ছাতকে চিকিৎসক ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:০৮ অপরাহ্ণ
ছাতকে একজন নারী চিকিৎসক ও একটি ফার্মেসির বিরুদ্ধে হয়রানি, সিরিয়াল বাণিজ্য এবং আর্থিক শোষণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩০জুন) সুনামগঞ্জ জর্জ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী সানী দাস ছাতকের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনা স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ছাতক ট্রাফিক পয়েন্টে অবস্থিত নীপা ফার্মেসি এবং সেখানে রোগী দেখা ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা একটি অসাধু চক্র গড়ে তুলেছেন। এই চক্রের মাধ্যমে তিনি এবং সাধারণ রোগীরা দীর্ঘদিন ধরে শোষিত হচ্ছেন।
গত ৪ এপ্রিল সানী দাস একটি রোগীর জন্য ডা. ফাতেমাতুজ জোহরার সিরিয়াল নিতে নীপা ফার্মেসিতে গেলে তাকে ৩৫ নম্বর সিরিয়াল দেওয়া হয়।
তিনি এর কারণ জানতে চাইলে ফার্মেসির এক কর্মচারী তাকে টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়ার অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ২১ নম্বর সিরিয়াল সংগ্রহ করেন এবং বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। পরবর্তীতে বিকেলে রোগী নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে তার ফেসবুক পোস্টের কারণে তাকে হেনস্তা করা হয়। সানী দাসের অভিযোগ অনুযায়ী, ফার্মেসির মালিকের উপস্থিতিতেই কর্মচারীরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং শারীরিকভাবে আক্রমণের চেষ্টা করে।
তিনি প্রতিবাদ করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে অভিযুক্তরা ফার্মেসির মালিকের ছেলে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জুয়েল ভৌমিকের পদের ভয় দেখান এবং তাকে “নিজস্ব গুন্ডা বাহিনী দিয়ে দেখে নেওয়ার” হুমকিও দেন। এই ঘটনার পর থেকে সানী দাস ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সানী আরও উল্লেখ করেছেন যে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তার মতো আরও অনেক ভুক্তভোগী—কাওসার, শওকত আহমেদ, মো. লিটন, তন্ময় দেবসহ অনেকেই—নিয়মিত এই সিন্ডিকেটের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়, সিরিয়াল নিয়ে বাণিজ্য, রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং চক্রটির নিজস্ব ফার্মেসি থেকে অতিরিক্ত দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এব্যাপারে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যে, রোগীরা তার কাছে এলে তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করেন। তিনি মনে করেন না যে তাকে বা ফার্মেসি কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরক্ত করা হলে তিনি অন্য জায়গায় চেম্বার করবেন। তিনি আরও বলেন, ছাতকে তার চেম্বার করার প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র এলাকার প্রতি ভালোবাসার টানে তিনি সেখানে চেম্বার করেন। সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করেন ফার্মেসির মালিক, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
নীপা ফার্মেসির মালিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, ফার্মেসিতে কর্মরত তুষার নামে এক ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ম্যাডামের কিছু আত্মীয়-স্বজন ও দূর থেকে আসা রোগীদের জন্য উপরের কিছু সিরিয়াল খালি রাখতে হয়। যে বা যারা এটা যদি টিকেট সিন্ডিকেট মনে করেন তাহলে টিকেট সিন্ডিকেটই। আর যে বা যারা টাকার বিনিময়ে টিকেট সিন্ডিকেটের কথা বলে তাদেরকে ফার্মেসীতে নিয়ে আইসেন।
ছাতক বাজার ফার্মেসি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তার ২৯ বছরের ব্যবসায় এমন ঘটনা ঘটেনি এবং তিনি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন জানিয়েছেন, ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা যদি অফিস সময়ের পর চেম্বার করেন, তবে এ বিষয়ে তার কথা বলার অধিকার নেই। অভিযোগ থাকলে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।