সিলেটপোস্ট ডেস্ক::নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে সকল পাঠ্য বই তুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি জানুয়ারি মাসেও হাতে পাঠ্য বই পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এখনো ছাপাখানায় যায়নি ৯০ শতাংশ পাণ্ডুলিপি। শেষ হয়নি শতভাগ দরপত্রের কাজও। কাজে দ্রুততা আনতে প্রকাশকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে না পারফর্ম্যান্স গ্যারান্টিও (পিজি)। দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মনিটরিং করছে পাঠ্য বই ছাপানোর দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের কাজ চলছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বই প্রস্তুত হয়নি শতভাগ। আর নবম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের দরপত্রর কাজও শেষ হয়নি। দরপত্র থেকে ছাপাখানায় যাওয়া পর্যন্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও পাঠ্য বই ছাপাতে দেরি হয়েছে আগের বছরগুলোতেও। এবারো একই পথে হাঁটছে এনসিটিবি। সাধারণত ডিসেম্বরের শুরুর সপ্তাহে ছাপা হওয়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পাঠ্যবই উপজেলাগুলোতে পৌঁছে যায়। আর পাঠ্য বই ছাপানোর প্রাথমিক কাজ শুরু হয় জুন-জুলাইয়ে। তবে এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাতিল করা হয় কারিকুলাম। পাঠ্যবইয়ের সংস্কারের কাজ গত নভেম্বর পর্যন্ত হয়। সেই কাজ সিদ্ধান্তসহ শেষ হয়নি এখনো। পাঠ্য বইয়ের কাজ দ্রুত করতে কিছু উদ্যোগও নিয়েছে এনসিটিবি। প্রকাশকদের ১০ শতাংশ পিজি দিয়ে শুরুতেই দিতে হয় সার্টিফিকেট। সেই পথে এবার হাঁটছে না এনসিটিবি। তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মনিটরিংয়ের কাজ করতে যাচ্ছে।
এনসিটিবি’র আপডেট বলছে, এ পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে ৪ কোটি বই। যা মোট বইয়ের মাত্র ১০ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে পাঠ্য বই ছাপানোর কাজে ব্যয় রেড়েছে ৭০০ কোটি টাকা। গত বছর খরচ ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। গত বছর ছাপা হয় প্রায় ৩৪ কোটি কিন্তু এ বছর ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ পাঠ্য বই। যার মধ্যে ১০ কোটি প্রাথমিকের বই। এবার মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীপ্রতি তিনটি বই বৃদ্ধি পেয়েছে, ছাপানো হচ্ছে ১৩টি বই। প্রাথমিকের চার রঙ্গা বইয়ের উজ্জ্বলতা ৮৫ জিএসএম ও মাধ্যমিকের ৮২ জিএসএম অটুট রাখতে জোরালো ভূমিকা নিতে চায় এনসিটিবি।
একজন প্রকাশক এ বিষয়ে বলেন, আমরা সিন্ডিকেটের কারণে বিগত সময়ে ব্যবসা করতে পারিনি। এবার যেহেতু কাজ পেয়েছি সেহেতু মানসম্মত কাজ করতে চাই। কিন্তু আমাদের মেশিনারিজগুলোতে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে একই এক্সেসরিজ ও মেকানিজমে কাজ করা জরুরি। এখন আমাদের পুরনো মেশিনে ৮৫ জিএসএম রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। আমরা কয়েকটি মেশিনে এটা করবো। কিন্তু ৮৫ জিএসএম নিশ্চিত করলেও পরীক্ষাগারে এটার মান কম দেখাতে পারে। অনিচ্ছাকৃত এই সমস্যা নিয়ে আমরা চিন্তিত।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ইতিমধ্যে ডিসেম্বর মাস চলে এসেছে। এবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত পাঠ্য বইয়ের কাজ বুঝিয়ে দেয়া উচিত। আর এবারো যারা বাজার মূল্যের থেকে কম মূল্যে কাজ পেতে চান তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। এখুনি তাদের রুখে দেয়া গেলে নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে উঠবে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য আমরা এবার পিজি না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজস্ব মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে কাজ সমন্বয় করছি। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের অনুমোদন এখনো মেলেনি। অষ্টম শ্রেণির দরপত্রের কাজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তবে দশম শ্রেণির বিষয়েও একটা জটিলতা রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা এসএসসি দেবে। নবম শ্রেণিতে তারা নতুন কারিকুলামের বই পড়েছে আবার দশম শ্রেণিতে সৃজনশীল। যার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী কাজ করছে এনসিটিবি।
তিনি আরও বলেন, নবম ও দশম শ্রেণির বই ছাপাতে দেরি হলেও আমরা কিছু বিষয়ের বই ছাপিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবো। যাতে শ্রেণি কার্যক্রমে কোনো প্রভাব না থাকে। এবার বই উৎসব হবে না। অনলাইনে পাঠ্য বই দেয়া থাকবে। আর কোনো বছরই তো বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের সব বই দেয়া হয় না।