সিলেটপোস্ট ডেস্ক::সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, গ্রাম-শহরে রেশন ব্যবস্থা চালু, জনজীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, পাচারের টাকা ফেরত আনা, দুর্নীতি-লুটপাট-দখলদারিত্ব বন্ধসহ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের গণদাবি আদায়ে ‘শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা’ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সিলেট জেলা কমিটির পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (০৯ নভেম্বর) দিনব্যাপী সিলেট নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় এই পথসভাগুলোর আয়োজন করা হয়।
সিলেটের ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে সকাল ১০ টায় প্রথম পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড বেদানন্দ ভট্টাচার্য। পরে একে একে কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, শহরতলীর মেঝরটিলা বাজার, খাদিমনগরের শাহপরাণ গেইট এবং সবশেষে আম্বরখানা পয়েন্টে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম মেম্বার সংগ্রামী জননেতা কমরেড আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন। পথসভাসমূহে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন। জেলা কমিটির সদস্য দেবব্রত পাল এর সঞ্চালনায় পথসভাসমূহে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খায়রুল হাছান, জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, চা-শ্রমিকের ১০দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক সবুজ তাঁতি, জেলা কমিটির সদস্য তুহিন কান্তি ধর, নিরঞ্জন দাস, চয়ন দেব। আরও বক্তব্য রাখেন কমরেড ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদের সহ-সভাপতি রতন দেব, সিপিবি নেতা রশীদ আহমদ রাশেদ, সন্দীপ দেব, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাশরুখ জলিল প্রমুখ। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এসব পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজু চক্রবর্তী, আরিফুর রমান, রজত চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ, প্রবীর গোস্বামী, শিপন শর্মা, চা-শ্রমিক নেতা কিরন বাউরী, দিপ্ত নায়েক, কাজল তাঁতি, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আশরাফুল হক নাদিমসহ পার্টি ও গণসংগঠনসমূহের নেতা-কর্মিবৃন্দ।
পথসভাসমূহে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন শোষণে এদেশের জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। ছাত্র-জনতার অপ্রতিরোধ্য লড়াইয়ে সেই দুঃশাসনের অবসান ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে মরণপণ লড়াই করেছে, অকাতরে জীবন দিয়েছে। দেশে এখন কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উন্মেষ ঘটেছে বৈষম্যবিরোধী চেতনার। তিনি বলেন, বিগত পনের বছরের আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনামলে ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে জনগণকে দাবিয়ে রাখা হয়েছিল।
ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল কথা বলার অধিকার। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। অবাধ লুটপাটের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছিল।
কমরেড কাফি রতন আরও বলেন, কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ-দেশ গড়ার জন্য জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথে বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
উপরন্তু গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করতে সাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদী দেশি-বিদেশি অপশক্তিসমূহ দেশবিরোধী নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃস্টি করে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সুকৌশলে বায়ান্ন, বাষট্টি ও একাত্তরের মৌল চেতনাকে অস্বীকার করার পায়তারা চালাচ্ছে, মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, পাল্টা দখলদারিত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে- যা এদেশের জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দখলদারিত্ব বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে দেশবাসী আশা করলেও তার উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। তিনি বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এর জন্য কালক্ষেপণ না করে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য তিনি অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, লুটপাটতন্ত্র-সাম্প্রদায়িকতা-সা
অন্যান্য বক্তারা বলেন, কোনোভাবেই জনগণের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার খর্ব করা চলবে না। দখলদারিত্ব, নীরব চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি ও সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলী বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষহ সাধারণ জনগণ আজ দিশেহারা। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বক্তারা অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানান।