সংবাদ শিরোনাম
গোয়াইনঘাটে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু  » «   যাদুকাটায় নৌকা ডুবে পাথর শ্রমিকের মৃত্যু  » «   দোয়ারাবাজারে অবৈধ ভাবে বসত ঘরসহ দোকান পার্ট নির্মান ও রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ  » «   সিলেটে জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা  » «   সিলেটে তালামীযে ইসলামিয়ার মীলাদুন্নবী (সা.) র‍্যালি অনুষ্ঠিত  » «   দক্ষ জনশক্তি দেশ বিদেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখবে-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  » «   খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে-নাসিম হোসাইন  » «   দোয়ারাবাজারে ভারতীয় চিনিসহ আটক ২    » «   দোয়ারাবাজারে চোরাইপথে আসা ভারতীয় ৩৬ গরুসহ আটক ৮  » «   চুনারুঘাটে বানের পানির মত আসছে বিভিন্ন প্রকার মাদক  » «   জামালগঞ্জের শান্তিপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিষপান,তিন সন্তানের মৃত্যু,স্বামী আটক  » «   বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না : খন্দকার মুক্তাদির  » «   জৈন্তাপুর সীমান্ত: চোরাচালানের অভয়ারণ্যে,  আসছে গরু,মহিষ, মাদকদ্রব্য:শীর্ষে নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন  » «   মানুষ আজকে শেখ হাসিনাকে এক মিনিটের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  » «   দেশের সাধারণ মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন চায় : কাইয়ুম চৌধুরী  » «  

১৬ ডিসেম্বর ’৭১ বাঙালি জাতির অর্জিত তিন বিশ্বরেকর্ড এখনো বহাল

মোঃ আব্দুল মালিক::বিশ্বের ইতিহাসে বহু যুদ্ধবিগ্রহ হয়েছে, বহু লোকক্ষয় ও সম্পদহানি হয়েছে, বহু আত্নসমর্পনের ঘটনাও ঘটেছে, বহুদেশ ও জাতি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। কিন্তু বাঙ্গালি জাতি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে তিনটি বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেছিল তা দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধে কেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সেই রেকর্ড হয়নি ? সেদিক থেকে বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধ বিশ্বের যে কোন স্বাধীনতা যুদ্ধের চাইতে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল ও আছে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙ্গালি জাতি তাঁদের প্রাণের সংগঠন আওয়ামীলীগকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট আসন দান করে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ি আওয়ামীলীগ তথা বাঙ্গালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সরকার গঠন করার কথা ছিল। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রি উল্লেখ করে ৩রা মার্চ ৭১ পালার্মেন্টের অধিবেশনও ডেকেছিলেন। কিন্তু বাঙ্গালির হাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা চলে যাবে, বাঙ্গালিরা পাকিস্তানের শাসক হবে এটা হতে পারে না। তাই পর্দার অন্তরালে শুরু হলো নানা ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষাধিক জনতার মহাসমাবেশে জ্বালাময়ী দিকনির্দেশনা মূলক এক ভাষণ দান করেন। যে ভাষণ জাতি সংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিষ্টারে’ ৪২৭ তম এবং অলিখিত দলিলের মধ্যে প্রথম হিসেবে স্থান দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙ্গালি জাতি যখন উত্তাল আন্দোলন সংগ্রামে উজ্জীবিত এবং ঐক্যবদ্ধ তখন উপায়ান্তর না দেখে ইয়াহিয়া, ভূট্টো আলোচনার নামে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ গভীর রাতে নিরন্ত্র, ঘুমন্ত বাঙ্গালি জাতিকে নিশ্চিন্ন করার মানসে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এক ঘৃণ্য গণহত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। তাদের ধারণা ছিল কয়েক হাজার বাঙ্গালিকে এলোপাতাড়ি হত্যা করলে, শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করলে বাঙ্গালিরা ঠান্ডা হয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ভুলে যাবে, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার অভিলাষ ত্যাগ করবে। কিন্তু না বাঙ্গালি জাতি বীরের জাতি, বিজয়ী জাতি। তাঁদের নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের মায়া ত্যাগ করে ২৬ মার্চের উষালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু কৌশলে ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বাঙ্গালি জাতিকে তাদের করণীয় সম্পর্কে সংক্ষেপে পূর্ণ দিক নির্দেশনাও দিয়ে রেখেছিলেন।

শুরু হলো বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার যুদ্ধ, মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমদ, কামরুজ্জামান, মনসুর আলী জাতীয় এই চার নেতার নেতৃত্বে ১০ এপ্রিল অস্থায়ী মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়। এই সরকার বঙ্গবীর এম. এ. জি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করে। বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী তঁার প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞতার আলোকে সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টর এবং ৩টি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করে ও গেরিলা বাহিনী গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন।

পৃথিবী বিখ্যাত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিশ্বের দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এবং তাদের সহযোগীদের প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট পাকিস্তানী বাহিনীকে বাঙ্গালিরা মাত্র আট মাস বিশ দিনের যুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করে। এই আত্মসমর্পনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র স্থান করে নেয়। এই বিজয়ে বাঙ্গালি জাতি ৩টি বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করে যা এখনো বহাল আছে।

রেকর্ড তিনটি হচ্ছে-

১। মাত্র ৮ মাস ২০ দিন যুদ্ধ করে বিশ্বের ইতিহাসে কোন দেশ বা জাতি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। একমাত্র বাঙ্গালি জাতি এই অসাধ্য সাধন করে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেছে। যা এখনো কেউ ভাঙতে পারে নি।

২। বিশ্বের ইতিহাসে তিরাননব্বই হাজার প্রশিক্ষিত, নিয়মিত সৈন্য আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত থাকা অবস্থায় কোন কমান্ডার, কোন জেনারেল আত্মসমর্পন করে নি। একমাত্র টাইগার নিয়াজী খ্যাত জেনারেল আমীর আব্দুল্লা খান নিয়াজী বাঙ্গালি জাতির কাছে বিড়ালের মতো মাথা নত করে আত্মসমর্পন করেছিলো, যা আজও কেউ করে নি।

৩। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী মাত্র ৮ মাস ২০ দিনের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে, দু লক্ষের উপরে মা-বোনকে নির্যাতন করে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসী বাহিনী ইহুদি জাতিকে বিশ্ব থেকে নিশ্চিন্ন করার অভিপ্রায়ে ইহুদি নিধনে প্রবৃত্ত হয়। নাৎসী বাহিনী ইহুদি নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশু যাকে যেখানে যেভাবে পেয়েছে তাকে সেখানে সেভাবে হত্যা করেছে তারপরও সময়ের সাথে হত্যা-নির্যাতনের অনুপাতিক হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে পাকিস্তানি হায়েনারা কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা-নির্যাতন করেছে। যা আজ পর্যন্ত আর কেউ করে নি।

বাঙ্গালি জাতির বিজয়ের পর গত ৫০ বছরে বিশ্বে আরও অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে, অনেক জাতি স্বাধীন হয়েছে কিন্তু বাঙালি জাতির এই তিনটি বিশ্ব রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙ্গতে পারে নি। অদূর ভবিষ্যতে পারবে কি না তা ভবিষ্যতই জানে। এই বিজয়ের মহানায়ক ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং কিছু সংখ্যক কুলাঙ্গার ছাড়া দেশের আপামর জনসাধারণ।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী মুজিব বর্ষের এই বিজয় দিবসে জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

অন্নদা শংকর রায়ের ভাষায়-

যতকাল রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরী, মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কৃর্তী তোমার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

লেখক,কলামিস্ট

সহ-সভাপতি- বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, সিলেট জেলা শাখা।

সাধারণ সম্পাদক- বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সিলেট জেলা শাখা।

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.