দিকে শেয়ারবাজারে সাড়া ফেলেছিল সে কোম্পানি।
তবে বৃটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে হাঁপানির ভাইরাল সংক্রমণ চিকিৎসা বিষয়ক একটি চুক্তি করতে ব্যর্থ হলে, কোম্পানিটির শেয়ারে ধস নামে। কিন্তু, বহু বছর পর করোনা মহামারির সময় শ্বাসকষ্টজনিত যেকোনো সম্ভাব্য চিকিৎসার চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে গেলে তাদের ভাগ্য ভিন্নমোড় নেয়। সিনেয়ারজেনের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মার্সডেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারফেরন বেটা প্রোটিন ব্যবহার করে জটিল ব্রংকাইটিস বা এমফিসেমায় আক্রান্তদের জন্য একটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারি দেখা দেয়ার পরপরই, গত জানুয়ারিতেই আমরা বুঝতে পারছিলাম যে, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবো। ভাইরাসটি যুক্তরাজ্যে আসবে ধরে নিয়ে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমরা একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু করি। ভাইরাসটি আসলেই চলে আসে। মানুষজন যখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শুরু করলো, তখনই আমাদের পরীক্ষা চলছিল। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কৌশলের একটি অংশ হচ্ছে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করা ও ইন্টারফেরন বেটা দমিয়ে রাখা। আমরা যদি প্রোটিনটি ফের আগের জায়গায় বসিয়ে দিতে পারি তাহলে নাটকীয় প্রভাব দেখতে পারবো। চলতি সপ্তাহে সিনেয়ারজেনের প্রাথমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষাটিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একদল রোগীকে নেবুলাইজার দিয়ে সরাসরি তাদের শ্বাসতন্ত্রে ওই তিন অধ্যাপকের তৈরি ‘এসএনজি০০১’ নামের একটি ইন্টারফেরন বেটা ওষুধ দেয়া হয়। অন্য একদল রোগীকে ওই ওষুধটির মতো একইরকম দেখতে একটি নিষ্ক্রিয় ওষুধ (প্ল্যাসেবো) দেয়া হয়। দেখা গেছে, প্ল্যাসেবো গ্রহণকারীদের তুলনায় সত্যিকার ওষুধ গ্রহণকারীদের সুস্থ হওয়ার হার দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১০১ জন মানুষ। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর করোনায় গুরুতর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম ও তাদের শ্বাসকষ্টও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
২১শে জুলাই সকালে সিনেয়ারজেনের পরীক্ষার ফল প্রকাশ পায়। এদিন দুপুরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য বেড়ে যায় ৫৪০ শতাংশ। তিন অধ্যাপকের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী জুকানোভিচের ০.৫৬ শতাংশ শেয়ারের মূল্য একদিনে ৩ লাখ ইউরো থেকে বেড়ে হয় ১৬ লাখ ইউরো। ৭৩ বছর বয়সী হোলগেটের ০.৫৯ শতাংশ শেয়ারের মূল্য বেড়ে হয় ১৭ লাখ ইউরো। ৬৭ বছর বয়সী ড্যাভিসের শেয়ারও বাকি দু’জনের প্রায় সমান। আলাদা একটি কোম্পানির মাধ্যমে সিনেয়ারজেনে শেয়ার ধরে রেখেছেন তিনি। গত শুক্রবার অবধি সিনেয়ারজেনের শেয়ার বেড়েছে ৩ হাজার শতাংশ। কোম্পানির পরিচালকদের ২.৬ শতাংশ শেয়ারের মূল্য ছাড়িয়েছে ৭০ লাখ ইউরোতে। সম্ভাব্য করোনা ওষুধটি বাজারে আনার পরবর্তী ধাপ শুরুর অনুমোদন কোম্পানিটি তাদের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্বজুড়ে ওষুধ নিয়ন্ত্রকদের কাছে উপস্থাপন করছে। সাধারণত এ ধরনের অনুমোদন পেতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে, তবে বৃটিশ সরকার পূর্বে প্রতিশ্রুতি করেছে যে, করোনার চিকিৎসায় সম্ভাব্য ওষুধগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করা হবে।
সিনেয়ারজেন জানিয়েছে, তারা তাদের ওষুধটির পরীক্ষার ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। এখন করোনার হালকা উপসর্গ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়ি অবস্থানকারীদের ওপর এর পরীক্ষা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে ওষুধ প্রস্তুতকারী রেন্টস্লারকে ওষুধটি উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছে সিনেয়ারজেন। আগামী শীতের মধ্যেই ওষুধটির ১০ লাখ ডোজ প্রস্তুত রাখতে চায় তারা।