কুলাউড়া প্রতিনিধি::কুলাউড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রথম নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন বিএনপি নেতা ও হাজীপুর ইউনিয়নের ২ বারের নির্বাচিত আব্দুল মনাফ চৌধুরী মেম্বার। সেই হত্যাকান্ডের মাষ্টার মাইন্ডসহ আসামীরা ক্ষমতা ও অর্থের বিনিময়ে হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে এখনও বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ন্যায় বিচার ও খুনিদের শাস্তির দাবিতে নিহত আব্দুল মনাফের বোন মোছাম্মৎ নেহার বেগম চৌধুরী উচ্চ আদালতে (হাইকোর্টে, ক্রিমিনাল রিভিশন নং ১৩১/২৩) এর শরনাপন্ন হয়েছেন। বর্তমান সরকারের সময়ে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছে নিহতের পরিবার।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মবশ্বির আলীর নেতৃত্বে বেপরোয়া হয়ে উঠে আওযামী লীগের একটি চক্র। তাদেও অত্যাচার নির্যাতনে যখন মানুষ অতিষ্ঠ তখন সেখানে কেবল প্রতিবাদী ছিলেন ০১ ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মনাফ চৌধুরী। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য হওয়ায় সাহসী মনাফ মেম্বার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেন মবশ্বির চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর। চেয়ারম্যান মবশ্বির আলীর গম চুরির প্রতিবাদ করায় ১৯৯৯ সালে মনাফ মেম্বারের উপর হামলা চালানো হয়। সে সময় মনাফ মেম্বারের একটি পা ভেঙে গেলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান। এসব হামলা নির্যাতন মোকাবেলা করেও তিনি প্রতিবাদ চালিয়ে যান। তাই দিনে দিনে মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন মনাফ মেম্বার। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দঁাড়ায়। ফলে পথের কাটা সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন মনাফ হত্যাকান্ডের মাষ্টার মাইন্ড মবশ্বির চেয়ারম্যান।
২০০৯ সালের ১০ আগস্ট রাতে স্থানীয় হোসেন মিয়ার বাড়িতে সালিশ বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে হরিচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে চেয়ারম্যান মবশ্বির আলীর উপস্থিতিতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয় মনাফ মেম্বারের উপর। এই হামলায় মনাফ মেম্বার ছাড়াও কবির বেগ ও হোসেন মিয়া আহত হন।
‘ওকে পালাইয়া যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে কাজ শেষ করে লাশ বস্তায় ভরে (পার্শ্ববতর্ী) নদীতে ফেলার ব্যবস্থা কর’- আহত মনাফ মেম্বারকে মৃত ভেবে ফেলে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান মবশ্বির আলী এই নির্দেশ দিয়ে যান বলে মৃত্যুর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনাফ মেম্বার এসব কথা বলে যান। যা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা আছে।
১০ আগস্ট হামলার পর ঘটনার ১১ দিন পর ২১ আগস্ট রাতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মারা যান মনাফ মেম্বার। এ ঘটনায় তার বোন নেহার বেগম চৌধুরী কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ০৮ তারিখ ২২/০৮/০৯) দায়ের করেন। কিন্তু দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলা থেকে নিষ্কৃতি পান হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঘটনার মাষ্টার মাইন্ড মবশ্বির আলী। ঘটনার সময় চেয়ারম্যান মবশ্বির আলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন।
এরপর শুরু হয় ক্ষমতার অপব্যবহার। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত কাজে বঁাধা দিলে শুধুমাত্র মৃত্যুসনদ দিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে মনাফ মেম্বারের লাশ হস্তান্তর করেন। এখানেই শেষ নয়, মামলার চার্জশীট প্রদানকালে দলীয় প্রভাব বিস্তার করা হয়। মোটা অংকের অর্থ আর দলীয় প্রভাবে আদালতে দুর্বল চার্জশীট দেন পুলিশের তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা। ফলে মামলার ফঁাক গলে বেরিয়ে যায় আসামীরা। মামলার অন্যতম আসামী ও মবশ্বির চেয়ারম্যানের ভাই মাহমুদ আলী ফটিকসহ মামলার ১৩ আসামী এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মামলার বাদী নেহার বেগম চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ১৫ বছরে মামলার স্বাক্ষীরা আদালতে স্বাক্ষী দিতে পারেনি। হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী মবশ্বির চেয়ারম্যানকে আসামীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ক্ষমতার ধাপটে চার্জশীট দূর্বল করে বিচারকে প্রভাবিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে আমরা এই নৃশংস হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার চান।
এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল মো: কামরুল হাসান জানান, একজন জনপ্রতিনিধিকে জঘন্যভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা সত্যিই দু:খজনক। যদি বাদি আদালতের রায়ে সন্তোষ্ট না হন, তাহলে উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থী হতে পারেন। আদালতের নির্দেশনা পেলে পুলিশ পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেবে।