সংবাদ শিরোনাম
গোয়াইনঘাটে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু  » «   যাদুকাটায় নৌকা ডুবে পাথর শ্রমিকের মৃত্যু  » «   দোয়ারাবাজারে অবৈধ ভাবে বসত ঘরসহ দোকান পার্ট নির্মান ও রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ  » «   সিলেটে জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা  » «   সিলেটে তালামীযে ইসলামিয়ার মীলাদুন্নবী (সা.) র‍্যালি অনুষ্ঠিত  » «   দক্ষ জনশক্তি দেশ বিদেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখবে-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  » «   খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে-নাসিম হোসাইন  » «   দোয়ারাবাজারে ভারতীয় চিনিসহ আটক ২    » «   দোয়ারাবাজারে চোরাইপথে আসা ভারতীয় ৩৬ গরুসহ আটক ৮  » «   চুনারুঘাটে বানের পানির মত আসছে বিভিন্ন প্রকার মাদক  » «   জামালগঞ্জের শান্তিপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিষপান,তিন সন্তানের মৃত্যু,স্বামী আটক  » «   বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না : খন্দকার মুক্তাদির  » «   জৈন্তাপুর সীমান্ত: চোরাচালানের অভয়ারণ্যে,  আসছে গরু,মহিষ, মাদকদ্রব্য:শীর্ষে নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন  » «   মানুষ আজকে শেখ হাসিনাকে এক মিনিটের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  » «   দেশের সাধারণ মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন চায় : কাইয়ুম চৌধুরী  » «  

৭ই মার্চের ভাষণ একটি ধ্রুপদী ভাষণ ও একটি ধ্রুপদী দিন

মো: আব্দুল মালিক::১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে বাস্তিল বিক্ষোভ হয়। এই বিক্ষোভের ফলে কুখ্যাত বাস্তিল দূর্গের পতন এবং ফরাসি বিপ্লব সংগঠিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত ‘থার্ড স্টেট’ বা সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এর ফলে জয় হয় সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার। তাই ১৪ জুলাইকে ধ্রুপদী দিন বলা হয়। তেমনিভাবে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেই ভাষণটি একটি ধ্রুপদী ভাষণ এবং সেই দিনটি একটি ধ্রুপদী দিন। কেননা এ ভাষণের গর্ভ থেকে একটি স্বাধীন জাতির জন্ম হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দশ লক্ষাধিক জনতার সমাবেশে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তা তাৎক্ষণিক হলেও এর পটভূমি তাৎক্ষণিক ছিল না। এই ভাষনের পটভূমি রচিত হয়েছে ১৯০ বছরের বৃটিশ ও ২৪ বছরের পাকিস্তানী শাসন, শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন থেকে মুক্তির পটভূমিতে।

এই পটভূমি তৈরিতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত কাজ করে ইয়াহিয়ার ১লা মার্চের বেতার ভাষণ। এই ভাষণে তিনি ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিতব্য সংসদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। তাৎক্ষণিক এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ঐদিন বিকেলে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চের কর্মসূচী ঘোষনা করে বলেন, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভা হবে। ঐ জনসভায় আমি পরবর্তী ঘোষনা দেব। ৩রা মার্চ থেকে ৬ই মার্চ পর্যন্ত বঙ্গন্ধুর নির্দেশে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু কি স্বাধীনতা ঘোষণা দিবেন ? না অন্যকিছু, এ নিয়ে সমগ্র জাতি, শাসকগোষ্ঠী ও বিশ্ববাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ উৎকষ্ঠা বিরাজ করছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় জাতীয় ও আন্র্Íজাতিক গণমাধ্যমে। দ্য গার্ডিয়ান ৫ মার্চ, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ ৬ মার্চ, দ্য সানডে টাইমস ৭ মার্চ, দ্য অবজারভার ৭মার্চ, সংখ্যায় স্বাধীনতা ঘোষণার সম্ভাবনার কথা ছাপে। বাঙালি জাতির প্রত্যাশাও তেমন।

৭ই মার্চের ভাষণের পূর্বে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৬ মার্চ এক ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন এবং চরমপন্থী রাজনীতিবিদ, ছাত্র ও যুব নেতারা স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুকে চাপ দিচ্ছেন, অন্যদিকে মধ্যপন্থী, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা এই মুহুর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা না দেওয়ার পক্ষে। অপরদিকে পাকিস্তান সরকার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই সভাস্থলে সামরিক ও বিমান হামলা করবে। উপরন্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত যোসেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে তাঁকে বলে গেছেন বঙ্গবন্ধু যেন এই মুহুর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা না করেন। এটা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রচ্ছন্ন হুমকি। এ সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি একটানা ৩৬ ঘন্টা বৈঠক করেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়বস্তু ঠিক করতে পারে নি। সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধু যা ভালো মনে করেন তাই বলবেন। অভ্যন্তরীন ও আন্তার্জাতিক এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু খাতা কলম ছাড়া তাঁর অমর কবিতাখানি পাঠ করেন। ১৮/১৯ মিনিটের এই ভাষণে ১১০৫টি শব্দ ছিল। এই শব্দগুলো উচ্চারনের মধ্য দিয়ে তিনি পূবার্পর সমস্ত পরিস্থিতি বর্ণনা করে বাঙালি জাতিকে প্রয়োজনীয় দিক নিদের্শনা দিয়ে কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই কৌশলী ভাষনে পরস্পর বিরোধী উভয় পক্ষ খুশি হন এবং পাকিস্তান সরকার বা তার দোসররা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষণার দায়ে দোষী সাব্যস্থ করতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন লিখেছেন,‘৭ মার্চ শেখ মুজিব কী বলবেন তা ঠিক করার জন্য ৬ মার্চ আওয়ামী লীগের কার্যনিবার্হী সভা। সারা দেশে প্রত্যাশা দেখা দিয়েছিল যে, ৭ মার্চ শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা দেবেন। বস্তুত, ছাত্র ও যুবসমাজ এ ধরণের ঘোষণার প্রবল পক্ষপাতী ছিল। ৭ মার্চ নাগাদ দলীয় সদস্যদের মধ্যে সামান্যই সন্দেহ ছিল যে, ছাত্রসমাজ, যুবসম্প্রদায় এবং রাজনীতি-সচেতন ব্যাপক জনগণের কাছে স্বাধীনতার চেয়ে কম কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না।’ সুতরাং দল ও দলীয় নেতা শেখ মুজিবের উপর দায়িত্ব এসে পড়েছিল এমন কিছু না বলা, যা পাকিস্তানি পক্ষকে তখনই অজুহাত দেবে অপ্রস্তুত জনগণের ওপর ঝঁাপিয়ে পড়ার। আবার একই সঙ্গে চাঙ্গা রাখতে হবে আন্দোলন ও জনগণকে। এ ভারসাম্য বজায় রাখা নিতান্ত সহজ কাজ ছিল না। এছাড়া মনে রাখতে হবে তখনও তাঁকে কাজ করতে হচ্ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থেকে। যেখানে তাঁর অবস্থান ছিল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে। এখন ব্যাপারটি যত সহজ মনে হচ্ছে তখন নিশ্চয়ই তা তত সহজ ছিল না। এছাড়াও বিশেষ করে ছাত্রদের প্রবল চাপ ছিল। তারাই ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে ফেলেছেন। আন্দোলনে তারাই ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তাদের বিরূপ করা সম্ভব ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ওই দিন কত মানুষ, কত মত, কত কাগজ, কত পরামর্শ। আব্বা সবই ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। সব কাগজই গ্রহণ করেছেন। সারাটা দিন এভাবেই কেটেছে । যখন জনসভায় যাওয়ার সময় হল তার কিছুক্ষণ পূর্বে আব্বা কাপড় পরে তৈরি হবেন। মা আব্বাকে ঘরে নিয়ে এলেন। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আব্বাকে বললেন, ১৫ মিনিট চুপচাপ শুয়ে থাকার জন্য। আমি আব্বার মাথার কাছে বসে মাথাটা টিপে দিচ্ছিলাম। মা বেতের মোড়াটা টেনে আব্বার কাছে বসলেন। হাতে পানদান, ধীরে ধীরে পান বানাচ্ছেন আর কথা বলছেন। আমার মা আব্বাকে বললেন, সমগ্র দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার ভাগ্য আজ তোমার উপর নির্ভর করছে। তুমি আজ একটা কথা মনে রাখবে, সামনে তোমার লাঠি, পেছনে বন্দুক। তোমার মনে যে কথা আছে তুমি তাই বলবে। অনেকে অনেক কথা বলতে বলেছে। তোমার কথার উপর সামনের অগনিত মানুষের ভাগ্য জড়িত, তাই নিজে যেভাবে যা বলতে চাও নিজের থেকে বলবে। তুমি যা বলবে, সেটাই ঠিক হবে। দেশের মানুষ তোমাকে ভালবাসে, ভরসা করে। ভাষণটি ২৩ মিনিটের ছিল, তবে ১৮-১৯ মিনিটের মতো রেকর্ড করা হয়েছিল।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে কেউ কেউ আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ এ্যাড্রেস, মার্টিন লুথার কিং এর আই হ্যাভ এ ড্রিম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উইনস্টোন চার্চিলের ভাষণের সাথে তুলনা করেন। আসলে সেই তুলনা সঠিক নয়। ঐ সব ভাষণের প্রেক্ষাপট আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি যে প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দিয়েছেন সেই প্রেক্ষাপটে আজ পর্যন্ত কেউ বক্তৃতা দেন নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, কাজী নজরুল ইসলাম, আব্দুল গাফফার চৌধুরী একুশের কালজয়ী গানের রচয়িতা। এভাবে বিশ্বের অনেক কবি ও গীতিকার অনেক অমর কবিতা ও গান রচনা করেছেন। কিন্তু তাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর পার্থক্য হলো-উনারা লিখেছেন চেয়ার টেবিলে বসে, কাগজ কলম হাতে নিয়ে, অনেক সময় ধরে, অনেক বার কাট ছাট করে। আর বঙ্গবন্ধু তা রচনা করেছেন লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত সম সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে। তঁার সামনে লাটি হাতে মারমুখি জনতা, চতুপাশের্ব বন্দুক-বোমা হাতে আর্মি, পুলিশ, মাথার উপরে পাকিস্তানী যুদ্ধ বিমান আর তিনিও তাঁর জনতা নিরস্ত্র।

৭ই মার্চের এই অমর কবিতা সম্পর্কে অনেকে অনেক অভিমত দিয়েছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, ‘এই ভাষণ একটি মহাকাব্য। আর এই ভাষণটি যিনি দিয়েছেন, তিনি একজন মহাকবি।’ আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘এই ভাষণ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির মহাকাব্য। কিন্তু ১৬ কোটি বাঙালির হৃদয়ে মুদ্রিত।’ লন্ডনের সানডে টাইমস বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দিয়েছিলো “অ ঢ়ড়বঃ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপং্থ হিসেবে। ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রেজিত বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর ঢাকায় এসে এক বুদ্ধিজীবি সমাবেশে বলেছিলেন, ‘তোমাদের ৭ই মার্চের দিনটি ও ভাষণটি শুধু ঐতিহাসিক দিন এবং ঐতিহাসিক ভাষণ নয়, এটি ধ্রুপদী দিন ও ধ্রুপদী ভাষণ, যেদিন এ ভাষণের গর্ভ থেকে একটি স্বাধীন জাতির জন্ম হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, ‘স্বতঃস্ফুর্ত, স্বতোৎসারিত অমর কাব্য, অসাধারণ পংক্তি, যার অন্তমিল, ধ্বনি-ব্যঞ্জনা, শব্দ-ঝংকার যুগ যুগ ধরে মোহিত আবেগায়িত বিমুগ্ধ করে, পেঁৗছে দেবে এক মহত্ত্বর বোধে, সে এক তুলনাহীন শব্দচয়ন, স্বতঃস্ফুর্ত সাবলীলতায় লেখা অন্যবদ্য কবিতা, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মাত্রা, ছন্দে, শব্দ গঠনে এ এক অসামান্য কবিতা, এই উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘোষণা মূহুর্তেই আবহমান বাংলার ও বাঙালির জীবন যেন স্পন্দিত ও প্রতিধ্বনিত হয়ে ওঠে, জেগে উঠে তার হাজার বছরের ইতিহাস, সভ্যতা, তার মনোজগৎ, এক সঙ্গে গেয়ে উঠে বাংলার সব পাখি, প্রস্ফুটির হয়ে ওঠে সব ফুল, ভরে ওঠে সব নদী, আমরা মহাসাগরের কলধ্বনি শুনতে পাই, আমাদের সাহসে, শৌর্যে, শক্তিতে দাঁড় করিয়ে দেয় সর্বশ্রেষ্ট মানবিক কর্তব্যবোধের পুরোভাগে, বাঙালির গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের পরম ত্যাগ ও বীরত্বের মুখে, আমরা আমাদের চেয়ে অনেক বড় হয়ে উঠি।’

‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি জাতির, জনগোষ্ঠির মুক্তির কালজয়ী সৃষ্টি এক মহাকাব্য। বহুমাত্রিকতায় তা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্ব মানবতার জন্যও অবস্মিরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তে এটিই স্বীকৃত। ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত  দ্বি-বার্ষিক সম্মোলনে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্থাটির ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’-এ অন্তভুর্ক্ত করেছে। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দু’বছর ধরে প্রামাণ্য দলিল যাঁচাই-বাছাই শেষে নির্বাহী কমিটি কতর্ৃক চূড়ান্তাভাবে গৃহীত হয়। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর হলেও জাতিসংঘের মতো বিশ্বসংস্থার এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর ফলে বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনাময়ী ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বাব্যাপি মানবজাতির মূল্যবান ও ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও গৃহীত হলো। স্বাধীনতার জন্য আত্নোৎসর্গকৃত ৩০ লাখ শহীদ আর সম্ভ্রম হারানো কয়েক লাখ মা-বোনসহ আমাদের সবার জন্য এটি এক মহা আনন্দ ও বিরল সম্মানের ঘটনা। স্মর্তব্য, ১৯৯৯ সালে ইউনেষ্কো আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা-শহীদ দিবসকে ‘আন্তার্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে এখন সারাবিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাষাভাষি জনগোষ্ঠির নিজ ভাষার অধিকার সংরক্ষণের প্রতীক হিসেবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই ভাষা-আন্দোলনে শুধু সংগঠকের ভূমিকাই পালন করেননি, তিনি ছিলেন ভাষা-আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দিদের অন্যতম। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে।

গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক থেকে ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বার্লিনে দেয়াল ভাঙার আহ্বান সংবলিত ভাষণ পর্যন্ত আড়াই হাজার বছরের বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারি ৪১ জন সামরিক-বেসামরিক জাতীয় বীরের বিখ্যাত ভাষণ নিয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ঔধপড়ন ঋ ঋরবষফ, ‘ডব ঝযধষষ ঋরমযঃ ঃড় ঞযব ইবধপযবং. ঞযব ঝঢ়ববপযবং ঞযধঃ ওহংঢ়রৎবফ ঐরংঃড়ৎু শিরোনামে একটি গ্রন্থ ২০১৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থে অন্যান্যের মধ্যে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, অলিভার ক্রমওয়েল, জর্জ ওয়াশিংটন, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, যোসেফ গ্যারিবোল্ডি, আব্রাহাম লিংকন, ভ্লাদিমির লেনিন, উইড্রো উইলসন, উইনস্টন চার্চিল, ফ্রাষ্কলিন রুজভেল্ট, চার্লস দ্য গল, মাও সেতুং, হো চি মিন প্রমুখ বিশ্ব নেতাদের বিখ্যাত ভাষণের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তভুর্ক্ত হয়েছে।’ এটা কম গৌরবের কথা নয়।

 

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.