সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::সুনামগঞ্জের ছাতকে মৃত. ব্যক্তিকে দাতা হিসাবে সাজিয়ে ভূয়া জাল দলিল সৃজন করে জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।
জানা যায়, উপজেলার হাতধনালী, পশ্চিম চৌচাক ও দিমকা মৌজায় প্রায় ৩.৪৭৫০ একর ভূমির
রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন খুরমা দক্ষিন ইউনিয়নের হাতধনালী গ্রামের হাফিজ মাহমুদ আলী ওরফে হবিল আলী। তিনি মৃত্যুকালে দুই পুত্র কালা মিয়া ও ময়না মিয়াকে রেখে যান। সেই হিসাবে কালা মিয়া উক্ত মৌরশী সম্পত্তির অর্ধেক অংশের মালিক ও দখলকার থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর স্বাভাবিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। যার মৃত্যু নিবন্ধন নং- ২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪। কালা মিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে আকলুছ মিয়াসহ অন্যান্য ছেলে মেয়েরা উত্তরাধিকারী সুত্রে মৌরসী সম্পত্তির স্বত্ববান ও দখলকার হিসাবে ন্যাস্থ আছে।
অভিযোগ উঠেছে, আকলুছ মিয়ার পিতা কালা মিয়ার মৃত্যুর পর ময়না মিয়ার ছেলে সন্ত্রাসী ও ভূমি
খেকো কবির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও মো.শায়েস্তা মিয়া গংরা প্রকাশ্যে হুমকি ধমকী দিয়ে আকলুছ মিয়া গংদের ভূমি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা করেন। এতে আকলুছ মিয়া নিরুপায় হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য
ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সালিশ বৈঠক ডাকলে প্রতিপক্ষ ওই সন্ত্রাসী ও ভূমি খেকো চক্র উক্ত ভূমি দলিল মূলে ক্রয় করেছে বলে জানায়। দলিল দেখতে চাইলে আপত্তি জানায় ওই ভূমি খেকো চক্র। এর পর আকলুছ মিয়া ছাতক সাব-রেজিষ্টার অফিসে তল্লাশী দিয়ে দলিলের সন্ধান পেয়ে সহিমুহরি দলিল উত্তোলন করে দেখতে পান ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখে সন্ত্রাসী ও ভূমি খেকো কবির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও মো.শায়েস্তা মিয়া গংরা জাল দলিল সৃজন করে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর তারিখে মৃত পিতা কালা মিয়াকে দাতা হিসাবে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখে দলিল নং-৪০৬১/২০১৮ ইং মৃত্যুর ৬ দিন পরের ভূয়া দলিল সৃজন করা হয়। আকলুছ মিয়ার মৃত. পিতা কালা মিয়ার নামে জাল দলিলের বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত
করে সালিশ বৈঠক ডাকলে সন্ত্রাসী, ভূমি খেকো কবির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া, মো.শায়েস্তা মিয়া গংরা
কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। স্থানীয় ভাবে নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্টিত হলেও শেষ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।
এ ঘটনায় আকলুছ মিয়া বাদী হয়ে জালিয়াত, সন্ত্রাসী ও ভূমি খেকো চক্রের বিরুদ্ধে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রিট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জ সি. আর মোং নং-৩৫২/২০২৯ ইং দায়ের করা হয়। এতে হাতধনালী গ্রামের মৃত. ময়না মিয়ার ছেলে কবির আহমদ, ছাব্বির মিয়া, মো. আঙ্গুর মিয়া, মো. দেলোয়ার মিয়া, মো. শায়েস্তা মিয়া, মো. স¤্রাট মিয়া, বাদীর ভাই মৃত. কালা মিয়ার ছেলে মো. জিতু মিয়া, টেটিয়াচর গ্রামের মৃত. হাজী রশিদ আলীর ছেলে মো. আব্দুল্লাহ ও গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের মৃত.সচিন্দ্র কুমার দাস এর ছেলে সুনীল দাস (দলিল লিখক)সহ ৯ জনকে আসামী করা হয়।
এ দিকে ২০১৯ সালে ১০ ডিসেম্বর তারিখে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টিট, আমলগ্রহনকারী আদালত, ছাতক জোন, সুনামগঞ্জ কতৃক স্মারক নং ১২২১০ মুলে থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ প্রদান করেন। বর্ণিত স্মারক থানায় প্রাপ্তির পর ২০১৯ সালে ২৮ ডিসেম্বর তারিখে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন ছাতক থানার এসআই মহাদেব বাছাড়। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা একে অপরের সহযোগীতায় প্রতারনা মূলকভাবে মৃত. কালা মিয়াকে দাতা সাজিয়ে দলিল সৃষ্টি করিয়া বর্ণিত দলিলটি খাটি হিসেবে ব্যবহার করেন। যাহা প্রাথমিক তদন্তে বাদী আকলুছ মিয়ার আনিত অভিযোগটি দ: বি: ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারার অপরাধ সত্য বলিয়া প্রমানিত হয়।
আরো জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর আকলুছ মিয়ার পিতা কালা মিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর পর খুরমা দক্ষিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। যার নং- ২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪। সেই সময় ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুল মছব্বির ও সচিব ছিলেন দীপক রঞ্জন দাস। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আব্দুল মছব্বির বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
অভিযোগ উঠেছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির দায়িত্ব হস্তান্তর করার আগের দিন ইউপি সচিব দীপক রঞ্জন দাস এর যোগসাজেসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উক্ত মৃত্যু নিবন্ধন বাতিল পূর্বক নতুন একটি মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। এতে কালা মিয়ার মৃত্যু তারিখ ২০১৮ সালে ১৭ ডিসেম্বর উল্লেখ করা হয়।
কিন্ত নিবন্ধন নং-২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪ (আগের নাম্বারটিই) বহাল রয়েছে। এ মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী কবির আহমদ, ছাব্বির মিয়া ও মো. দেলোয়ার মিয়া আত্মগোপনে রয়েছে। জামিনে মুক্ত অন্য ৬ জন আসামী। এতে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশষ্কা করছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।
অপরদিক ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর তারিখে কালা মিয়া মৃত্যুবরণ করেন যার মৃত্যু নিবন্ধন নং-
২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪ তা বহাল রাখার জন্য বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এর দারস্থ হন আকলুছ মিয়া। এর প্রেক্ষিতে সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ও সচিব দিপক রঞ্জন দাস। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ওই সন্ত্রাসী ও ভূমি খেকো চক্রের ভয়ে সত্যতা পাওয়ার পরও সংশোধন করে দিচ্ছেননা এমনকি সংশোধনী আবেদন নেওয়া হচ্ছেনা। এই মালার বাদী আকুলুছ মিয়া ও ৭ নং আসামী মো. জিতু মিয়া আপন ভাই। আকলুছ মিয়ার অভিযোগ জিতু মিয়ার যোগসাজেসে ভূয়া জাল দলিল সৃজন ও জমি আত্মসাতের অপচেষ্টা চলছে। এমনকি তাদের
জমি জামার আরো বেশ দলিল ও কাগজ পত্র কৌশলে কুক্ষিগত করেছেন মো. জিতু মিয়া। এ নিয়ে সম্প্রতি দুই ভাইয়ের মধ্যে হাতাহতির ঘটনাও ঘটে। পরে ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আকলুছ মিয়া। এর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন থানার এসআই গোলাম ফাত্তাহ মোরশেদ চৌধুরী। তার পর জমির চারা নষ্ট করার অভিযোগ তুলে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন মো. জিতু মিয়া।
এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টি জানতে পেরে ০১৫৭৫২৫৭৮৭৫ মুঠোফোন নাম্বার থেকে এ
প্রতিবেদকের মুঠোফোন নাম্বারে কল করে হুমকি প্রদান করেন আত্মগোপনে থাকা মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী মো. ছাব্বির মিয়া। সংবাদ প্রকাশ করা হলে পাখির মত গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে মামলার অপর আসামী মো. শায়েস্তা মিয়া ০১৭১৪৯৫৭৩৫২ মুঠোফোন নাম্বার থেকে এ প্রতিবেদকের মুঠোফোন নাম্বারে কল করে বুঝে শুনে সংবাদ প্রকাশ করা জন্য হুমকি প্রদান করেন।হুমকির ঘটনায় এ প্রতিবেদক ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ছাতক থানায় একটি জিডি নং- ৮৯৭,১৫.০৮.২০২২ ইং দায়ের করা হয়।
এ বিষয়ে মৃত্যু নিবন্ধন সংশোধনের বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সত্যতা স্বীকার করে খুরমা দক্ষিন
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব দিপক রঞ্জন দাস বলেন, এখনো আবেদন নেওয়া হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে কম্পিউটারের দোকান রয়েছে সেখানে আবেদন করা যায়। তবে আবেদন না নিয়ে তদন্তে যাওয়া ও ইউনিয়ন অফিসে আবেদন নেয়া হচ্ছেনা কেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির তার উপর আনিত সকল অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে আসছেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী আকলুছ মিয়া। এ বিষয়ে মামলার আইনজীবি অ্যাডভোকেট শাহ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে দলিল ও কাগজ পত্র কৌশলে কুক্ষিগত করার ঘটনায় আকলুছ মিয়া ও মো. জিতু মিয়া দুই ভাইয়ের পাল্টা পাল্টি লিখিত অভিযোগ দায়ের সত্যতা স্বীকার করে ছাতক থানার এসআই গোলাম ফাত্তাহ মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন ওই মামলায় ওয়ারিন্টভুক্ত তিনজন আসামী পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান এ প্রতিবেদক কতৃক জিডি দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত
করেছেন।