দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামী ২৫শে ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

দীর্ঘ ১৭ বছরের লন্ডনে নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫শে ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই আগমনকে অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করতে চাচ্ছে দলটি। এ জন্য নানারকম প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দলটি। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি কিছুই করবে না, মানুষই আসবে। গতকাল রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসবেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আমি আপনাদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমাদের কোটি কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, যিনি প্রায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্বাসিত অবস্থায় বিদেশে রয়েছেন এবং বিগত প্রায় একযুগ ধরে তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের সফলের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন, আমাদের সেই সংগ্রামী নেতা, এদেশের গণমানুষের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ তারেক রহমান, তিনি আগামী ২৫শে ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে আমাদের মাঝে এসে পৌঁছাবেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সবার পক্ষ থেকে তার এই আগমনকে শুধু স্বাগত নয়, আমরা আনন্দের সঙ্গে সমগ্র জাতিকে জানাতে চেয়েছি। গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যে সমস্ত বাধাগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা মনে করি- আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে এসে পৌঁছালে সে সমস্ত বাধা দূর হয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, লন্ডনে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার- সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের যতটুকু শঙ্কা ছিল, সেটা চলে  গেছে।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে নির্বাচনের যে রেল চলতে শুরু করেছে, সারা দেশের মানুষের মধ্যে যে আশা-প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে- সেটা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমন অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে হতে পারে, সেই বিষয়ে  আপনারা (সাংবাদিক) আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে উনি ২৫ তারিখে এসে ঢাকায় পৌঁছাবেন, ইনশাআল্লাহ।

ষড়যন্ত্র যে শুরু হয়েছে, হাদির ওপর হামলা তার প্রমাণ: তারেক রহমান
একটি দল দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বলেছেন, দেশ একটা সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা হুমকি দিয়েছে প্রকাশ্যে। যে প্রত্যাশিত নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে, সে নির্বাচনকে তারা হতে দেবে না। বাধাগ্রস্ত করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। একটি দল-গোষ্ঠী বা কিছু ব্যক্তি এই দেশকে, দেশের মানুষের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। শুক্রবার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি’র উদ্যোগে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয়তাবাদী দল এবং একইসঙ্গে যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন, দল ছোট বড় বিষয় না। যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের অস্তিত্বে এবং বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে- সবার আগে বাংলাদেশ, এই নীতিতে যারা বিশ্বাস করে, আমাদের প্রত্যেকটি দল, প্রত্যেকটি নেতা, প্রত্যেকটি কর্মী এবং প্রত্যেকটি মানুষকে আজ অতীতের যেকোনো সময় থেকে সব চাইতে বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা এই দেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চায়, এই দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে, এই দেশের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করতে চায়- তারা তাদের ষড়যন্ত্র যে শুরু করে দিয়েছে, আজকে ওসমান হাদির ঘটনা দিয়ে তা প্রমাণিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, কিছুক্ষণ আগে, ঘণ্টা দুই আড়াই আগে- বাংলাদেশে ঢাকায় একটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং জঘন্য একটি ঘটনা ঘটেছে। ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। তার ওপরে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি, চট্টগ্রামে একইভাবে আমাদের আরেক প্রার্থীকে গুলি করা হয়েছিল। আমি এই ঘটনার জন্য তীব্র ঘৃণা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের উচিত হবে সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে যত মানুষ আছে, প্রত্যেকটি মানুষের উচিত হবে- এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ এবং ঘৃণা জানানোর। আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা এই ঘটনার প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি এবং ছাত্রদলের দায়িত্বশীল একজন কর্মী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হবে, প্রশাসনের যারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে তাদের আমাদের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ যদি থাকে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। যাতে করে তারা প্রকৃত যে দোষী ব্যক্তি তাদের খুঁজে বের করে দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করতে পারে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে প্রত্যেককে বিরত থাকতে হবে। কেউ যাতে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে তদন্তের স্বার্থে, যারা তদন্ত করবে, সত্যিকার অপরাধীকে যারা ধরবে- আমাদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। আমাদের প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে এবং যেকোনো মূল্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে, যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং যেকোনো মূল্যে এই দেশের মানুষ যাতে করে তাদের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে পারে। তার জন্য আমাদের সদা সর্বদা সচেষ্ট এবং সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার দেশকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছে, দেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, সামগ্রিকভাবে সমাজ দেশকে যে জায়গায় রেখে গিয়েছে- এখন আজকে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে ওসমানের, এই দুর্ঘটনা আরও ঘটেছে, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে ঘটেছিল আমাদের এক এমপি প্রার্থীর উপরে, যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা তাহলে আরও সুযোগ পেয়ে যাবে, এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে পারে এদেশের মানুষ, এই ষড়যন্ত্র দমিয়ে দিতে পারে এবং রুখে দিতে পারে গণতন্ত্র। সেটাতে সবচেয়ে বেশি মাঠে থেকে অবদান রাখতে পারো তোমরা যারা বিএনপি’র সন্তান, তোমরা যারা বিএনপি’র সদস্য।

সকালে উদ্বোধনী বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এই সুখের দিনে একটি বিষয় প্রায়ই ভুলে যাচ্ছি অতীতের বেদনাবিধুর গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কথা। আমরা ইদানীং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কুকীর্তির কোনো কথাই আমাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে বলছি না। একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না। আমাদের গ্রামের ভাষায় বলে যে, ‘ভাসুরের নাম মুখে নেয়া যায় না’। এখন সেই দলটি আওয়ামী লীগের ভোট টানার জন্য তাদের যে ভূমিকা, সেটা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছে।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব- উন-নবী খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সুত্র :মানবজমিন