শেখ মোঃ লুৎফুর রহমান::সহপাঠীদের জোর অনুরোধেও আমরণ অনশন ভাঙতে রাজী হন নি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শিক্ষার্থী। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। এদিকে আন্দোলনে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে সিআইডির হাতে গ্রেফতার সাবেক ৫ সাস্টিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সাবেক ৫ সাস্টিয়ানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গোলচত্বরে সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ এর পদত্যাগের একদফা দাবিতে টানা ১৫০ ঘন্টা ধরে আমরণ অনশন করছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শিক্ষার্থী। না খেয়ে থাকায় প্রত্যেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ১৯ জন হাসপাতালে ও ৯ জন ভিসির বাসভবনের সামনে স্যালাইন নিয়ে অনশন চালিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অভূক্ত থাকায় নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে।
এদিকে টানা আন্দোলনেও ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ পদত্যাগ না করায় আন্দোলনকারীরা সহযোদ্ধাদের অনশন ভাঙানোর উদ্যোগ নেন। তারা সন্ধ্যায় গোলচত্বরে সমাবেশ করে শপথ পাঠ করেন। পরবর্তীতে আমরণ অনশন ভাঙার জন্য সহযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানান। প্রথমে অনশন ভাঙতে রাজী না হলেও ভাবনা চিন্তার জন্য এক ঘন্টা সময় নেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা গোলচত্বরে ফিরে যান। পরবর্তীতে রাত সোয়া ৯টায় এক ব্রিফিংয়ে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে আন্দোলনে অর্থ যোগানের অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ৫ ছাত্রকে সিআইডি ঢাকা থেকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। আটককৃতরা হলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান খান, রেজা নুর মুইন, এ এফ এম নাজমুল সাকিব, একেএম মারুফ হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ।
এদিকে দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি ভিসির বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর করে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি আন্দোলনের জন্য অনুদান গ্রহণের ৬টি নগদ, বিকাশ, রকেট ও ব্যাংক একাউন্ট জব্দ এবং সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক টিম প্রত্যাহার করায় ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা।
দুপুরের পর শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক তুলশী কুমার দাসের নেতৃত্বে একদল শিক্ষক খাবার নিয়ে ভিসির বাসভবনে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের মানবপ্রাচীর তাদের পথরোধ করে। পরে খাবার সামগ্রী পরীক্ষা করে সেগুলো পুলিশের হাত দিয়ে ভেতরে পাঠানো হলেও অন্যদের যেতে বাধা দেয় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিশিষ্ট আইনজীবী গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতিনিধি হিসেবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মুকাব্বির খান। তিনি আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে অনশনস্থল থেকেই ড. কামাল হোসেনের সাথে মোবাইলে কথা বলে আন্দোলন সম্পর্কে অবহিত করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, সরকারের উপর মহলে কে বা কারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছে, যা কাম্য নয়। এ আন্দোলনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আন্দোলনকারীরাও রাজনীতিবিদদের এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছে।
এদিকে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ এর পদত্যাগের দাবীতে এখনো অনশনে অনড় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভিসির বিদায়ের আগ পর্যন্ত রাতদিন ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।