মোঃ নাজমুল ইসলাম,কুলাউড়া::কুলাউড়া উপজেলায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন কুলাউড়া-পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও বাজার সড়ক প্রশস্থকরণ ও উন্নয়নকাজ ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে নির্ধারিত মেয়াদ পার হয়ে গেছে। ১৮ মাস প্রকল্পের মেয়াদ অতিবাহিত হলেও সড়কের প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়নি এখনো। এতে ৬ ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট এলাকার লক্ষাধিক লোকজন রাস্তা চলাচলে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
বর্ষায় কর্দমাক্ত এবং শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি ও ফেলে রাখা খোদাই করা সড়কের কারণে উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের রাউৎগাঁও,পৃথিমপাশা,কর্মধা,টিলাগাঁও,হাজিপুর ও শরিফপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াতে প্রতিদিন অসহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাস্তা খারাপের অজুহাতে পরিবহন চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন এই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে। সড়কের চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে স্থানীয় এলাকার ভুক্তভোগীরা প্রায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু তারপরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি এখনো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্র জানা যায়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া উপজেলার পৌর এলাকার সরকারী নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সম্মুখ থেকে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার হয়ে ঝিলেরপার বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং রবিরবাজার থেকে টিলাগাঁও বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক রয়েছে। দুটি সড়কই দীর্ঘ দিন ধরে ভাঙ্গাচোরা রয়েছে। সওজ অধিদপ্তর ওই সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের উদ্যোগ নেয়। ১৮ মাস মেয়াদে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকার ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙ্গে কাজ বাস্তবায়ন শুরু করেন। কিন্তু কাজ শুরুর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সড়কের এক ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সড়কটির নির্ধারিত কার্য সম্পাদনের সময় ছিল গত মাসের ৩০ জুন। ওই সড়ক দিয়ে উপজেলার ৬টি ইউনিয় সহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন কুলাউড়া শহর,মৌলভীবাজার জেলা ও সিলেটে চলাচল করে থাকেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এ সড়কে অনেক দুর্ভোগ নিয়ে কষ্ট করে লোকজন চলাচল করছেন। উপজেলা শহর থেকে মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তা ১ ঘন্টা ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে পার করছেন। সড়কে চলাচলের সময় কাদা ও বড় বড় খানাখন্দের ঝাঁকুনিতে গাড়ীর চালক এবং যাত্রীরা চরম বেকায়দায় পড়তেছেন। উন্নয়ন কাজের ধিরগতি বিড়ম্বনার কারণে পরিবহন সেক্টরের ভাড়া বৃদ্ধি কারণে অতিরিক্ত ভাড়া গুণার পাশাপাশি দ্বিগুণ সময় ব্যয় হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের। কুলাউড়া- রবিরবাজার ১০ কিলোমিটার সড়কের সিএনজি অটোরিকশার নির্ধারিত ভাড়া ছিল ২০ টাকা। কিন্তু রাস্তা বেহাল দশার অজুহাতে চালকরা ৩০-৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রিদের কাছ থেকে আদায় করছেন। ফলে মানুষ দুর্ভোগ ও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন দুর্ভোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার চলাচলকারীরা।
কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ তাজুল ইসলাম,আশরাফুর ইসলাম জুয়েল,কর্মধা ইউনিয়নের মুশতাক আহমেদ,আব্দুর রহিম,পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আব্দুল কাইয়ূম,সৈয়দ আশফাক তানভীর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈয়দ রিয়াজ উদ্দিন ও পলাশ চন্দ্র ধর জানান, কুলাউড়ার দুটি সড়কের কাজ শুরু থেকেই ধীরগতি ভাবে চলছে। কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভুক্তভোগী বিভিন্ন এলাকার লোক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কিন্তু তাতেও কাজের গতি বাড়েনি। সড়কের কাজ দ্রুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ সড়কে প্রতিদিন চলাচলকারী লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আতাউর রহমান ও আলী আমজদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কাদির জানান, ১০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠানে যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। একবার গেলে আর ফিরে আসতে মন চায় না। তবুও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে প্রতিদিন যেতে হয়। সড়কের কাজের ধীরগতির বিষয়ে মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পাদন করে এই দাবি জানাচ্ছি।
কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কুলাউড়া-পৃথিমপাশা সড়কের তিন কিলোমিটার জায়গা পাকার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, সড়কগুলোর কাজে প্রচুর পাথর লাগে। কিন্তু এলসির মাধ্যমে পাথর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কোথায় পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সড়কগুলোর অবশিষ্ট অংশে পাথরের স্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কাজের ধীরগতির বিষয় জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম মুঠোফোনে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকার কারণে সড়কগুলোর কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার কারণে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। বর্তমানে বর্ষা শুরু হওয়ায় সড়কে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কাজের জন্য সবধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সরকার এখন চলমান সব কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করছি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজের ধীরগতির বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা হয়েছে। তিনি কাজের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।