সংবাদ শিরোনাম
গোয়াইনঘাটে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু  » «   যাদুকাটায় নৌকা ডুবে পাথর শ্রমিকের মৃত্যু  » «   দোয়ারাবাজারে অবৈধ ভাবে বসত ঘরসহ দোকান পার্ট নির্মান ও রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ  » «   সিলেটে জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা  » «   সিলেটে তালামীযে ইসলামিয়ার মীলাদুন্নবী (সা.) র‍্যালি অনুষ্ঠিত  » «   দক্ষ জনশক্তি দেশ বিদেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখবে-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  » «   খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে-নাসিম হোসাইন  » «   দোয়ারাবাজারে ভারতীয় চিনিসহ আটক ২    » «   দোয়ারাবাজারে চোরাইপথে আসা ভারতীয় ৩৬ গরুসহ আটক ৮  » «   চুনারুঘাটে বানের পানির মত আসছে বিভিন্ন প্রকার মাদক  » «   জামালগঞ্জের শান্তিপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিষপান,তিন সন্তানের মৃত্যু,স্বামী আটক  » «   বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না : খন্দকার মুক্তাদির  » «   জৈন্তাপুর সীমান্ত: চোরাচালানের অভয়ারণ্যে,  আসছে গরু,মহিষ, মাদকদ্রব্য:শীর্ষে নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়ন  » «   মানুষ আজকে শেখ হাসিনাকে এক মিনিটের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  » «   দেশের সাধারণ মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন চায় : কাইয়ুম চৌধুরী  » «  

রমজানের রাতে খতম তারাবী না তাহাজ্জুদ

লেখক মো. আব্দুল মালিক::রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। এই রমজান মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস সব আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। তাক্বাওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ্টি লাভ করাই রোজার প্রধান উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা যায় এ থেকে তোমাদের মধ্যে তাক্বওয়ার গুনাবলী সৃষ্টি হবে।” সূরা বাকারা: ১৮৩। মাহে রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত অসীম। আল-কুরআন সহ সকল আসমানী কিতাব রমজান মাসে নাজিল হয়েছে। হাজার মাসের চাইতে উত্তম লাইলাতুল ক্বদর এই রমজান মাসেই। রোজা ফরজ হয় এই রমজান মাসেই। এই মাসে জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধু মাত্র রমজানের জন্য বাকী এগারো মাস জান্নাতকে সাজানো হয়। এই মাসে আল্লাহ পাক পথভ্রষ্ঠ শয়তানকে বেঁধে ফেলেন, যাতে সে মোমিনদের ক্ষতি করতে না পারে। এ মাসের একটি ফরজ আদায় অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান। আর একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজের সমান। এই মাসে যে কোনো দান-সদকা, ভাল কাজের প্রতিফল আল্লাহপাক ৭০গুণ করে দিয়ে থাকেন। যা অন্য মাসে মাত্র ১০গুণ। “জান্নাতের একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোযাদারকে ঐ দরজা দিয়েই ডাকা হবে। যে রোজাদার এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে কখনও পিপাসিত হবে না”।-(তিরমিযী)। “যে ব্যাক্তি আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ পাক তাকে দোযখ থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন।”-(বুখারী)। “রোজাদার দুবার আনন্দ লাভ করে- (এক) ইফতারের সময়, (দুই) আল্লাহকে দেখার সময়।”-(বুখারী ও তিরমিযী)। রোযা ও কুরআন উভয়ই বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোজা রাখা হয় আল্লাহর জন্য আর এর প্রতিদান দিয়ে থাকেন স্বয়ং আল্লাহ। ইসলামের তৃতীয় রুকন হচ্ছে রোজা।

শারিরীকভাবে সক্ষম, সাবালক ও আক্কেল প্রত্যেক মুসলমান পবিত্র রমজান মাসে দিনের বেলা রোযা এবং রাতে বাদ এশা তারাবীর নামায আদায় করেন। যদিও রোযার সাথে তারাবীর কোনো সম্পর্ক নেই। রোযা হচ্ছে ফরজ, তারাবী হচ্ছে সুন্নত। তারাবীর নামায না পড়তে পারলেও অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। মাযহাব অনুযায়ী তারাবীর নামায ৮/১২/২০ রাকাত পড়া হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে খতম তারাবী পড়ার প্রতি মুসল্লিদের ঝোঁক খুব বেশি। এর একটি কারণ হতে পারে রমজান শরীফে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং শোনায় সওয়াব অনেক বেশি। তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিতে খতম তারাবীর মাধ্যমে কুরআন পড়া ও শোনার ব্যবস্থা করা হয় তা সঠিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে কি না তা পর্যালোচনা করার দাবী রাখে। মহাপুণ্যময় মাস পবিত্র রমজানের পরিপূর্ণ সওয়াব প্রাপ্তির আশায় আমরা দিনের বেলা ক্ষুধা, তৃষ্ণাকে তুচ্ছজ্ঞান করে সারাদিন উপবাস থাকি, অনেক হালাল কাজ থেকে বিরত থাকি এবং রাতের বেলা অনেক কষ্ট করে ২০ রাকাত তারাবী নামায আদায় করি। আর এত কষ্টের এই তারাবী নামায যদি আমাদেরকে সওয়াব না দেয়, অতি পুণ্য ও বরকতের রমজানে কালিমা লেপন করে তাহলে এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে? পাঠক ভাবতে পারেন, এ আবার কোন ফেতনার কথা শুনি। যে তারাবী নামায মুসলিম জাহানে শত শত বছর ধরে চলে আসছে এবং আলেম উলামা নির্বিশেষে সকল মুসলমান অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় পূণ্যের কাজ হিসেবে অনেক কষ্টে তারাবী নামায আদায় করে আসছেন, সেই তারাবী নামায কী করে বেঠিক হতে পারে? একটু ধৈর্য ধরে, অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে পড়–ন, তারাবী নামাযের ইতিহাস এবং বাংলাদেশে খতমে তারাবীর বর্তমান অবস্থা। তারপর নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন এবং সিদ্ধান্ত নিন।

রোজা ফরজ হয় হিজরী দ্বিতীয় সনে এবং দশম হিজরীর রোজা পালন শেষে মহানবী (স) ইন্তেকাল করেন। এ হিসেবে তিনি মোট ৮বার রমজান শরীফ পেয়েছিলেন। প্রতি রমজান মাস ৩০ দিন ধরে হিসেব করলে আট বছরে হয় ২৪০ দিন, আর ২৯ দিন ধরে হিসেব করলে হয় ২৩২ দিন। যদি নবী করীম (স) এর জীবদ্দশায় প্রতিটি রমজান মাসকে যদি ২৯দিন ধরেও হিসেব করি তাহলে তিনি মোট ২৩২ দিন দিনে রোজা এবং রাতে তারাবী নামায আদায় করার কথা। কিন্তু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তিনি প্রতিদিন রোজা রেখেছেন কিন্তু আমরা বর্তমানে যে পদ্ধতিতে তারাবীর নামায আদায় করি, তিনি সে পদ্ধতিতে একদিনও তারাবীর নামায আদায় করেননি। মুহাম্মদ (স) ফরজ নামায মসজিদে এবং অন্যান্য নামায নিজ ঘরে আদায় করতেন এবং এভাবে আদায় করার জন্য সবাইকে বলতেন। এতে সওয়াব বেশি। মহানবী (স) মাত্র দুই বা  তিন দিন মসজিদে তারাবী নামায আদায় করেছেন। কোনো কোনো হাদীস দ্বারা প্রমাণীত ২৩, ২৫ ও ২৭ রমজান তিনি এতেকাফরত অবস্থায় মসজিদের মেহরাবে নয়, এতেকাফের জন্য মসজিদের একপাশে চাটাই ঘেরা অস্থায়ী কামরায় একা একা নামায পড়ছিলেন তখন উপস্থিত অল্প সংখ্যক সাহাবা তা দেখতে পেয়ে তাঁরাও তাঁর পিছনে একতেদা করেন। এভাবে পর পর দুই বা তিন দিন চলে । চতুর্থ দিন বহু সংখ্যক সাহাবা মসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু নবীজী আস্থায়ী খাস কামরা থেকে বের হলেন না। তাঁরা ডাকাডাকি করলেন, দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেন এবং উচ্চস্বরে শোরগোল করলেন। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, “হে লোকেরা, তোমাদের অব্যাহত কার্যকলাপ দেখে আমার মনে হচ্ছে অচিরেই উহা তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হবে। সুতরাং তোমাদের কর্তব্য হচ্ছে, ‘নিজ নিজ ঘরে নামায আদায় করা। কেননা কোনো ব্যক্তি তার নিজ ঘরে যে নামায আদায় করে তাই সর্বোত্তম; ফরজ নামায ছাড়া।” কোনো কোনো হাদীসে ২৩, ২৫, ২৭ তারিখে নামায পড়ার কারন হিসেবে নবীজির শবেক্বদর তালাশ করার কথা বলা হয়েছে। তবে মুহাম্মদ (স) রমজান শরীফে  রাতে মসজিদে দুই বা তিন দিন যে নামায আদায় করেছিলেন তা সালাতুল তাহাজ্জুদ ছিল না কিয়ামো রামাদান ছিল নাকি তারাবী নামায ছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে সেই নামায যে বর্তমান পদ্ধতির তারাবী নামায ছিল না তা অনেকটা স্পষ্ট। তারাবী নামায সংক্রান্ত যে সব হাদিস উপস্থাপন করা হয় তাতে দেখা যায় নবী করিম (স) যে দুই বা তিন দিন রমজানে মসজিদে নামায আদায় করেছেন তা করেছেন ঘুম থেকে উঠে রাতের শেষ দিকে, এশার পর নয়। এই ছিল নবী কারীম (স) এর জীবদ্দশায় তারাবী নামায আদায়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

তিনির ইন্তেকালের পর হযরত আবুবকর (রা) এর খিলাফত কালে তারাবী নামায জামাতবন্দী হয়ে পড়া হয়নি, এমন কী হযরত ওমর (রা) এর শাসন কালের প্রথম দিকেও। হযরত ওমর (রা) এর খিলাফত কালের শেষ দিকে রমজান মাসের কোনো এক রাতে তিনি মসজিদে গিয়ে দেখলেন মুসল্লিরা ছোট ছোট জামাতে বা একা একা যার যার মত নামায আদায় করছেন। এতে কেউ দাঁড়ানো, কেউ সিজদায়, কেউ রুকুতে, কেউ সামনে পিছনে যাচ্ছেন, মোট কথা হযবরল অবস্থা। এই বিশৃঙ্খলা দেখে তিনি নিজে নিজে মন্তব্য করলেন, “একটা নিয়ম শৃঙ্খলা থাকা দরকার।” তিনি তখন হযরত উবাই বিন কাব (রা) কে নির্দেশ দিলেন তঁার ইমামতিতে একই জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য। এভাবে জামাতবন্দী হয়ে তারাবী নামায পড়া শুরু হয় যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে। যেহেতু রমজান মাসে ক্বোরআন তেলাওয়াত করা এবং শোনায় সওয়াব অত্যন্ত বেশি, তাই হয়ত ঐ সময় কোরআনে হাফেজরা তারাবী নামাযে কোরআন খতম করতেন এবং মুসল্লিরা তা শুনে অশেষ সওয়াব হাসিল করতেন। কিন্তু এর বিনিময়ে হাফেজ সাহেবরা কোনো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিতেন না বা মুসল্লিরাও দিতেন না। আমাদের দেশে বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চলছে এর সম্পূর্ণ উল্টো। আমাদের দেশে রমজান শরীফ আসন্ন হলে খতম তারাবীর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে সুকন্ঠি হাফেজ খোঁজা হয়, সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, তারপর নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার হাফেজ সাহেবেরাও বিভিন্ন মাধ্যমে বড় বা ধনী মহল্লার খোঁজ করে থাকেন। বড় বা ধনী মহল্লার মসজিদে নিয়োগ পেতে কখনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা প্রভাবশালী ব্যাক্তির প্রভাবকে কাজে লাগান। তারাবীর নামাযে তেলাওয়াতে ভুলভ্রান্তি ধরার জন্য অনেক ক্ষেত্রে একাধিক হাফেজ রাখা হয়। নামাযের মধ্যে তেলাওয়াতে প্রায়ই ভুলভ্রান্তি ধরা পড়লে হাফেজ সম্পর্কে মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ ধারণা দেখা দিতে পারে বিধায় অনেক সময় একাধিক হাফেজের মধ্যে ভুল না ধরার জন্য অলিখিত চুক্তি হয়ে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ২৭ রমজান খতম সমাপ্ত হয়। কোরআন খতমের ২/৪ দিন পূর্বে মসজিদের মুতাওয়াল্লি বা গণ্যমান্য কেউ তারাবী নামায শেষে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন অমুক দিন খতম তারাবী শেষ হবে, দোয়া হবে, আপনারা যে যা পারেন তারাবীর হাদিয়া দিবেন বা হাফেজ সাহেব আমাদেরকে আল্লাহর ওয়াস্তে কুরআন শুনিয়েছেন, আমরা ও তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে দান করবো। এ ধরনের ঘোষনার পর শহরের মসজিদ, বড় বা ধনী মহল্লার মুসল্লিরা স্ব-ইচ্ছায় যা দান করেন তাতে হাফেজদের সম্মানজনক সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে যায়। সমস্যা দেখা দেয় যে সব মহল্লা ছোট, তুলনামূলক দরিদ্র বা সরকারী-বেসরকারী, স্বায়তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানের মসজিদ সেখানে। এসব মসজিদে মুসল্লিদের স্বেচ্ছায় দান সন্তোষজনক না হওয়ায় বাধ্যতামূলক চাঁদা আদায় করা হয়। দেখা গেছে মহল্লার যে পরিবারে মসজিদে গিয়ে  নামায পড়ার মত পুরুষ মানুষ নেই সে পরিবারকে মহল্লার চাপে বা প্রতিষ্ঠানের মসজিদের ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে অধস্তন কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হচ্ছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে মন কষাকষি, ঝগড়া ফ্যাসাদও হয়। তাছাড়া হাফেজ সাহেবদের বাড়ি মসজিদ থেকে অনেক ক্ষেত্রে দূরে থাকায় তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে একই রকম সমস্যা হয়। এই গেল একটি দিক।

অন্য দিক হলো ১২ মাস ইমাম হিসেবে যিনি ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামায পড়ালেন, মসজিদের খেদমত করলেন তাঁকেও এই সময় হাফেজ সাহেবদের সাথে কিছু দান করা হয়। তবে এই দান হাফেজ সাহেবদের চেয়ে শত সহস্র গুণ কম। এতে আপনা আপনি প্রমাণ হয়ে যায় ফরজের চাইতে সুন্নতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যদিও কোটি কোটি সুন্নত একটি ফরজের সমান নয়। তাছাড়া তারাবীর জামাতকে সুন্নত ধরা হলে সেটা রাসুল (স) এর সুন্নত নয়, এটা হযরত ওমর (রা) এর সুন্নত। বাস্তবে দেখা যায় অনেক মুসল্লি এশার জামাতে যোগ না দিয়ে তারাবীর জামাতে যোগ দেন। এর কারণ মুসল্লিদের এশার জামাতের চাইতে তারাবীর জামাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। অনেক মহল্লায় খতম তারাবী পড়া হবে না সূরা তারাবী পড়া হবে, এই নিয়ে মতানৈক্য হয়। আবার একাধিক হাফেজের মধ্য থেকে কোন হাফেজকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়েও মতানৈক্য হয়। এতে অনেকক্ষেত্রে প্রভাবশালী বা অধিকাংশের মতামত প্রধান্য পায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মহল্লার দূর্বল বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী মনক্ষুন্ন হন। অনেকে রাগ করে নিজ মহল্লায় না গিয়ে অন্য মহল্লায় গিয়ে নামাজ আদায় করেন। এতে মহল্লাবাসীর মধ্যে ফিতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়। বলা হয়ে থাকে হাফেজ সাহেব আল্লাহর ওয়াস্তে কোরআন শুনিয়েছেন, আর মুসল্লিরা আল্লাহর ওয়াস্তে হাদিয়া দিচ্ছেন এর মধ্যে পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য নেই। এই ধারনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক নয়। অভিজ্ঞতায় দেখাগেছে কোনো হাফেজ সাহেবকে হাদিয়া কম দেয়া হলে রাগ করেছেন, মনক্ষুন্ন হয়েছেন, বিরূপ মন্তব্য করেছেন বা পরের বৎসর চাইলে ও পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ আবার রমজানের আগেই হিসেব করে ফেলেন খতম তারাবী পড়াইয়া যে হাদিয়া পাব তা দিয়ে এই সেই করব ইত্যাদি। তারাবীর হাদিয়া প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো কোনো মুসল্লির ধারনা এ রকম যে, আমি যদি হাদিয়া না দেই তাহলে আমার নামাযই হবেনা বা সওয়াব কম হবে। এটা বুঝা যায় তখনই, যখন কোনো মহল্লার এক বা একাধিক ব্যক্তি বলেন, এবারের খতম তারাবীর সমস্ত হাদিয়া আমি বা আমারা দেব। তখন মহল্লার অন্যান্যরা তাতে জোর আপত্তি জানান। আবার হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পাশের মহল্লার সাথে অনেক ক্ষেত্রে কম্পিটিশন করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক জায়গায় তারাবীর হাফেজ সাহেবকে ইমাম হিসেবে দেখানোর জন্য ওয়াক্তিয়া নামাযের ২/৪ জামাতে ইমামতি করতে দেয়া হয়। এটা এক ধরনের হিল্লা, যা আল্লাহ তায়ালার না বুঝার কথা নয়। পাঠক গভীর মনযোগের সহিত ভেবে দেখুন অনেক ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তি মূলকভাবে আমরা যে খতম তারাবীর আয়োজন করছি, হাদিয়া-দিচ্ছি তা কী সঠিক হচ্ছে ? ইবাদতের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তি কী চলে ? নামায এবং তেলাওয়াতের বিনিময় দেওয়া নেওয়া যায় কী না ? দেওয়া গেলে ফরজের হাদিয়া বেশি হবে না সুন্নতের হাদিয়া বেশী হবে ? যেখানে পবিত্র কোরআন শরীফে হাদিয়া নেওয়ার কথা নিষেধ করা আছে। “তোমরা মানুষকে ভয় করোনা বরং আমাকে ভয় করো এবং সামান্য তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে আমার আয়াতকে বিক্রি করোনা।” সূরা মায়েদা -৪৪।

দারুল ইফতাহ ও দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার ফতোয়া হাচ্ছে ‘যে হাফিজ সাহেব টাকার লোভে কোরআন মজিদ শোনায় তাহা শোনার চাইতে, যে সুরা তারাবী আদায় করে তাহার মুক্তাদি হওয়া ভাল। যদি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোরআন শরীফ শোনানো হয় তাহলে ইমামের ও সওয়াব হইবে না, মুক্তাদিরও সওয়াব হইবে না।’ পাঠক আমরা আল্লাহর হুকুম এবং নবীর তরিকায় তারাবি আদায় করছি, না আমাদের মনগড়া করছি ভেবে দেখুন। পক্ষান্তরে পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক সূরা ‘বণি ইসরাইল’ এর ৭৯ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন, ‘হে মুহাম্মদ (স) রাত্রির একাংশে কোরআন তেলাওয়াত সহ তাহাজ্জুদ নামায আদায় করুন। ইহা আপনার জন্য অতিরিক্ত নামায। শীঘ্রই আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ (প্রশংসিতস্থান) দান করিবেন।’ হযরত মুগিরা (রা) হইতে বর্ণিত, ‘রাত্রিকালে হযরত মুহাম্মদ (স) অতি দীর্ঘ সময় পযন্ত দাঁড়াইয়া তাহাজ্জ্বাদের নামায আদায় করিতেন। ফলে তাঁহার পা মোবারক রসাক্রান্ত হইয়া পড়িত। তিনি জিজ্ঞাসিত হইতেন, হে আল্লাহর রাসুল আপনি এরূপ কষ্ট করেন কেন ? অথচ আপনার পূর্বের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করা হয়েছে। উত্তরে হযরত মুহাম্মদ (স) বলিতেন, আমি কী আল্লাহর শুকুর আদায়কারী বান্দা হইব না।”-(বোখারী, মুসলিম)। রাসুলে পাক (স) এরশাদ করেন, অর্ধরাত্রির পর তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নফল নামায দুনিয়া ও উহার মধ্যে যত সম্পদ আছে, উহার চেয়ে বেশি মূল্যবান। যদি ইহা আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করিতাম তাহলে এই নফল নামায আমি ফরজ করে দিতাম।’ রাসুল (স) সারা বছর ব্যাপী রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন এরপর তিনি বিতরের নামায আদায় করতেন। এ তাহাজ্জুদের নামাযকে কিয়ামুল লাইলের নামাযও বলা হয়। আর রমজানে এ নামাযকে বলা হয় কিয়ামু রামাদ্বান। অনেক সহী হাদিসে এ রকম বর্ণনা পাওয়া যায় বিধায় পবিত্র রমজান শরীফে বাদ এশা বর্তমান পদ্ধতির ২০ রাকাত তারাবী না শেষ রাতে তাঁর সারা জীবনের আমল ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামায গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন।

লেখক:শিক্ষক, কলামিস্ট

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.