সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট:সুললিত কণ্ঠে মিষ্টি ভাষায় কথা বলেন মাসুমা। তিনি মাস খানেক আগে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাধন চন্দ্র দাসকে ফোন করেন। বলেন, ‘দাদা আপনার মোবাইলে ভুলে আমার ফ্ল্যাক্সি লোডের ২০০ টাকা চলে গেছে। আপনি যদি টাকাটা ফিরিয়ে দেন তাহলে আমার খুবই উপকার হবে। চেয়ারম্যান দুশ’ টাকা মাসুমার নম্বরে ফেরত দেন। কয়েকদিন পর আবার চেয়ারম্যানের নম্বরে ৩০০ টাকা ফ্ল্যাক্সি লোড করে পাঠানো হয়। এবারও কাজের ছেলে ভুল করে পাঠিয়েছে বলে টাকা ফেরত চান মাসুমা। সাধন চেয়ারম্যান যথারীতি ৩০০ টাকা ফেরত দেন। এবার সাধন চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করেন মাসুমা। বলেন, ‘আপনার মতো ভালো মানুষ হয় না।’ এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই মাসুমা ফোন করতেন সাধন চেয়ারম্যানকে। তার সঙ্গে বেশ খাতিরও জমান। তার ভাই পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর (দুলাভাই), কাজের লোক পরিচয় দিয়ে সেলিম এবং ড্রাইভার পরিচয় দিয়ে আলাউদ্দিনও ফোন করতেন। কথা বলতে বলতে তারা সাধন চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তাকে ঢাকায় আসার দাওয়াতও করেন। ৪ এপ্রিল সরল বিশ্বাসে সাধন চেয়ারম্যান ঢাকায় আসবেন জানালে মাসুমা, জাহাঙ্গীর ও সেলিম আগবাড়িয়ে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে একটি গাড়ি পাঠিয়ে দেন। ওই গাড়িতে সাধন চেয়ারম্যানকে তুলে রাস্তায় তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার ও নিজেদের খরচে ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো হয়। তাদের ব্যবহারে সাধন চেয়ারম্যান মুগ্ধ। ঢাকায় এনেই তাকে বাড্ডার একটি বাসায় আটক করা হয়। এবার বেরিয়ে আসে তাদের আসল চেহারা। নিজেদের ডিবি পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে একটি বাড়ির ৫ম তলার কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয় সাধন চেয়ারম্যানকে। তার কাছে নগদ আট হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ক্রসফায়ারে মেরে লাশ গুম করে দেয়ার হুমকি দিয়ে সাধন চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে আদায় করে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আরও এক লাখ টাকা দেয়ার ওয়াদা করে তাদের কবল থেকে মুক্তি পান সাধন চেয়ারম্যান। পরে তিনি ১০ মে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঘটনাটি জানার পর রাজধানীর বাড্ডা থেকে মঙ্গলবার প্রতারক চক্রের মূল হোতা জাহাঙ্গীর আলম ও তার শ্যালিকা মাসুমা, তাদের সহযোগী আলাউদ্দিন, সেলিম, এমদাদ, নিকুলকে গ্রেফতার করে। ওই বাড়িতেই সাধন চেয়ারম্যানকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকী সিলেট পোষ্টকে জানান, চক্রের মূল হোতা জাহাঙ্গীর তার শ্যালিকা মাসুমাকে দিয়ে এই প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। চক্রের অন্য সদস্যরা তাদের কমিশনভুক্ত। তারা পুলিশের বেশভূষা ধারণ করে মিথ্যা ডিবি পরিচয় দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। এর মাধ্যমে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার কৌশলে হাতিয়ে নিত। ভিক্টিমকে ফ্ল্যাক্সি পাঠিয়ে ভুলে গেছে বলে তার সঙ্গে খাতির করত। কৌশলে ডেকে এনে আটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করত। ভুলে আসা ফ্ল্যাক্সি থেকে সাবধান থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। ডিবির ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেন জানান, বাজিতপুর থানা পুলিশের দেয়া তথ্যে এ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তাদের বাজিতপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা আসামিদের রিমান্ডে নেয়াসহ যাবতীয় জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ইন্সপেক্টর আলমগীর আরও জানান, এ চক্রের নামে আরও বহু অভিযোগ রয়েছে। তারা এইভাবে ভুলে ফ্ল্যাক্সি লোডের টাকা চলে গেছে বলে সিলেটের ওসমানীনগর থানার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের আতাউর রহমান চেয়ারম্যানকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। এ ছাড়া যাশোরের এক ব্যবসায়ী ও গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে। এ চক্রটি জনপ্রতিনিধি ও ধনী কম শিক্ষিত ব্যবসায়ীদের টার্গেট করত। মাসুমা তাদের ফোন করে মিষ্টি কথার ফাঁদে ফেলত। শালী-দুলাভাইসহ ৬ আসামিকে বাজিতপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।বাজিতপুর থানার ওসি সুব্রত কুমার সাহা জানান, আসামিদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আজ তাদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। ডিবির এডিসি মো. ছানোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে সিনিয়র ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদা আফরোজ লাকীর নেতৃত্বে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়।