সিলেটপোস্ট আন্তর্জাতিক ডেস্ক::টিকে থাকার সব ধরনের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শনিবার (৯ এপ্রিল) দেশটির জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হয়। এতে ইমরানের বিরুদ্ধে ১৭৪ জন এমপি ভোট দেন। ইমরানকে হটাতে বিরোধীদের দরকার ছিল ১৭২ ভোট।
ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ইতিহাসে শনিবার এক অন্য ইতিহাসের জন্ম হলো। এই প্রথম দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হলেন। এর আগে ১৯৮৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও ২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। তবে উভয়েই সেই ভোটে জিতে ক্ষমতায় টিকে গিয়েছিলেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পাকিস্তানের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। প্রথম থেকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনে বিরোধীদের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করেন স্পিকার। দিনভর এ নিয়ে জাতীয় পরিষদে শোরগোল বাক বিতণ্ডা চলে। স্পিকার দফা দফায় অধিবেশন মুলতবি করেন। অনাস্থা ভোটের আগে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ইমরান খানের প্রতি দ্ব্যর্থহীন আস্থা দেখিয়ে পদত্যাগ করে পার্লামেন্ট ছাড়েন।
পদত্যাগের আগে আসাদ বলেন, মন্ত্রিসভা থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছিলেন। যা তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলের নেতাকে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি জাতীয় দায়িত্ব ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে আমি প্যানেল চেয়ারম্যান আয়াজ সাদিককে অধিবেশন পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি।
পরে পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে স্পিকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাবেক স্পিকার আয়াজ সাদিক। পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১২টায় পার্লামেন্টের সব দরজা বন্ধ করে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। এরপর রাত একটায় ফল ঘোষণা করেন আয়াজ সাদিক। পার্লামেন্টের ৩৪২ আসনের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৭৪টি। ইমরান খানকে পরাজিত করতে বিরোধীদের প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোটের।
আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব তোলে বিরোধীরা। তবে অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। পরে বিরোধীরা ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলকে অবৈধ বলে রায় দেন। সেই সঙ্গে পার্লামেন্ট অধিবেশন চালু রেখে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটির নির্দেশ দেন।