অশান্ত খাদিমপুর ওসমানীনগরে গোলাম রব্বানি সুহেলের অস্ত্রের গরম! ঘটনা ভিন্নভাবে প্রবাহের চেষ্টা!

ওসমানীনগর(সিলেট)প্রতিনিধি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৫, ৯:১৯ অপরাহ্ণসিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রবাসী অধ্যুষিত খাদিমপুর গ্রাম। উপজেলার সীমান্তের এ গ্রামটি বছরজুড়ে সংবাদের শিরোনাম হয়ে থাকে। ক্ষমতার দাপট ও কড়ি-কড়ি টাকার প্রভাবে “চুন থেকে পান খসলেই”উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামের নৈরাজ্যকর এ পরিস্থিতির প্রধান নায়ক গোলাম রব্বানি সুহেল।তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের একজন অর্থ যোগানকারী। পতিত সরকারের এ দোসর প্রবাস অবস্থান করেও খাদিমপুর গ্রামে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কয়েক দফা অস্ত্রের গরম দেখালেও অদৃশ্য কারণে তার বিরোদ্ধে কখনও নেওয়া হয়নি আইনি পদক্ষেপ। দ্রুত তার বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর গ্রামের ভূমিখেকো হিসেবে সর্বত্র পরিচিত গোলাম রব্বানি সুহেল। গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সাথে দীর্ঘ দিন ধরে জোড়পুর্বক জায়গা দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল তার।
সেই বিরোধ নিরসনে গ্রামের শালিস ব্যক্তিদের একাধিক সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সুহেলকে গ্রাম থেকে তিরস্কার করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন গ্রামবাসীর উপর তিনি। প্রবাসী ভূমি খেকো সুহেলের বিরোদ্ধে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় তাকে প্রধান আসামী করা হলেও তার বিরোদ্ধে আইনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে পাল্টা
উপজেলার কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসন সুহেলকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
এদিকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল একই গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাজেরা আলী পান্নার জায়গা দখলের পাঁয়তারার ও ৩৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে সুহেলের বিরুদ্ধে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ে করলে ক্ষিপ্ত হয়ে সুহেল শটগান দিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি ও গুলি বর্ষণ ৫ দফা বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরো দুটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু কোন মামলায়ই গ্রেপ্তার করা হয়নি সুহেল ও তার ক্যাডারবাহিনীর কোন সদস্যকে।
সর্বশেষ গত ১২ জুন সুহেলের বাড়ীতে আংশিক হামলার যে ঘটনাটি ঘটেছিল,সেটি ছিল খাদিমপুর হোয়াটসঅ্যাপ ভিলেজ গ্রুপে মানহানিকর একটি ভিডিও শেয়ার করা নিয়ে। গ্রামকে উত্তপ্ত করতে পরিকল্পিতভাবে সেই ভিডিওর নায়ক ছিলেন সুহেল। ভাইরাল ভিডিও কে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হলে সুহেলের বাড়ীতে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যাক অস্ত্র ভাড়াটে সন্ত্রাস জড়ো করে রাখেন। বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে একত্রিত গ্রামবাসী সুহেলের বাড়ী আংশিক ভাংচুর করে ভাড়া করা শতাধিক সন্ত্রাসীর মধ্যে ১১ সন্ত্রাসীকে আটক করে বাড়ীটি ঘিরে রাখেন এলাকাবাসী।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান আহমদ ও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আহবাবুল হোসাইনের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হলেও জনতার ঘিরে রাখা বাড়ীটি থেকে অভিযানকালে কোন সন্ত্রাসী ও অস্ত্র উদ্ধার না করে পাল্টা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিতু মিয়া, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আখলাক মিয়াসহ শানুর মিয়া ও জিতু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় রাতেই তরিগড়ি করে সুহেলের ভাই গোলাম কিররিয়া জুয়েল এর স্ত্রী ডলি বেগম বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা রুজু করে ঘটনাস্থল থেকে আটক গ্রামের ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জনতার হাতে আটক ১১ জনকে ১৫১ ধারায় চালান দেওয়া হয়। তবে সে সময় সাংবাদিকদের কাছে জনতার হাতে আটক ১১ জনের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি পুলিশ।
তবে ঘটনা পরবর্তী সময়ে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টায় উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আহবাবুল হোসাইনকে জড়িয়ে সামাজিক সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হলে ঘটনায় মধ্যস্ততাকারী আহবাবুল হোসাইনকে দলটি কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে সড়াসরি বহিস্কার করা হয়। এ ঘটনায় দলটির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সদ্য বহিস্কৃত আহবাবুল হোসাইন জানান,সন্ত্রাসী গোলাম রব্বানির বিরোধ এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে। আমি সেই গ্রামের বাসিন্ধা হওয়ার ফলে বিষয়টি নিরসেন ইলিয়াসপন্তী তাহসিনা রুশদির লুনা নির্দেশ দিয়েছিলেন,আমি সেই নির্দেশ পালন করার অপরাধে আমাকে বহিস্কার করা হয়েছে। তবে তাহসিনা রুশদির লুনা বলেছেন ভিন্ন কথা,তিনি বলেন অন্য একটি বিষয়ে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে নয়।
এদিকে গত (১৬ জুন) হাজেরা আলী পান্নার বাড়ির কেয়ারটেকার কামাল হোসেন শটগান দিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি,গুলি বর্ষণ ৫ দফা বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় অভিযোক্ত প্রধান আসামী গোলাম রব্বানী সুহেলকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সিলেটের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাম রব্বানী সুহেল বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গ্রামের প্রবিণ ৩/৪জন ব্যক্তির জোয়া খেলার ভিডিও প্রবাস থেকে এক ব্যক্তি শেয়ার করলে ভিডিওর নিচে আমি সচেতনতা মূলক মন্তব্য করি। সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লোটপাট করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ওসমানীনগর সার্কেল আশরাফুজ্জামান পি.পি এম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনার দিন আটক ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গোলাম রব্বানী সুহেলের বিরুদ্ধে পূর্বে দায়ের করা মামলাও তদন্তাধীন।
এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপার মো: মাহবুবুর রহমান জানান, গোলাম রব্বানী সুহেলকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি খুঁজে দেখবেন এবং বিষয়টি স্থানীয় ওসি সাহেবের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।