ওসমানীনগর প্রতিনিধি::সিলেটের ওসমানীনগরে একটি মসজিদ নিমার্ণ কাজকে কেন্দ্র করে টাকা আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে গত ২৬ জুলাই নিমার্ণাধীন মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার হোসেন কৃর্তক লিখিত অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন কওে বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। রয়েছে টান টান উত্তেজনাও।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে ২২ মার্চ উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাইকদারা মোকাম বাজার (পাঁচপাড়া) এলাকায় জামে মসজিদ নিমার্ণের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতির দায়িত্ব পান মামুনূর রশিদ খলকু ও আব্দুল কাইয়ুমকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। সভায় মসজিদ নিমার্ণে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা মসজিদের তাজপুরস্থ এবি ব্যাংকের একাউন্টে রাখা ও মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির সভার রেজ্যুলেশন অনুযায়ী নিমার্ণ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মসজিদের নিমার্ণ কাজ শুরু হলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলীসহ আরও কয়েকজন কমিটির অন্যদের পাশ কাটিয়ে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তারা মসজিদের জন্য আহোরিত টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে মসজিদের একাউন্ট থেকে ৩ কিস্তিতে ২ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসী এক দাতা সদস্যের ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া মসজিদ নিমার্ণের জন্য রাস্তায় মাইক লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায়কৃত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকে জমা না রেখে পকেটস্থ করেন। কমিটির অন্যরা আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে উক্ত দু’জন গড়িমসি শুরু করেন। কমিটির লোকজন এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার বিশিষ্ট লোকদের স্মরনাপন্ন হলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলী বিভিন্ন ভাবে মসজিদ নিমার্ণে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৪ টাকা সংগ্রহ হয়েছে জানালেও ব্যয়ের কোন হিসেব দিতে পারেননি। পরবর্তীতে একটি অডিট কমিটি তৈরি করে সভাপতির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে মসজিদের বাকী কাজ রেজ্যুলেশন অনুযায়ী করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং বর্তমানে মসজিদের অবশিষ্ট কাজ দাতা সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় কথা হলেও রাস্তায় মাইক লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দান গ্রহণ করে উক্ত দু’জন আত্মসাৎ করছেন। যা সম্পূর্ণ ধর্মীয় পরিপন্থি।
মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (ভূমিদাতা) মামুনূর রশিদ খলকু বলেন, আমি মসজিদ কমিটির সভাপতি হলেও মসজিদের আর্থিক কোন বিষয়ে আমায় অবগত করা হচ্ছে না। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলী গংরা কামিটিকে পাশ কাটিয়ে তাদের ইচ্ছেমতো মসজিদের কাজ করাচ্ছেন। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও তারা মসজিদের পরিপূর্ণ হিসেব দাখিল করছেন না। তারা মসজিদ নিমার্ণের নামে প্রবাসীসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তাদের ব্যক্তিগত কাজে লাগাচ্ছেন।
সহ-সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার হোসেন বলেন,মসজিদের জন্য মাইক লাগিয়েও টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্ত সংগ্রহকৃত টাকার হিসাব কেউ জানে না। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলীদের কাছ থেকে কোন হিসেব পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির অভিযুক্ত সহ-সভাপতি আত্তর আলী বলেন, মসজিদ নিমার্ণে টাকা পয়সা আত্মসাতের যে অভিযোগ আমি ও সেক্রেটারী আব্দুল কাইয়ুমকে উপর তোলা হয়েছে তা মিথ্যা। মসজিদের জন্য সংগ্রহকৃত টাকার চেয়ে আরও ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা বেশী খরচ হয়েছে। বাড়তি খরচের টাকা কমিটির কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে। আমরা প্রতিটা কাজে নিয়মিত হিসেব দিয়ে এসেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পর থানায় গিয়েও হিসেব দাখিল করেছি।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকতার্ এএসআই সেলিম মিয়া বলেন, বাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল সরজমিনে পরিদর্শ করেছি। উভয় পক্ষকে মসজিদ নিমার্ণ কাজের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়েছে। বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উছমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল আজাদ ফারুক বলেন, এ বিষয়ে আমি জ্ঞাত রয়েছি। তবে ঘটনা শান্তিপূর্ণ ভাবে নিস্পত্তির লক্ষ্যে এ মুহুর্তে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।