জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে অতীতের ন্যায় বিশেষ অভিযান জরুরী-খন্দকার মুক্তাদির
সিলেটপোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৮ অপরাহ্ণ
সিলেট- ১ (সদর ও মহানগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর উপর যে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে, তা সকল রাজনৈতিক কর্মীর জন্য উদ্বেগের। অতীতে সবগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগেই সন্ত্রাসী ও পেশাদার অপরাধীদের দমনে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছিল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে হলে অতীতের মত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা জরুরী।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির (১৪ ডিসেম্বর) রোববার বিকেলে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত দেড় দশক দেশের মানুষ স্বাভাবিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। পর পর ৩ বার দিনের ভোট রাতে হওয়ার মত আজব নির্বাচন হয়েছে। এবার মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ১২ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেটি নিশ্চিত করাই এ মুহূর্তে সরকারের ‘টপ প্রায়োরিটি’ হওয়া উচিৎ।
খন্দকার মুক্তাদির বলেন, বিএনপি সব সময় আইনের শাসনে বিশ্বাসী। অতীতে বিএনপির শাসনামলে কেউ-ই অপরাধ করে দলীয় পরিচয়ে পার পায়নি। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসের কোন অস্তিত্ব থাকবে না।
জনাকীর্ণ এই মতবিনিময় সভায় বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির আগামী দিনে নির্বাচিত হলে তার কর্মপরিকল্পনার কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বদর।
মতবিনিময় সভায় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সিলেটের উন্নয়নের বিষয়ে তার প্রত্যাশা ও পরিকল্পনার বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, সিলেটের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির অভাব। পাথর কোয়ারী, ব্রিক ফিল্ড ও পরিবহণ খাত ছাড়া সিলেটে বড় কোন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নেই। এ কারণে সিলেটের তরুণরা বিদেশমুখী হয়ে রয়েছেন। আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকারী নীতি সহায়তায় সিলেটে নতুন শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি তরুণদেরকে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হবে।
তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খাল খনন কর্মসূচি, স্বল্পমূল্যে বীজ ও সার প্রদান, কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সিলেটের এক ফসলী জমিকে দুই ফসলীতে উন্নীত করেছিলেন। ফলে, সিলেটে উৎপাদন বেড়েছিল, হাজার হাজার একর অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছিল। কিন্তু, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে সিলেটের কৃষি খাতের উন্নয়নে কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সিলেটের কৃষির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
সিলেটের নাগরিক সমস্যাগুলো ‘প্রকাশ্য ও চিহ্নিত’ উল্লেখ করে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, কোন কসমেটিক উন্নয়ন নয়, সিলেট নগরবাসীর সমস্যাগুলোর স্থায়ী ও দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশেষ করে নগরীর যে সব স্থানে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে, সেসব স্থানের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। সুরমা নদীর দুই তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গনের সমস্যা নিরসন করা হবে।
সিলেট নগরীতে মাদক ও অনলাইন জুয়াকে চিরতরে নির্মূল করা হবে উল্লেখ করে খন্দকার মুক্তাদির বলেন, নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা ও কর্মমূখী করে গড়ে তুলতে পারলেই সিলেট একটি প্রকৃত উন্নত জনপদ হতে পারে।
তিনি সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার একটি বিমান যোগাযোগের ‘হাব’ হিসেবে গড়ে উঠার দাবী রাখে। পাশ্ববর্তী দেশের সেভেন সিস্টারও এই বিমানবন্দর থেকে সুবিধা নিতে পারে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতি বিমান বন্দরকে সকল আর্ন্তজাতিক বিমান সংস্থার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। জরুরী ভিত্তিতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উন্নয়নের কাজ শেষ করাসহ সিলেট-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সিলেটের সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ-কে ‘এ ক্লাস’-এ উন্নীত করা হবে। যোগাযোগের উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলেই সিলেটে দেশী বিনিয়োগ আসবে, পর্যটন খাতেরও বিকাশ হবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও এডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেটের আহবায়ক ডা. শামিমুর রহমান, সদস্য সচিব ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি পিপি আশিক উদ্দিন আশুক, সাবেক আহবায়ক এডভোকেট নুরুল হক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন, শাবির সহকারী অধ্যাপক আ ফ ম জাকারিয়া, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া প্রমুখ।



