নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেটপোস্ট২৪ডটকম : চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে সিলেটে সাংবাদিকপুত্রের অঙ্গহানির ঘটনা আমলে নিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩৮৪/৩৬ ধারায় অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। মঙ্গলবার সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম ৩ ডাক্তারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
সমনপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন, সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. তানভির আহমদ চৌধুরী, ইন্টার্নি ডা. শাফিনাজ মোস্তফা ও জরুরী বিভাগের ব্রাদার তারেক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি দরজার হেজবল্টে চাপ লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন ও টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি বদরুর রহমান বাবরের ছেলে সাফি। ডানহাতের তর্জনিতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাসার পার্শ্ববর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদার তারেক শিশু সাফির আঙ্গুলের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড বেধে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের ৫ তলায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদের উপস্থিতিতে ডা. শাফিনাজ ও ডা. তানভীর শিশু সাফির আঙ্গুলে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। এ সময় সাফির মা পারুল বেগম রাবার ব্যান্ড না খুলে ব্যান্ডেজ করার কারণ জানতে চাইলে রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ তার সাথে দুর্ব্যবহার করে বলেন, ‘ডাক্তার আমরা, না আপনি ?’
অপারেশনের পর সাফিকে হাসপাতালের ৫০৫ নং কেবিনে সাফিকে নেওয়ার পর ডা. জাবের বাসা কাছে থাকায় সাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের সমূদয় বিল পরিশোধ করে সাফিকে সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে যান তার পিতা সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর।
হাসপাতালের ছাড়পত্রে ৩ দিন পর ডেসিংয়ের জন্য অর্থোপেডিক্স বর্হি:বিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সাফির হাতের ব্যথা না কমায় দু’দিন পর (২০ জানুয়ারি) হাসপাতালের বর্হি:বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. মহসিন শিশু সাফিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় নিজাম ব্যান্ডেজ খুলে আঙ্গুলে রাবার ব্যান্ড দেখে আবারো ডা. মহসিনের কাছে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ডা. মহসিন হাসপাতালের ৫ম তলায় ডা. কাজী সেলিমের কাছে নিয়ে যান সাফিকে। সাফিকে দেখে ডা. কাজী সেলিম হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদকে ডেকে এনে সাফির হাতের অবস্থা দেখান। এতে হতভম্ব ডা. জাবের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সাফিকে। সেখানে আঙ্গুলের রাবার ব্যান্ড কেটে পরদিন আবারো ড্রেসিং করানোর অনুরোধ জানান ডা. জাবের। সংবাদিক বদরুর রহমান বাবর ছেলেকে ভূল চিকিৎসায় আঙ্গুল নষ্ট করা হয়েছে বলে উত্তেজিত হয়ে উঠলে চিকিৎসায় অবহেলার কথা স্বীকার করেন ডা. জাবের। সাফির পরবর্তী সকল ড্রেসিং নিজের করবেন বলেও জানান ডা. জাবের। এবং এতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি। পরবর্তীতে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী কয়েকবার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ড্রেসিং করা হয় সাফির ক্ষতস্থান। এক পর্যায়ে ক্ষতস্থানে পুজ জমলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও সার্জারী বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদ হাসপাতালের প্যাডে মেডিএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্লাস্টিক সার্জন ডা. আবদুল মান্নানের কাছে রেফার্ড করেন। ওই দিনই ডা. মান্নানের কাছে সাফিকে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্ষতস্থানে গ্যাংগ্রিন হওয়ায় ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলার জন্য বলেন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন শিশু সাফির স্বজনরা।
এদিকে শিশু সাফির আঙ্গুল যাতে রক্ষা করা যায় তার জন্য তাকে নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালেও হাতের আঙ্গুল কেটে ফেরার জন্য বলা হয়। এতে নিরাশ হয়ে সিলেট ফিরে সাফিকে ডা. আবদুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে মাউন্ট এ্যাডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অপারেশনের মাধ্যমে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর বাদী হয়ে উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫ ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে মামলা করেন। মামলার পর আদালতের নির্দেশে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে আদালত ৩ ডাক্তারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।
শুনানীকালে মামলার বাদীপক্ষে অংশগ্রহণ করেন সিনিয়র আইনজীবি শহীদুজ্জামান চৌধুরী, এ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন, এ্যাডভোকেট আবুল হাসান, এ্যাডভোকেট সজল কান্তি রায়, এ্যাডভোকেট সওয়ার হোসেন খসরু, এ্যাডভোকেট মিরাজ হোসেইন, এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট বেলাল আহমদ প্রমুখ।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী পক্ষের অন্যতম আইনজীবি এ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন জানান, আদালত বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির রিপোর্টের উপর শুনানী শেষে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মামলা আমলে নিয়েছেন। এ ঘটনায় সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্টার ডা. জাবের আহমদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩৮৪/৩৬ ধারায় অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।