সংবাদ শিরোনাম
ছাতকে বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে কন্ঠশিল্পী পাগল হাসান নিহত  » «   সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে মায়ের সম্পত্তি নিয়ে ছোটভাইয়ের হাতে বড়ভাই নিহত,আটক-২  » «   দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুইজন কৃষকের মৃত্যু  » «   পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহবান  » «   সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভা  » «   ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি’র সভাপতি শেখ লুৎফুর  » «   পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ  » «   মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি’র ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  » «   সুনামগঞ্জে কালবৈশাখীর ঝড়ে ৭শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি,২ শতাধিক দোকান লন্ডভন্ড  » «   হবিগঞ্জে চাল্যকর ছোবহান হত্যা মামলার ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯  » «   নবীগঞ্জে ৬ বছরে শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ! ধর্ষনকারী আনহারকে আটক   » «   ফ্যাসিস্ট ডামি সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে :কাইয়ুম চৌধুরী  » «   বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সিলেট জেলার উদ্যোগে ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল  » «   সিলেটে পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের হাতে বাবা খুন  » «   সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  » «  

বুকের ভেতর ঘৃণার আগুন

                                          2মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১৯৭১ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বিকাল বেলা পিরোজপুরের বলেশ্বরী নদীর ঘাটে পাকিস্তান মিলিটারী আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। পুলিশ প্রশাসনের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হিসেবে শুধু আমার বাবাকেই নয়, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হিসেবে জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং জনাব মিজানুর রহমানকেও একই সাথে গুলি করে তাদের সবার মৃতদেহ বলেশ্বরী নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

পিরোজপুরের নদীতে জোয়ার ভাটা হয়। তাই এই তিনজন হতভাগ্য মানুষের মৃতদেহ দিনে দু’বার জোয়ারের পানিতে উত্তরে এবং ভাটার পানিতে দক্ষিণে নেমে আসছিল। তিনদিন পর আমার বাবা মৃতদেহ কাছাকাছি একটা গ্রামের নদীতীরে এসে আটকে গিয়েছিল। গ্রামের মানুষেরা আমার বাবাকে চিনতো, তাদের মনে হল, ‘আহা এই মৃতদেহটি মাটি চাইছে।’ তাই তারা ধরাধরি করে আমার বাবার মৃতদেহটি তুলে নদীতীরে কবর দিয়েছিল। অন্য দু’জনের সেই সৌভাগ্য হয়নি এবং তাদের মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত নদীতে ভেসে হারিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে সেটি এমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, পাকিস্তান সেনা বাহিনী ঘাঁটি গেঁড়েছে এরকম যেকোন জায়গার আশেপাশে যে কোন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকলেই দেখা যেতো নদীতে অসংখ্য মানুষের মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান মিলিটারী এই দেশের মানুষকে নির্বিচারে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে। মানুষ হয়ে মানুষকে এতো অবলীলায় এবং এতো নিষ্ঠুরতায় হত্যা করা যায় সেটি আমরা আজো কখনো কল্পনা করতে পরিনি। একজন মানুষ যখন ঘর থেকে বের হতো সে আবার ঘরে ফিরে আসবে কী না সেই বিষয়টি নিয়ে আপনজনেরা কখনো নিশ্চিত হতে পারতো না।

মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবাই মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন। তারা যদি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে থাকতেন তাহলে এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে মানুষকে বিশ্বাস করার কথা বলতে পারতেন কী না আমি নিশ্চিত নই। ১৯৭১ সালে এই দেশে পাকিস্তান মিলিটারী যে ভয়ংকর তাণ্ডব এবং হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল সেটি দেখে আমাদের প্রজন্ম পাকিস্তান নামক দেশটির মানুষ নামক প্রজাতির ওপর বিশ্বাস চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছিল। অন্যদের কথা জানি না, এতদিন পরেও আমি এখনো একজন পাকিস্তানের মানুষ দেখলে তার ভেতরে এক ধরণের দানব খুঁজে পাই।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ নামে দুইজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তারা (পাকিস্তান) এই বিচিত্র ঘোষণাটি দিয়েছে

পবিত্র কোরআন শরীফে লেখা আছে মানুষ যখন বেহেশতে যাবে তখন তার বুকের ভেতর থেকে সকল প্রতিহিংসা সরিয়ে দেওয়া হবে। কথাটি অন্যভাবেও ব্যাখা করা যায়, এই পৃথিবীতেই যদি একজন মানুষ তার বুকের ভেতর থেকে সব প্রতিহিংসা দূর করতে পারে তাহলে পৃথিবীটাই তার কাছে বেহেশত হয়ে যেতে পারে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি আমাদের দেশে যে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতন চালিয়েছে সেটি আমি নিজের চোখে দেখেছি এবং সে কারণে আমার বুকের ভেতরে এই রাষ্ট্রটির জন্য যে তীব্র ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার জন্ম হয়েছে আমি কোনদিন তার থেকে মুক্তি পাব না। এই রক্ত লোলুপ ভয়ংকর দানবের কারণে পৃথিবীটা আমার জন্যে কখনো বেহেশত হতে পারবে না। সবসময়ই এই দেশ এবং এই দেশের দানবদের জন্যে আমার বুকে ঘৃণার আগুন ধিকি ধিকি করে জ্বলতে থাকবে।

অথচ পাকিস্তান নামক দেশটি রাষ্ট্রীয় ভাবে বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জানিয়েছে যে ১৯৭১ সালে তারা আমাদের দেশে কোন গণহত্যা করেনি। এই দেশের মানুষের ওপর কোন নির্যাতন করেনি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ নামে দুইজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তারা এই বিচিত্র ঘোষণাটি দিয়েছে। আমরা যতটুকু জানি, তারা এর চাইতেও অনেক বেশী জানে যে ১৯৭১ সালে তারা এই দেশে একটা ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। আমি বেশ কয়েকবছর আগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নামে ছোট একটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। এই পুস্তিকার তথ্যসূত্রগুলোর বেশীরভাগ দিয়েছিলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের লেখা বই থেকে। তারা নিজেরাই সেখানে স্বীকার করছে যে এই দেশে তারা ভয়ংকর গণগত্যা করেছে, তারপরও যখন পাকিস্তান সরকার এখনো ‘জানে না’ যে ১৯৭১ সালে এই দেশে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যাটি হয়েছিল তখন বুঝেই নিতে হবে ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’। এই দেশের অনেক মানুষ পাকিস্তানের এই নির্জলা মিথ্যা কথা শুনে ভয়ংকর ক্রদ্ধ হয়ে উঠেছে, আমি ক্রুদ্ধ হইনি এবং অবাকও হইনি। আমরা যারা আমাদের জীবনের একটা অংশ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে কাটিয়েছি এবং নিজের চোখে ১৯৭১ দেখেছি তারা খুব ভালো করে জানি এটি হচ্ছে আদি ও অকৃত্রিম পাকিস্তানী কর্মকাণ্ড। যেখানে সত্যভাষণ করা হলে লাভ হয় সেখানেও এই রাষ্ট্রটি মিথ্যাচার করে। এই দেশের ইতিহাস হচ্ছে মিলিটারী জেনারেলদের ইতিহাস। এই দেশের সবচেয়ে সম্মানী মানুষ সেই দেশের নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান পৃথিবীর চোখে একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী। এই দেশে মেয়েরা লেখা পড়া করতে চাইলে তাদের মাথায় গুলি করা হয়। এই দেশটির জন্যে যার বুকের ভেতরেই যতটুকু ভালবাসা থাকুক না কেন আমার বুকের ভেতর বিন্দুমাত্র ভালবাসা কিংবা সম্মানবোধ নেই। বিদেশে যাওয়ার সময় প্লেন যখন পাকিস্তানের উপর দিয়ে উড়ে যায় আমি তখন অশুচি অনুভব করি।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং সাহসের জন্যে তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই

.

১৯৭১ সালে জীবন বাঁচানোর জন্য আমাকে দেশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। আমার বয়সী কিংবা আমার চাইতে ছোট কিশোর তরুণেরাও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে পাকিস্তান মিলিটারীর সাথে বীরের মত যুদ্ধ করেছে। আমাদের মত মানুষেরা যারা অবরুদ্ধ পাকিস্তানে আটকা পড়েছিলাম তাদেরকে পাকিস্তান মিলিটারীর সব রকমের পৈচাশিক নির্মমতা নিজের চোখে দেখতে হয়েছে। মনে আছে একদিন গ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি হাঠাৎ করে এক দল পাকিস্তানী মিলিশিয়ার মুখোমুখি হয়ে গেলাম। আমার চোখের সামনে তারা একটা বাড়ীতে ঢুকে পড়লো। বাড়ির ভেতর থেকে পুরুষটি কোনোভাবে প্রাণ নিয়ে বের হয়ে এসে আমার সামনে থর থর করে কাঁপতে থাকল এবং আমি বাড়ির ভেতর থেকে নারী কণ্ঠের আর্তনাদ শুনতে পেলাম। যখন নিজের স্ত্রীকে একদল পাকিস্তানী মিলিশিয়ারা ধর্ষণ করতে থাকে তখন সেই স্ত্রীর আর্তনাদ শুনতে থাকা স্বামীর চোখে যে ভয়াবহ শূণ্য এক ধরণের দৃষ্টি থাকে সেটি যারা দেখেছে তারা কখনো ভুলতে পারবে না। আমিও পারিনি, কখনো পারবোও না।

এই অসহায় স্ত্রীটির মত বাংলাদেশে আরো তিন থেকে চার লক্ষ মহিলা এই পাশবিক নির্যাতন সহ্য করেছে। রেপ অফ নানকিং নামে এক আইরিশ চ্যাং এর লেখা একটি অসাধারণ বই আছে। যে বইতে নানকিংয়ের অধিবাসীদের উপর জাপানীদের অমানুষিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই বইটিকে একটা ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই বইয়ের শুরুতে আইরিশ চ্যাং লিখেছেন নানকিংয়ে নারী ধর্ষণের যে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটেছিল তার সাথে তুলনা হতে পারে শুধুমাত্র ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী মিলিটারীদের দিয়ে বাংলাদেশের নারীদের ধর্ষণ।

সারা পৃথিবীর ইতিহাসে পাকিস্তানী মিলিটারীর এই ভয়ংকর নির্যাতনের একটি জ্বলন্ত ইতিহাস থাকার পরও পাকিস্তান সরকারের সাহস আছে সেই সত্যটিকে অস্বীকার করার! এই রাষ্ট্রটিকে যদি আমরা ঘৃণা না করি তাহলে কাকে ঘৃণা করবো?

 

.

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী দানবদের হাতে যারা আমার মত আপনজন হারিয়েছেন তাদের বুকের ক্ষত কখনো শুকিয়ে যাবে না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিংবা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর করার পর শহীদদের আপনজনেরা হয়তো খানিকটা হলেও শান্তি পাবেন। ফাঁসীর রায় কার্যকর করার পর এই দেশের কোন মানুষের মুখ থেকে এতোটুকু সমবেদনার কথা শোনা যায়নি কিন্তু পাকিস্তানের মানুষদের হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছিল! যারা একত্তর দেখেনি কিংবা যাদের ভেতরে যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল পাকিস্তানের হাহাকার শুনে তাদের সব সন্দেহ দূর হয়ে গেছে। আসমা জাহাঙ্গীর খুব সঠিক ভাবেই বলেছেন সৌদী আরবে যখন প্রায় রুটিন মাফিক পাকিস্তানী অপরাধীদের মাথা কেটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তখন একটিবারও পাকিস্তান সরকার সেই সব হতভাগ্যদের জন্যে বিন্দুমাত্র দরদ দেখায় না, কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় নিয়ে বিচার করে যখন বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয় তখন হঠাৎ করে তাদের দরদ উথলে পড়ে!

১৯৭১ সালে পাকিস্তান এই দেশে কোনো গণহত্যা ঘটায়নি বা যুদ্ধপরাধ করেনি, এই নির্জলা মিথ্যা কথাটি বলার সাথে সাথে তারা বাংলাদেশের সাথে ‘ভাই’ এবং ‘বন্ধুর’ মতো সুসম্পর্ক তৈরী করা নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছে। দুই দেশের জনগণ পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে দুই ভাইয়ের মতো ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গড়ে তুলবে এরকম আশা প্রকাশ করেছে।

বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। বাংলাদেশের মানুষের পাকিস্তান নামক দেশটির জন্য কোন ভালবাসা থাকার কথা নয়। তারা বড়জোর এই দেশটিকে সহ্য করবে ‍যদি তারা নতজানু হয়ে তাদের সব অপরাধের কথা স্বীকার করে ক্ষমাভিক্ষা চায়। যেহেতু তাদের ভেতরে আমরা সেরকম কিছু দেখতে পাচ্ছি না তাহলে পাকিস্তান নামক এই রাষ্ট্রটির সাথে কোনো এক ধরণের সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তাটুকু কী? চল্লিশ বছর পরে হলেও আমরা আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশকে গ্লানিমুক্তি করার চেষ্টা করছি। এজন্যে এই সরকারের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আরো পরিস্কার করে বলতে হলে বলব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং সাহসের জন্যে তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। চল্লিশ বছর পরে হলেও আমরা যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারি তাহলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির কতৃকর্মের জন্য তাদের বিচার কেন করতে পারি না? এই দেশের সাথেই আামদের কোন একটা সম্পর্ক রাখার প্রয়োজন কোথায়? আসমা জাহাঙ্গীর খুব সঠিক ভাবেই বলেছেন সৌদী আরবে যখন প্রায় রুটিন মাফিক পাকিস্তানী অপরাধীদের মাথা কেটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তখন একটিবারও পাকিস্তান সরকার সেই সব হতভাগ্যদের জন্যে বিন্দুমাত্র দরদ দেখায় না

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ফোরাম যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিটিকে নতুন করে উজ্জীবিত করেছিলেন। (তারা যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কথা বলতে এসেছিলেন তখন একটা চত্বরে প্রত্যেক সেক্টর কমান্ডার হাতে একটা করে গাছ লাগিয়েছিলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই চত্বরটির নাম সেক্টর কমান্ডার চত্বর।) সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সদস্যরা এখন নতুন করে একটা দাবি করেছেন। তারা বলছেন পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে! আমার মনে হয় এটি একটি অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। ১৯৭১ সালে আমরা যারা পাকিস্তান মিলিটারির হাতে আমাদের আপনজনকে হারিয়ে ছিলাম আমাদের ক্ষোভ একশ গুন বেড়ে যায়, যখন আমরা দেখি সেই হত্যাকারী দেশ আস্ফালন করে ঘোষণা করে তারা কোনো দোষ করেনি! আমাদের আপনজনেরা তাহলে খুন হল কেমন করে—নদীর পানিতে তাদের মৃতদেহ ভেসে বেড়ালো কেমন করে?

পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সাথে আমি কখনো সরাসরি কথা বলতে পারব না। যদি পারতাম তাহলে আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতাম, ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষের উপর যে নৃশংস তাণ্ডব চালিয়ে গণহত্যা করেছ সেই অপরাধের জন্য আমরা তোমাকে কখনো ক্ষমা করিনি। তোমাদের এতো বড় দুঃসাহস, এতদিন পর তোমরা সেটি অস্বীকার কর?

আমাদের বুকের ভেতর যে ঘৃণার আগুন জ্বলছে তোমরা তার তাপ সহ্য করতে পারবে না। ১৯৭১ সালে আমরা তোমাদের দূর করে দিয়েছি।

তোমরা দূরেই থেকো, আমাদের কাছে এসো না।

 

মুহম্মদ জাফর ইকবাল : কথাসাহিত্যিক; অধ্যাপক, শাবিপ্রবি

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.